সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার গল্প।। রজত চক্রবর্তীর গল্প
ব্যবহৃত চিত্রটি নর্মান লিউসের একটি তৈলচিত্র 

হরিপদর ভোটপক্ষ ।। রজত চক্রবর্তী


“কী হি হিকচ্চো . . .শালা ছেনালি মারাচ্চো . . .ঐ সব গান্ডুপনা ঢুকিয়ে দেবো তোমার. . .” ছোটোবেলার ছেনো, ছেনা, বড় হয়ে সোনা, এখন পাড়ার সোনাদা। ঘাড়ের কাছে সাদা পাঞ্জাবীর ফাঁকে সোনার মোটা হার চকচক। হাতের কব্জিতে সোনার চেন। আঙুলের আঙটি ঝিকিয়ে উঠল, “পাড়ায় থাকতে হলে পাড়ার মতো থাকতে হবে . . .”

“ভেটকি মাছের মত তাকিয়ে আছে দেখো, যেন কিছুই জানেনা . . .” লিকপিকে কালো গেঞ্জি ফুঁড়ে উঠল। বুকে তার সাদা দিয়ে লেখা, ‘খেলা হবে’।

হরি কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু বুঝতে পারছে, তলপেটে চাপ বাড়ছে ক্রমশ। ট্রেন থেকে স্টেশনে নেমেই চাপটা বুঝতে পেরেছে। স্টেশনের গেটের বাইরে একটা আছে। হরি যায় না পাবলিক ওপেন টয়লেটে। শুনেছে ঐসব নোংরা জায়গায় কিলবিল করছে যৌনরোগের ভাইরাস। হিসুর জলধারা দিয়ে পিলপিল উঠে ঢুকে পরবে পুট করে। এইসব জ্ঞানভাণ্ডার ‘অফিস কালেকসন’ অনেক আছে। চলন্ত কোকশাস্ত্রের শাস্ত্রখানা অফিসের কয়েকটি টেবিল । ইলেকশন এলে কাজ আর সারা বছর এ-টেবিলে ও-টেবিলে ডার্ক-রুম অভিধান ঘাঁটা। হরি রিটায়ার করলে হয়ত এই পোস্টও উঠে যাবে। ডিফাংক্ট পোস্ট। সাব-ডিভিশনাল স্পোর্টস অফিসার। শুধু শীতকালে শহরের স্কুল গুলোরস্পোর্টসে হাজির হওয়া। তার জন্য দু-টো সস্তার ব্লেজার আছে। দিদিমণিদের সাথে একটু হিহি . . .

“আসলে একটু হি হি হি . . .” হরিপদ শেষ করতে পারেনি।

“চোপ শালা নিমকি মাল . . . তুমি শালা ওদের মিছিলে . . .” পাড়ার নন্টে সোনার লেজুড়।

“ক-কী বলছিস কিছুই বুইতে . . .” শেষ হয় না হরির আর্তি।

সোনার কালো ঘাড়ের চর্বিতে চকচকে মোটা সোনার হার আটকে বসে কেটে কথা বলে, “দেখ হরিদা তুমি তো কোনোদিন সাতে-পাঁচে থাকো না, হঠাৎ করে ওদের মিছিলে চলে গেলে! আমরা বদলুদের এখানে থাকতে দেবো না . . . স সোজ্জা কতা . . .”

হরি বোঝে কোথাও একটা গন্ডগোল হয়েছে! কিন্তু মাথা কাজ করছে না। মাথা নেমে এসেছে তলপেটে। একটু না নামালেই নয়। চিনচিন করছে!

পিঁপড়ের ঠ্যাঙের মত জিন্স নেচে উঠল, “শালা ওখানে গিয়ে মিছিলে লেতিত্ব দিচ্ছে . . . এই তো ভা ভা ভাইরাল হয়ে গেছে . . .” টিঙটিঙে আঙুলে ঢাউস মোবাইল। হরির চোখের সামনে আরেক হরি হাত নেড়ে কাকে ডাকছে। পেছনে মিছিল। এই তো এই তো নিজের ছবি।

“বল্টু আমাদের ড্রাইভার . . . ওকে ডাকছিলাম . . .” হরি বোঝে।

কিন্তু বোঝানোর আগেই চিৎকার, “তোমার বল্টু খুলে নেব শালা . . .”

