অনুবাদ
'ভ্রমণার্থী' এবং কয়েকটি কবিতা - প্রেমজী প্রেম
বঙ্গানুবাদ - বিকাশ শীল
বঙ্গানুবাদ - বিকাশ শীল
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
প্রেমজী প্রেম (১৯৪৩ - ১৯৯৩) রাজস্থানি।
তিনি বেশ জনপ্রিয় এবং পাঠকধন্য লেখক।
তিনি বেশ জনপ্রিয় এবং পাঠকধন্য লেখক।
কবিতা, গল্প, নাটক লিখেছেন। তার লেখালেখি 'হাদোতি' (রাজস্থানি) ভাষায়।
অতিপ্রজ প্রেমজী প্রায় বারো-তেরোটি বইয়ের লেখক।
যদিও তার পান্ডুলিপিতে অনেক লেখা এখনো নীরব।
তবে ইতিমধ্যে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার পেয়েছেন
তার কবিতার বই 'মাই পোয়েমস্'-এর সৌজন্যে।
ভ্রমণার্থী
এই সুপার-ডিলাক্স বাসে
সহযাত্রী
আপনি আর আমি
ভোর থেকেই
ছুটে চলেছি একসঙ্গে
আপনার জানালায় আপনাকে
আর আমার জানালায় আমাকে দেখতে দেখতে।
আমার জানালা থেকে
লাল সূর্য উঠে
হলুদ হয়ে এখন
আপনার জানালা থেকে
নেমে আসছে।।
আসুন, বন্ধু।
সূর্যের উদয় এবং অস্ত
দেখা ছেড়ে দিয়ে
বলুন
আপনি কে?
কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
কোথা থেকে আসছেন?
আসুন, নীরবতা ভাঙি।
গোধূলি নামছে
এই ঐশ্বরিক সময়!
আজ্ঞে, আপনিই প্রথম
কথা বলুন।
এই সুপার-ডিলাক্স বাসে
একমাত্র কথাই
আমাদের মধ্যে কে বেশি অহংকারী
তা বলে দেবে!
শীঘ্র কথা বলুন।
আলো মিলিয়ে যাচ্ছে।
অস্পৃশ্য
"প্যাটেলজী
আপনি কোথায় যাচ্ছেন?"
"একটা নেমতন্নে।
তুই তফাৎ যা
আমাকে ছুঁস না।"
"ক্ষমা
ক্ষমা করুন প্যাটেলজী।
আমি সরে যাচ্ছি
কিন্তু মনে রাখবেন
যে-বাঁশের ঝুড়ি করে
আপনাকে খাবার দেওয়া হবে
সেটি আমারই
এই অস্পৃশ্য হাতে তৈরি!"
(প্যাটেলজী - গুজরাতে গাঁয়ের মোড়ল)
চেতনা
আপনি বললেন,
"একটা কবিতা লিখুন।"
আমি একটা কবিতা লিখলুম।
আপনি বললেন,
"খুব ভালো হয়েছে।"
একটা পাতলা হাসি
আমার ঠোঁটে জেগে উঠল।
আমার কবিতার জন্য
আমি হাসি নি কিন্তু
আমি হেসেছি
আপনার প্রশংসা শুনে।
এক ব্যাগ সিমেন্টের মতো
চাহিদার যোগান
আমার কবিতাটি
আমার ঘুম
কেড়ে নিয়েছিল।
বার বার
এই কবিতাটি
আমার স্বপ্নে দেখা দিয়ে
বলেছিল,
"আপনি যেমন ওঁনার দাবি মতো
আমাকে লিখেছেন,
তেমনি আমার নির্দেশ মতো
আপনি ওঁনাকে গলা টিপে মারুন!"
রাজনীতি
আমার গাঁয়ে
যতগুলো গাছ আছে
তার থেকে অনেক বেশি
আছে মঞ্চ।
রাম-শ্যাম-যদু
সকলেই
একটা করে মঞ্চ বানিয়েছে
আর তাতে উঠে
চিৎকার করে চলেছে,
"আসুন, আসুন।
আমার কাছে আসুন।
আমি আপনার সব ভালো করে দেবো
দান-খয়রাত পাইয়ে দেবো,
আমি আপনাকে ঋণ পাইয়ে দেবো।"
এই রক্ত ও মাংসের
পুতুলগুলো
মঞ্চের ওপর থেকে
চিৎকার করছে।
কিন্তু
সেখানে লোক কোথায় যে শুনবে!
সকলেই তো
নিজ নিজ মঞ্চে দাঁড়িয়ে
গলা তুলে
চিৎকার করে চলেছে!
শিকড়
ঝড়
বাবলা গাছটিকে
আগাপাশতলা
ঝাঁকিয়ে দিয়ে
ছিনিয়ে নিয়েছিল
তার বাকল
ফুল
পাতা
কিন্তু কাঁটাগুলো
ছিল অক্ষত।
হাওয়া
বাবলা গাছটিকে
বাম থেকে ডানে
ডান থেকে বামে
দুলিয়ে দিয়েছিল
কাঁটাগুলোর জন্যে
কোনো কিছু ছিল না
শেকড়ের মতোই
কাঁটাগুলো
লেপ্টে ছিল
মাতৃভূমিতে।
বাবলা গাছের
বাকলের শিকড়
ফুল
এবং পাতা
সবগুলোই আলাদা আলাদা
বাকল
ফুল
পাতা
সবই আটকে ছিল
তাদের নিজ নিজ শিকড়ে
এখন
আমি বুঝেছি
কেন
মানুষজন আমাকে
কাঁটা বলে বিবেচনা করে।
〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰〰
কবি, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক বিকাশ শীলের সঙ্গে
সম্পাদক মৌসুমী ঘোষ
ছবি - সাইন্যাপস্ পত্রিকা
0 মন্তব্যসমূহ