রোজনামচা কবিতা সিরিজ থেকে

নিমো টেরান


রোজনামচা: এক
 
উদলা শরীরে টান ছিল, ছিল চোরা জোয়ার
মুখ ফিরিয়েও অপেক্ষাতেই ছিলাম তোমার
ডিঙ্গা ভাসাও বৃদ্ধ নেয়ে ঈশারাতে বলতে পারতে
দু এক পংক্তি লেখা হোতো চারমিনারের রাঙতাতে
আকন্ঠ খাই তীব্র গরল উলুক ঝুলুক মাথার ভিতর
স্মৃতি ফিরে আসে জন্মান্তরে পুনর্জন্মা বোধিসত্বর
কে দেবে আমাকে সে পরমান্ন কে দেবে দাও
বোধিমূলে ঠায় আছি বসে, দুহাত বাড়াও
মাটির শরীর দুহাতে আগলে যত্ন করে
ঘর বেঁধেছিলো মৃত কাবেরীর শুকনো চরে
সময়ের স্রোত লোহার বাসরে ছিদ্র খুঁজে
ভাসিয়ে নিয়েছে, মান্দাসে আজ বেহুলাই নিজে
নিষ্প্রাণ শুয়ে, জিয়ন মন্ত্র স্থির ছিল জানা
ভোরের আলোয় থেমে গেছে তার ক্লান্ত ডানা।
 
রোজনামচা: দুই
 
পরিচিত সর্বনামে এখন আর কেউ ডাকেনা
মধ্য দুপুরে সদরে স্টিমারের ‌ভোঁ বাজেনা
ঘামে ভেজা মুখে জল দিয়ে আঁচলে
হাত মুখ মুছে কেউ কি আর বলে
'এত প্রেম রাখো যে কোথায়,
আছো কোন অপেক্ষায়!'
নৈঃশব্দের এ দুপুর
বরবুদুর।
 
রোজনামচা: তিন
 
ঝড় বয়ে গেলো, আলুথালু
তোমার বাগান
উড়ে আসা ধুলি বালু
অশ্রুর ভিতর
একাকী সন্ধ্যে ঝড়ে
আকাশের প্রায় কাছে
বিদ্যুৎ রেখায়
কবিতার জন্ম হয়
বিন্দু বিন্দু
বৃষ্টির ফোঁটায়
যে বৃষ্টি নামে না আর
ভেজায় না
ফুলের পাতার
মাটির সংসার
তুমিও তো অনেকদিন
স্পর্শ দাওনি
পাতায় লতায় ফুলে
অভিমান জমে ওঠে
বীজে বৃক্ষে মূলে
সে খবর কখন
মেঘের বাসায়
ঠিক পৌঁছে ছিল
হাওয়ায় হাওয়ায়
শুধু ঝড় তাই বয়ে গেলো
বৃষ্টি পড়েনি আজ
হয়ে গেছে এলোমেলো
বাগানের সাজ।
 
রোজনামচা: চার
 
দেখো বালিকা তোমাকে জেনেছি অনেকদিন
শাদা চুলে মেখেছিলে অন্ধকার, মুখে সানস্ক্রিন
মরি মরি চির বসন্ত, কোকিল কুজন সম্বৎসর
তুমি জানিতেনা এতো সাজে কেন তবু নিরুত্তর
অচিন হৃদয়পুর, সেখানে বসত কোন জনে করে
সে ছিল তোমার প্রশ্ন প্রমাদের ভুলে জন্মান্তরে;
বালিকা জানিতে শরীরে জড়িয়ে গভীর জলে
বীজ বুনে দিয়ে ফসল বাঁচাতে কূট কৌশলে
আমি তো তোমাকে ভালোবেসেছি বিবর্তনে
শস্পে পুষ্পে বীজে ও ঘন বিস্তৃত তরুমূলে
জনিতেই যদি সত্য, তত বড় নয় এ হৃদয়পুর
গড়েছিলে কেন শূন্যদ্যান আনখসমুদ্দুর।
 
