সাইন্যাপস্‌ সংবাদ।। ফেব্রুয়ারি ২০২১


সংবাদ শিরোনাম ১ 


রজত জয়ন্তীর অহর্নিশ এবং একটি গ্রন্থাগার


সংবাদ শিরোনাম ২ 

পথের আলাপ আয়োজিত ‘এক বিকেলের আড্ডা’


সংবাদ শিরোনাম ৩ 

মানবজমিন আলোচনা সভা।। কথ্য অকথ্য


 সংবাদ বিশদে

সংবাদ ১ ।। 

রজত জয়ন্তীর অহর্নিশ এবং একটি গ্রন্থাগার
নিজস্ব প্রতিবেদন




    পঁচিশে পা রাখল সুখ্যাত পত্রিকা অহর্নিশ। গত চব্বিশ বছর ধরে সার্থক লিটল ম্যাগাজিন হিসেবে তার নানা ধরনের কাজকে গ্রহণ করেছেন সংবেদী পাঠক এবং গুণগ্রাহকবৃন্দ। একাধিক ভালো সংখ্যা অহর্নিশ আমাদের দিয়েছে, নব্বইয়ের অধিক অনুষ্ঠান করে সমৃদ্ধ করেছে; এবার তারা যাত্রা শুরু করলেন একটা অন্যরকমের গ্রন্থাগার ভাবনা ও প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। আনুষ্ঠানিক ভাবে এর নাম অহর্নিশ রজত জয়ন্তী গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র, কিন্তু আর পাঁচটা সাধারণ লাইব্রেরি হবে না এটি। অহর্নিশের দপ্তরে একটি বড় ঘরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের দান করা বই নিয়ে এর সম্ভার বৃদ্ধি পাবে। 
    

    এই বই ও পত্রিকাগুলো ব্যবহার করতে হবে সেখানে বসেই। এছাড়া অশোকনগর-হাবড়া অঞ্চলের এক ঝাঁক ছাত্র ছাত্রী এটি ব্যবহার করবে এর সদস্য হিসেবে, তারাই এই লাইব্রেরি দেখভাল করবে। তাই ৩১ জানুয়ারি রবিবার এমন চল্লিশ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে হয়ে গেল বিশেষ কর্মশালা। এটি পরিচালনা করলেন শিক্ষক অমিত দত্ত বণিক। লাইব্রেরি সায়েন্সের খুঁটিনাটি বিষয়ে হাতে কলমে শেখালেন তিনি- বই বাছাই, সাজানো, যত্নের প্রক্রিয়া, ক্যাটালগিঙের বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি সব কিছু আলোচিত হয়েছে এই কর্মশালায়। শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে শিখেছে, প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়েছে। প্রায় আড়াই ঘন্টা ধরে এই পর্ব চলেছে। এই পর্বে উদ্বোধনী গান শুনিয়েছে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী ঋতু মল্লিক এবং কবিতা আবৃত্তি করে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী শরমীম সুলতানা।


ছবি - অহর্নিশ

     
    মধ্যাহ্ন ভোজের পরে শিবনারায়ণ রায় শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত হল বিশেষ সভা। শিবনারায়ণ রায়ের প্রয়াণের পর 'তর্পণ' নামে যে সনেট লিখেছিলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সেই কবিতা পাঠে  অংশ নিয়েছেন সোমা মুখোপাধ্যায়। এরপর শিবনারায়ণ রায়ের 'রেডিক্যাল হিউম্যানিজমের সাফল্য ও ব্যর্থতা' বিষয়ে আলোচনা করেন শুভাশিস চক্রবর্তী।  লাইব্রেরি কক্ষে আগামী একুশে ফেব্রুয়ারি 'লাইব্রেরি ও কেরিয়ার' নিয়ে বক্তব্য রাখবেন বারাসত ইন্দিরা গাঁধী মেমোরিয়াল হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষিকা জয়িতা চট্টোপাধ্যায়। 🚫