সোনার ধমকে থেমে যায় গ্যাঁড়া মস্তান। হরি অফিস ব্যাগটা সামনে এনে বল্টুর জায়গাটা ঢাকা দেয়। কিন্তু আর নড়াচড়া করার অবস্থায় নেই। গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছে।

বুথ সার্ভে কাজ করে ফিরছিল। সামনে ভোট। একদম দোরগোড়ায়। এখন সরকারি অফিস ব্যস্ততার তুঙ্গে। ট্রেনিং শুরু হয়ে গেছে। এবারে ট্রেনিং সেলে সবাই ডিউটি করতে চাইছে। ভিড়। এবারেই দিদিমণিদের সব ডিউটি পড়েছে বুথে। আহা আহা ট্রেনিং সেন্টারে যেন বসন্তের ফুল ফুটেছে। রায় সাহেব সেদিন ট্রেনিং দিতে গিয়ে বলছিল, “শালা এত বছর শুকনো ভোট করে এসে এখন একটু রসালো ভোট হচ্ছে!” বুথে বুথে সুন্দরী দিদিমণি। সবার আশা এইটা গন্ডগোল কম হবার প্রাথমিক ডোজ্। ট্রেনিং সেন্টারে গিজগিজ করছে হরেক ফুল, হরেক আঁচল, ওড়না, সেন্টের গন্ধ, হাসি, আহা আহা . . .  হালদারদার শুকনো গালেও হাসি ফুটেছে হেল্পডেস্কে। আর হরিপদকে ঠেলে দিয়েছে বুথ সার্ভে করতে। হরিপদও জানে কোন কাজে গুড় কত! তোরা ঐ পাঁচ দিনের হাসিমাখা আঁচলের ফাঁক-ফোকড় দেখে বেড়া! আমি এদিকে এই বুথের কল, ঐ বুথের পটিখানা শালা না বানিয়ে ছাড়ব না। বানানো মানেই কামানো। বাপ ছিল এসডিও অফিসের বড়বাবু। লোকে বলত, হারিকেন বাবু। আগের ইলেকশনের পুরোনো হারিকেন কিনে রঙ করে পরের ইলেকশনে আবার কেনার খ্যামতা ছিল। সে হারিকেনের যুগ আর নেই। কিন্তু ডিকশনারিটা রয়ে গেছে। হরির ক্লাশ এইট থেকেই বাপের সঙ্গে। বাপ তখন গ্রুপ ডি থেকে এল ডি। লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক। তখন থেকেই হরি এই বাবুর নলেন গুড় ঐ বাবুর টেবিলের নিচে, এই চেয়ারের খাম ঐ চেয়ারে, পুকুরের মাছ এসডিও বাংলোয় ইত্যাদি ইত্যাদি করতে করতে একদম এসডিও সাহেবের বাথরুম অবধি। ফুলো ফুলোফর্সা কুচি হীরে ঠেকরানো আঙুলে যেদিন কাগজের টুকরো লিখে এসডিও সাহেবের নধর গিন্নি টাকা সমেত হাতে দিয়ে বলল, “চট করে এটা এনে দাও তো . . .” হরির ভেতরে সেদিন কপিলদেব, মেসি, রোনাল্ড সবাই বিশ্বজয়ের লাফ মেরেছিল। ন্যাপকিনের প্যাকেট এসডিওসাহেবার হাতে দিয়েই বাপের কাছে সংবাদ। বাপ ছাদে সান্ধ্য আহ্নিকে ঢুলুঢুলু, “ভেতরে ঢুকে পড়েছিস হরি, রাজহাঁস হ রাজহাঁস . . . এদিক ওদিক নয় . . . শুধু দুধটুকু সড় সমেত ঝেড়ে দে . . .”

সেঁটে গেল হরি। রান্নাঘরের বেসিন থেকে পা-মালিসের মেসিন, সবেতেই হরি। সিটিংরুমের দেওয়ালে মা-কালির ছবি . . . কথাটা শুনেছিল হরি। এসডিও সাহেবের বউ ডাইনিং এ পা দোলাতে দোলাতে বলেছিল। সাহেব তখন পোলো গেঞ্জি খুলছে। কুকুর নিয়ে হাঁটতে গেছিল। হাফপ্যান্টের তলায় ধুমসো লোমশ পা। হরি একদিন গিয়ে দেখেছে ল্যাবড়াডোর সবে লেবড়ে বসেছে। নামছে নামছে। কোষ্ট। জিভ হ্যাহ্যা। হরি নিজের আঙুলে আঙুলে জড়িয়ে টান। ন্যাড় আটকে। আরো টান। কুকুর হ্যাহ্যা। ছোটোবেলায় দেখেছে আঙুলে আঙুলে জড়িয়ে টান মারলে কুকুরের আটকে যায়। কতকিছুই যে কতকিছুর জন্য আটকে যায়!