 
রোজনামচা: পাঁচ
 
আমাদের প্রিয় গান হারিয়ে কি গেছে?
আমাদের প্রিয় শব্দ দিশাহীন চুপ?
আমাদের ভালোবাসা হৃদয়ের কাছে
নিরন্তর উত্তর চায় অবুঝের প্রশ্ন এরূপ
প্রিয় স্মৃতির আলপথে অনিবার্য হেঁটে যাওয়া
সুখ পশমিনা ঢেকে রাখে দুঃখ আলগোছে
উজাড় করে যাহা কিছু আলোকিত পাওয়া
নিশ্চিন্তে ভাসিয়ে দাও দুঃখেরই কাছে।
 
রোজনামচা: ছয়
 
স্কুটির ডিকিতে পরে আছে টুকিটাকি
কাজ হারিয়েছে একনলা স্টেথটি
নীল এপ্রন ধুয়ে রাখা আছে ভাঁজ করে
ওষুধ লেখার প্যাডও গোছ বাঁধা পরে
এদিকে ওদিকে সব এতই ছড়ানো
স্মৃতির অ্যালবামে পাতা ওল্টানো
তোলপাড় করে খুঁজে  ফিরছি তো তাই
সব স্মৃতি মোছার একটা ইরেজার চাই।
 
রোজনামচা: সাত
 
পূবের দরজা খুলতেই
গঙ্গাজলে ভেজা হাওয়া
হুলুস্থূলু কান্ড বাধায়
পর্দায় টান মারে, উপুড় করে
আবর্জনার বালতি
জলের বোতল আছড়ে
মেঝের ওপর ফেলে
আরোগ্য স্পর্শ বহু হাতে
সারাক্ষণ মধ্য দুপুর কি রাতে
জেগে থাকে শিয়রের কাছে
মনিটরের বিপ্ বিপ্ শব্দে
দিনরাতের পার্থক্য মুছে যায়
লবণ জলে জরুরি পুষ্টি মিশে
চালান হয় শিরার ভিতর
শ্বেত প্রবালের আংটি আঙুলে
শীতার্ত দুর্বল - ওষুধ এগিয়ে দেয়
এবং জলের বোতল
অস্ফুটে জানিয়ে দেয় ব্যস্ত হেডফোন
"ফিরিনি, আমি নেই বাড়িতে এখন"
কাল হবে ছুটি আপনার
আজ এখানেই থাকা দরকার
এই বলে আরোগ্যের আলো নিয়ে
চলে যান ঘোষ ডাক্তার
ধূমপান, সিঁড়ি ভাঙ্গা, ওজন ও কাজ
নিত্য কর্মে হবে কত শ্বাসাঘাত
ফরমান জারি নিয়ন্ত্রণের
এ যাবৎ বোহেমিয়ান জীবনে আমার
অপেক্ষা করি সকাল বেলার
ভোরের আলো চুলে হাত বোলায়
তারপর একমুখ হাসি পট্টনায়ক
বঙ্গোপসাগরের লোনা হাওয়া মেখে
আমাকে এগিয়ে দেয় টাটকা খবর
ইংরাজি ও বাংলায় -
স্পর্শে নতুন দিন শুরু হয়
তবু সেই এক শঙ্খ শাদা আরোগ্যের হাত
চিরচেনা অনামিকার হিরের ছটায়
অধরা, অদৃশ্য অচেনা ক্রমশ
চেতনার পর্দার আড়ালে হারায়।

--------------------------------------------

কবি পরিচিতি

নিমো টেরান। অবশ্যই ছদ্মনাম এবং বাংলায় কথা বলা এক মানুষ। এছাড়া কিছু বলতে আমরা অপারগ। তবে সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি একটি আছে, সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার সম্পাদকদ্বয়ের কেউই ছদ্মনামে কবিতা লেখেন না। নিমো টেরান অন্য কেউ। হয়ত নিত্যদিন যাপনে একটু আগে আপনার পাশেই তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন বা এখন দাঁড়িয়ে আছেন বা এসে দাঁড়াবেন।

সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা ওয়েবে প্রথম আত্মপ্রকাশ।

আপনার মতামত নিচে 
'আপনার মন্তব্য লিখুন' শীর্ষক বক্সে লিখে 
আমাদের জানান। 
লিটল ম্যাগাজিন বেঁচে থাকে 
পাঠকদের মতামতে। 🙏