লাইব্রেরির দেওয়াল পত্রিকা 'দেয়ালদহ' উদ্বোধন করেছেন 
অধ্যাপক শুভেন্দু মজুমদার ৭ ফেব্রুয়ারি।

সংবাদ ২ ।। 

পথের আলাপ আয়োজিত ‘এক বিকেলের আড্ডা’
নিজস্ব প্রতিবেদন
ছবি - শ্রেয়সী কুন্ডু

    গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২১ কলেজস্ট্রিট কফিহাউজের তিনতলায় বই-চিত্র গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পথের আলাপ আয়োজিত ‘এক বিকেলের আড্ডা’। পথের আলাপ পত্রিকার সদ্য প্রকাশিত ‘সাইকেল’ সংখ্যার আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ও গল্প প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান উপলক্ষ্যে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয় কন্ঠশিল্পী ইন্দ্রাক্ষী ভট্টাচার্যের সূচনা সঙ্গীতে। স্বাগত ভাষণে পথের আলাপের পক্ষে চমক মজুমদার উপস্থিত সুধীজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ভূ-পর্যটক, সাইকেলিস্ট লিপিকা বিশ্বাস; আন্তর্জাতিক বাইক্স সংস্থার কলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত এবং কলকাতা সাইকেল সমাজ সংস্থার আহ্বায়ক রঘু জানা। অতিথিদের হাতে উন্মোচিত হয় পথের আলাপ পত্রিকার সদ্য প্রকাশিত ‘সাইকেল’ সংখ্যার মোড়ক।


 সাইকেল সংখ্যার উদ্বোধন। (বাঁ দিক থেকে)
কলকাতা সাইকেল সমাজ
এর আহ্বায়ক রঘু জানা , বিশিষ্ট ভূ পর্যটক লিপিকা বিশ্বাস এবং কলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত

    দেশ-বিদেশে সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতায় লিপিকা বিশ্বাস রোমহর্ষক ঘটনার উল্লেখ করে শ্রোতাবৃন্দকে স্তম্ভিত করে দেন। উপস্থিত দর্শকদের সামনে যেন ছবির মতো ফুটে ওঠে সে সব ঘটনা। 

 সাইকেলিস্ট লিপিকা বিশ্বাসের হাতে স্মারক ও পত্রিকা

    আড্ডার জাল আরো ছড়িয়ে দেন ‘কলকাতা সাইকেল সমাজ’ সংস্থার আহ্বায়ক রঘু জানা। দর্শকদের সামনে তুলে আনেন কলকাতার সাইকেল আরোহীদের দুর্দশার কথা। স্রেফ এক টুকরো ছাপ মারা কাগজে কীভাবে তাদের ফাইন করে যাচ্ছে পুলিশ, আবেগতাড়িত হয়ে পকেট থেকে সেই কাগজের রাশি বের করে বোঝাতে থাকেন দর্শকমণ্ডলীকে। 

কলকাতা সাইকেল সমাজ’ সংস্থার আহ্বায়ক রঘু জানা

    ‘সাইকেলের ভবিষ্যৎ’ নিয়ে বলতে গিয়ে আশার আলো দেখালেন কলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত। নিজের বক্তৃতায় তথ্য তুলে ধরে শতঞ্জীব বুঝিয়ে দেন, সাইকেলই ভবিষ্যৎ। কথাপ্রসঙ্গে শতঞ্জীব জানান কয়েক দশক আগে আমস্টারডামের সাথে কলকাতার জ্যাম-জট জড়িত রাস্তার কোনো অমিলই ছিল না। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা ভেবে নেদারল্যান্ড ক্রমশ ঝুঁকেছে সাইকেলের দিকে। তিনি প্রশ্ন তুলে দেন শহরের ফ্লাইওভার পরিকল্পনার দিকে।

   