হরির চোখ এখন আটকে গনেশের কম্পিউটারের স্ক্রিনে। ঝড় ঝড় করে ন্যাংটো মেয়ের ছবি নামছে। “পছন্দ কর হরি, পছন্দ কর”, বলে গনেশ ছবি দেখায়। কেটে কুটে রঙ চাপিয়ে কালী বানাবে। নাঃ এতটা বাড়াবাড়ি ঠিক হবে না। বিস্তর মাথা ও পেছন চুলকে শেষ পর্যন্ত মাধুরী দিক্ষিতের টোল পড়া হাসি। কালীর শুধু মুখ। দুষ্টু মিষ্টি মুখে জিভ বসল লাল। কোলগেট দাঁত। নাভি অবধি ঝড়াস নীল। সেক্স ধাঁ। এলো চুল। খড়গ-টড়গ টুঁইটাঁই মাউসের খেল। সারা দুপুর। বিকেলে ফিনিস — এক দো তিন মা কালী মাইকি!

বাঁধাই। এক্সট্রা চার্জ। এসডিও সাহেবের বলাতে ঝটপট ফিনিস্। সাঁজবেলায় ম্যাডাম সবে গা ধুয়ে পাউডার বুলিয়ে বগল কাটা। হরি কালীর ছবি সমেত। মাথায় খারাপ চিন্তা আনতে নেই। ঢিপ। ফরসা পায়ে প্রণাম। “হাউসুইট” হাউমাউ করে উঠল। খাঁজে উথলে ওঠা ঢেউ। টুলের উপর উঠে হরি লাগিয়ে ফেলল। জিভ কেটে দেওয়ালে — এক দো তিন। নমস্কার করে নেমে এল হরি — ক্ষমা করে দিও মা! সবই ঐ আটকে থাকা কাজ হড়হড়ে করা। পরের সপ্তাহে চিঠি বেড়িয়ে এল — হরিপদ আইচ সন অব কেনারাম আইচ ইজ হেয়ারবাই অ্যাপোয়েন্টেড অ্যাজ গ্রুপ ডি ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। কমিটি, দল, নেতা, ঘেঁটেঘুঁটে জয়েন করতে করতে পরের মাস। এক এসডিও যায় তো আরেক আসে। এক বউ এর জুঁই তো আরেক বউয়ের পলাশ। একের কালী তো আরেকের লক্ষ্মী। মাধুরী হেসেই চলে হরির দৌলতে। সেই থেকে ঘষটে ঘষটে ঘষটে আজ . . .


এখন হরির একটা দেওয়াল দরকার। অন্ধকার দেওয়াল। ভাঙাচোরা হলেই ভালো। গলির মুখেই আছে। আর দশ পনেরো পা এগোলেই। আর চাপা যাচ্ছে না। আগে স্টেশন থেকে এই বাড়ির গলি অবধি অন্তত পাঁচটা খোঁদল ছিল, ঝোপ ছিল দু’টো, একটা বড় ইঁট বার করা পাঁচিল। সব একদম চেঁচে ফ্ল্যাট উঠল। ড্রেনের উপর স্ল্যাব। স্ল্যাবের উপর গুমটি সাইবার থেকে খাইবার। আর ঐ চাঁদ-হারানো হ্যালোজেন। একটুও আঁধার নেই পা ফাঁক করে দাঁড়ানোর। হরির গায়ের লোম খাড়া হয়ে উঠছে। বাড়ির বাথরুম। কমোড। তাকে সবিতার শ্যাম্পু ও গুড়াকু পাশাপাশি। ‘বুঝলি হরি দুবলা গাই দুধ কম খরচা বেশি . . .’ সন্ধ্যা আহ্নিকের দোদুল্যমান বাপের ডায়লগে ভর দিয়ে সবিতা এল। প্রজাপতির চিড়িক চিড়িক আলো নেভার পর, বাসি মিষ্টির রস পচে যাবার আগেই সবিতা সমস্ত ফুল, প্লাস্টিক, প্যাকেট সহ ঝেঁটিয়ে বাইরে ফেলে দিল সব লাজ-লজ্জা। হরিপদর ৩০ ইঞ্চি বুকে সবিতার ৪৮ বুক চেপে বসল। সবিতার মোটা গাঁটের আঙুলে হরিপদ পাঁজরের রিডে ঢেউ তুলে বলল, “শোনো একটা গুড়াকুর বড় কৌট এনে দেবে!” সব রোমান্টিকতা মুহূর্তে উবে গেল সবিতার থাবার আড়ালে। কালো মৌচাকের মত পেটে পেটে সবিতার তেজ মাঝে মাঝে পিলে চমকানো ঢেকুরের সাথে উঠে আসে। হরির তখনই হিসু পায়।