কলকাতার বাইসাইকেল মেয়র শতঞ্জীব গুপ্ত

     ‘এক বিকেলের আড্ডা’ অনুষ্ঠানে পুরস্কৃত হন পথের আলাপ আয়োজিত গল্প প্রতিযোগিতায় সেরাদের। প্রতিযোগিতায় প্রথম হন অজিতেশ নাগ, দ্বিতীয় বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃতীয় বন্দনা মিত্র। অতিথিদের হাত দিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক, পুষ্পস্তবক, বই এবং যথাক্রমে দুই হাজার, দেড় হাজার ও এক হাজার টাকার আর্থিক পুরস্কার। পুরস্কৃত হন প্রতিযোগিতায় ‘সেরা দশে অন্যতম’ গল্পকাররাও। পূর্বা কুমার, মৌসুমী ঘোষ, জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সমাজ বসু, প্রলদের। প্রতিযোগিতায় প্রথম হন অজিতেশ নাগ, দ্বিতীয় বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় এবং তৃতীয় বন্দনা মিত্র। অতিথিদের হাত দিয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানাধিকারীর হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক, পুষ্পস্তবক, বই এবং যথাক্রমে দুই হাজার, দেড় হাজার ও এক হাজার টাকার আর্থিক পুরস্কার। পুরস্কৃত হন প্রতিযোগিতায় ‘সেরা দশে অন্যতম’ গল্পকাররাও। পূর্বা কুমার, মৌসুমী ঘোষ, জয়কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়, সমাজ বসু, প্রলয় নাগ, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এবং বিকাশকলি পোল্যের হাতে তুলে দেওয়া হয় স্মারক, বই এবং পাঁচশত টাকার আর্থিক পুরস্কার।

    
    অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে গল্পপাঠ করে শোনান দশম শ্রেণির পড়ুয়া সারস্বত হাজরা, কবিতা পাঠ করেন কবি ব্রতীন সরকার। সমাপ্তি সংগীতে সঞ্চিতা রাহা নন্দী উপস্থিত দর্শকের মন জয় করে নেন।🚫        

সঞ্চালক - চমক মজুমদার


সংবাদ ৩ ।। 

মানবজমিন আলোচনা সভা।। কথ্য অকথ্য
নিজস্ব প্রতিবেদন
ছবি - মানবজমিন



    হুগলি জেলার ব্যান্ডেলের সুপরিচিত সাংস্কৃতিক সংস্থা 'মানবজমিন' সাহিত্য-সংস্কৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ নিয়মিত অনুষ্ঠান আয়োজন করে চলেছে। অতিমারি-জনিত স্বাস্থ্য-বিধির কারণে সংস্থার অনুষ্ঠানগুলি প্রায় এক বছর ব্যাপী কেবল বৈদ্যুতিন মাধ্যমে আয়োজিত হয় এবং দুই বাংলার শ্রোতা-দর্শকদের সমাদর পায়।  বর্তমানে প্রশাসন নির্দেশিত শিথিলতর স্বাস্থ্যবিধি পালন করে ৩১শে জানুয়ারি, ২০২১, রবিবার, চুঁচুড়া জোড়াঘাটের বঙ্কিমচন্দ্রের স্মৃতিধন্য ‘বন্দেমাতরম্‌’ ভবনে ‘মানবজমিন’ আয়োজন করেছিল তাদের লকডাউন পরবর্তী প্রথম সভা। সভার শীর্ষক ‘কথ্য-অকথ্য’ ।  

    মূল আলোচনার বিষয় ছিল বিশিষ্ট কবি-শিল্পী-গবেষক অধ্যাপক ডঃ সত্রাজিৎ গোস্বামীর সদ্য প্রকাশিত “বাংলা অকথ্য শব্দের অভিধান” গ্রন্থটি।

    'মানবজমিন'-এর পক্ষে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট কবি, সাহিত্য-আলোচক ও প্রাবন্ধিক অতনুকুমার বসু। শুরুতেই শ্রদ্ধা জানানো হয় জেলার দুই বিশিষ্ট কবি, যাঁরা মানবজমিনের শেষ সাধারণ অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, অধ্যাপক শুভেন্দুবিকাশ অধিকারী এবং বিশ্বনাথ ঘোষের স্মৃতির প্রতি তথা এই অতিমারি সারা বিশ্বে যাঁদের প্রাণ কেড়ে নিল তাঁদের স্মৃতির উদ্দেশে।

    উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন অন্বিতা ভট্টাচার্য।  

    অধ্যাপক সত্রাজিৎ গোস্বামী তাঁর নাতিদীর্ঘ ভাষণে বাংলা অকথ্য ভাষা নিয়ে তাঁর ২৫ বছর ব্যাপী দীর্ঘ গবেষণার ইতিবৃত্ত বর্ণনা করেন। তিনি জানান লোকাল ট্রেনে কয়েকজন  তরুণের মুখে শোনা একটি শব্দ কীভাবে তাঁকে এই গবেষণার সূত্র দেয়। চলতে থাকে অনলস শব্দ সংগ্রহ ও গবেষণার কাজ।  এই বিষয়ে তাঁর প্রথম গবেষণা গ্রন্থটি প্রকাশ পেয়েছিল ঠিক কুড়ি বছর আগে ‘বাংলা অকথ্য ভাষা ও শব্দকোষ’ নামে।  তিনি বোঝান স্ল্যাং (slang)-এর উপযুক্ত বাংলা প্রতিশব্দ হিসেবে কেন ‘অকথ্য ভাষা’ নামকরণটিই যুক্তিযুক্ত । বিস্তারিত আলোচনায় তিনি ব্যাখ্যা করেন কেন ড. সুকুমার সেন, ড. রামেশ্বর শ, পবিত্র সরকার, ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক বা কুমারেশ ঘোষ প্রমুখ  গবেষকদের ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রতিশব্দের  তুলনায় 
' অকথ্য ' শব্দটি মানানসই এবং উপযুক্ত। 

উপস্থিত সুধীজন। ছবি - মানবজমিন

    গ্রন্থাগারিক ডঃ অসিতাভ দাশ, তাঁর আলোচনায় উঠে আসে ভাষা ও শব্দের বিবর্তনের কথা।  অভিধানের বিবর্তনের কথা।   ডঃ সত্রাজিৎ গোস্বামীর ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে সুদীর্ঘ গবেষণা ও গভীর ব্যুৎপত্তির তিনি ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন বাংলা অকথ্য ভাষা নিয়ে গবেষণার পথিকৃৎ হিসেবে তাঁর এই কাজ বাংলা অভিধানের ইতিহাসে এক নতুন শাখার উন্মোচন করলো যা আগামী সময়ে আরও গবেষণার পথ খুলে দেবে।  বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে যাঁদের কাজ, তাঁদের প্রত্যেকের সংগ্রহে থাকা উচিত এই অভিধান গ্রন্থ।

    দ্বিতীয় পর্বে, এই বিষয়ে শ্রোতা-দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডঃ গোস্বামী ও ডঃ দাশ। প্রশ্নোত্তর পর্বটি অনুষ্ঠানে অন্যতর মাত্রা যোগ করে। ‘বন্দেমাতরম্‌ ভবনে’ এই সন্ধ্যায় উপস্থিত ছিলেন জেলার শিল্প-সাহিত্য জগতের বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব।

    শ্রী ভাস্কর চক্রবর্তী ও ডঃ শ্রুতি গোস্বামীর কণ্ঠে গান ছিল শ্রোতাদের বিশেষ প্রাপ্তি। 

    মানবজমিনের পক্ষ থেকে ডঃ দাশ ও ডঃ গোস্বামীকে বিশেষ সম্মান ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।  ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় উপস্থিত সকলের প্রতি। 🚫