এখন সবিতার কথা মনে হচ্ছে। সবিতা উদ্ধার করো। ওর গায়ে অসুরের শক্তি। দুবলা হরিকে ফুলসজ্জাতে এমন জাপটে ধরেছিল — চিঁ চিঁচিঁ . . .  তলপেটের নিচে অসার লাগছে। একটু কুটকুট করছে। জাঙ্গিয়ার ধারে ঘামের গড়িয়ে পড়া। একটু চুলকে নিলে। কিন্তু এখানে হাত দিলেই জল লিক করবে। আর পারা যাচ্ছে না। ভীড় বাড়ছে। সনাতনদা বাজারের থলে হাতে, “কী রে হরি, তুই তো এখন হিরো, টিভিতে দেখলুম . . .”

“আরে হরিদা, তোমাকে দেখালো তো টিভিতে . . .”

“তুমি কি বদলু হলে! ও হরিদা . . . যা সব ইঁহাকা মাল উঁহা চলচে এ এ . . .”

মুরগি কাটে দিবা, “আরে হরিকা আমি তো বিশ্বাসই করিনি তোমার বৌমা দেখাল টিভিতে . . .”

ভিড় বাড়ে। মজা উড়ে।

“৩৬ ঘন্টা, ৪৮ ঘন্টা সব চ্যানেলেই দেকাচ্চে তো!” খোকন ফুট কাটে।

ল্যাকপ্যাকে মস্তান, মোবাইলে দেখাতে থাকে।

“শোনো হরিদা পাড়ায় থাকতে হলে বদলু হলে কিন্তু ফিনিশ্ বলে দিলাম . . . দেখব কোন বাপ বাঁচতে আসে!' সোনা হিস্‌হিস্ করে।

ল্যাকপ্যাকে আবার মোবাইলে, “দ্যাকো দ্যাকো হরিদা হাত নেড়ে মিছিলকে ডাকচে এর পরেই বোম্ চার্জ হচ্ছে . . . শালা হারামি . . .”

“আ আমি বল্টুকে ডাকছিলাম আমাদের ড্রাইভার . . . বিশ্বাস করো . . . আমাদের গাড়িটা সামনে ছিল . . . ইলেকশন ডিউটি . . . তাড়াতাড়ি মিছিল টপকে . . .” হরি মিনমিন।

“গাঁড়ে ভরে দেবো তোমার ইলেকশন!” দাবড়ে ওঠে সোনা।

হরি টের পায়। টের পায় হরি। গরম তরলে জাঙ্গিয়া ভিজে ওঠে। তলপেটে হালকা হবার সুখ। প্যান্টের ভেতর দিয়ে নামে। আহ্! নামতে থাকে। ইলাস্টিক ঢলঢলে মোজা ভেজে। আটকাতে পারে না আর। আটকায় না।

“এ হে হে মুতে ফেলেছে, মুতে ফেলেছে, খ্যাঁক খ্যাঁক খ্যাঁক . . .”

চারিপাশের সব শব্দ হারিয়ে যায়। নিঃশব্দ। হরি প্যান্টের চেন খোলে। হিসি ছিটকে ছিটকে। ভিড় সরে সরে যেতে থাকে। হরি ঘুরে ঘুরে হিসি ছেটকাতে থাকে। দু'হাত উপরে তুলে হো হোহো হাসে। “হিসি করি শালা তোদের পলিটিক্সে, হিসি করি শালা তোদের রাজনীতিতে, হি হি হি হিসি করি . . .” চিৎকার করতে থাকে হরিপদ। হিসি ছলকে ছলকে ছড়াতে থাকে। সবাই সরে যেতে থাকে। পাতলা হতে থাকে। পালাতে থাকে। হরির হো হো হো হাসিতে পাড়ার কুকুরগুলো শুধু কেঁদে ওঠে।

আসলে এইসব কিছুই হয় না। গলির এক পাশ দিয়ে প্যান্ট ভেজা, বুট জুতো ভেজা, থপ থপ করে ধীরে ধীরে বাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। মাথা নিচু। ধ্বস্ত হরিপদ।

সোনা তার দলবল নিয়ে এসে ঠান্ডা শাসিয়ে দিয়ে গেছে। সবিতা চমকে, “কী বলছ কী ও কোনো রাজনীতিতে নেই, ওর সে সাহসই নেই, তোমারা তো চেন ভাই, ও সাতে পাঁচে . . .”

“ও সব কবিতা রাখুন, টিভিটা খুলুন, নিজেই দেখুন . . . আমরা শুধু বলে যাচ্ছি যেচে বিপদ বাড়াবেন না . . . যদি কিছু এধার ওধার হয়ে যায় তখন বলতে আসবেন না . . .” সোনা গলার চেন ঠিক করতে করতে চলে যায় দলবল নিয়ে। “আমরা এখনও মেয়েদের সম্মান করছি . . .”

সবিতা টিভির রিমোট হাতে নেয়। স্টিলের রডের বিজ্ঞাপন, মায়া প্রকাশনীর পরেই খবর। ঐ তো ঐতো মিছিলের সামনে রোগা লগবগে হরিপদ। কাঁধে কালো অফিস ব্যাগ। ব্যাগের ভেতর জলের বোতল, টিফিন বাক্স, তিনটে রুটি, ঢ্যাঁড়স-আলু চচ্চড়ি, একটা দানাদার, একটা বাজারের ব্যাগ চার ভাঁজ। ঐ তো হাত নাড়িয়ে মিছিল ডাকছে। তারপরেই বোম। বুমার হাতে মেয়েটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে চলেছে। বন্ধ করে দেয় সবিতা। মাথা দপ্‌দপ্। বাথরুমে গিয়ে দু'আঙুলে ধ্যাবড়া করে গুড়াকু তুলে আনে ডিবে থেকে।

হরি। থপ্‌থপ্ প্যান্ট ভেজা হরিপদ। মাথা নিচু হরিপদ। হেয় হরিপদ। হেরো হরিপদ। অনেক কষ্টে অন্ধকার গলি থেকে উপরে তাকায়। অসংখ্য নানা রঙের গনতন্ত্রের পতাকা উড়তে থাকে। তার ফাঁক দিয়ে দেখা যায় সবিতা। মায়াবি সবিতা। ঐ হরিপদর সবিতা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। গুড়াকু মাজা দাঁত নিয়ে হরিপদর সবিতা। কালো জামবাটি মুখ নিয়ে হরিপদর সবিতা। ঐ ঐ হরিপদর আশ্রয় . . . হরিপদর রাষ্ট্র . . . হরিপদর নিরাপত্তা . . . হরিপদর ছোট্ট অতি ছোট্ট অসহায় মানচিত্র। 🚫


চন্দননগরের রজত চক্রবর্তী।
আগ্রহ আঞ্চলিক ইতিহাস হলেও বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর লেখালেখি। বিভিন্ন পত্রিকায় ইতিহাস কেন্দ্রিক প্রবন্ধ লিখছেন - কৃত্তিবাস, ভ্রমণআড্ডা, পরম্পরা, মাতৃশক্তি, ঋদ্ধি ইত্যাদি। 
বর্তমান কাগজে রবিবার এর কভার স্টোরি লিখছেন ক্রমান্বয়ে একের পর এক। 
'সুখী গৃহকোণ' পত্রিকায় ধারাবাহিক লিখছেন এখন। 'ধূলো মাটি বাংলা' শিরোনামে খুঁজে চলেছেন বাংলার পথে ঘাটে ছড়িয়ে থাকা বাংলার ইতিহাসকে।
হরিপদ তার প্রিয় চরিত্র। সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার পাতাতেই হরিপদর গল্পের প্রকাশ ২০১৪ সালের জুন সংখ্যায়। ঘটনাক্রমে সেটিও ভোটের সময়েই এবং ভোটের অনুষঙ্গেই। গল্পের নাম ছিল, 'হরিপদ লিয়াজঁ'। মাঝে মাঝে হরিপদ তার ফেসবুকে উঁকি মারলেও এটি হরিপদকে নিয়ে দ্বিতীয় গল্প এবং সেই আবার ভোটের অনুষঙ্গেই। তাহলে কি হরিপদ শুধু ভোটের সময়েই গল্প হয়ে আসবে? বাংলা সাহিত্যে হরিপদ কি তার জায়গা করে নেবে? সময়ই শুধু এর উত্তর দিতে পারে এবং দেবে। 

প্রকাশিত বই - 
১। চেনা মানুষ অচেনা ভ্রমণ - পরম্পরা প্রকাশন।
২। আশকথা পাশকথা (এক) - রূপালী পাবলিকেশন।
৩। গৌরপ্রাঙ্গণের গোরা- পার্চমেন্ট 
৪। পান্থজনকথা - রূপালী পাবলিকেশন
৫। আশকথা পাশকথা (দুই) - যন্ত্রস্থ

সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা ওয়েবে প্রকাশিত,
SYNAPSE LIBRARY তে রাখা
অন্য গল্পগুলি পড়তে হলে ক্লিক করুন