আলোসাগরের ঢেউগুলি

রাজীব কুমার ঘোষ 

 আলোচিত পত্রিকা
ব্যাটিংজোন, অখন্ড বাংলার নির্বাচিত অণুগল্প সংখ্যা / বর্ষ ২ সংখ্যা ২ / একুশে বইমেলা ২০২০ / 
বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত
সম্পাদকঃ মাহাফুজ রিপন
সহযোগী সম্পাদকঃ শুকদেব হালদার, আখতারুজ্জামান রাশেদ
পৃষ্ঠা সংখ্যা ১৪৪
মুদ্রিত মূল্য ২০০

 

 বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত ব্যাটিংজোন পত্রিকার অখন্ড বাংলার নির্বাচিত অণুগল্প সংখ্যাটি অণুগল্প চর্চার ক্রমে এক উল্লেখযোগ্য এবং সংগ্রহযোগ্য সংখ্যা। অণুগল্পগুলি সুনির্বাচিত বা বলা ভালো উপযুক্ত অণুগল্পের লেখকদের কাছ থেকে অণুগল্প সংগ্রহ করা হয়েছে যার জন্য সম্পাদক মন্ডলী প্রশংসিত হবেন অণুগল্পপ্রেমীদের কাছে। 

 একটি স্পষ্ট ছোটো ভনিতাহীন সম্পাদকীয় শুরুতেই আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। তাছাড়া শুধু অণুগল্প নয়, অণুগল্প নিয়ে রয়েছে চারটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা। আলোচনা করেছেন বিলাল হোসেন, অমিতাভ দাস, হারাধন বৈরাগী এবং মেঘমালা দে মহন্ত। বিলাল হোসেনের আলোচনাটি কেন্দ্র থেকে সরে গেছে। গল্পের সৃষ্টি এবং চলন নিয়ে তার আলোচনাটি অনবদ্য কিন্তু সেটি অণুগল্প কেন যে কোনো গল্প এমনকি উপন্যাসের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তুলনামূলকভাবে অমিতাভ দাসের আলোচনায় অতি সংক্ষিপ্ত পরিসরে অণুগল্পের প্রকৃতি অনেকটাই ধরা পড়েছে। সম্পাদক যেমন স্পষ্টভাবে বলেছেন, “বর্তমানে অণুগল্পের ধ্যানধারণার সাথে, বনফুল বা রবি ঠাকুরের গল্পগুলো ঠিক সেভাবে যায় না।ঠিক তেমনই স্পষ্টভাবে অমিতাভ দাস বলেছেন অনেক কথাই, যেমন — “শব্দ কম হলেই সে লেখাকে অণুগল্প বলা হবে এইটে ঠিক নয়।বাঅনেকে মুক্তগদ্য লিখে অণুগল্প বলে চালিয়ে দেন। তাও ঠিক নয়।হারাধন বৈরাগী বলেছেন, “অল্প পরিসরে অল্প কথায় অনন্য উন্মোচন।  বিশেষ উল্লেখ করতে হয় আসামের অণুগল্পচর্চা নিয়ে মেঘমালা দে মহন্তের আলোচনাটি। আমরা জানতে পারি বহু তথ্য। জানতে পারি আসামের প্রথম বাংলা মাসিক মিনি পত্রিকাফিনকি’-র কথা। জানতে পারি বর্তমানে আসামের বাংলা অণুগল্পের পত্রিকাআণবিক’-এর কথা। 

 

  পত্রিকাটিতে রয়েছে বাংলাদেশের লেখকদের ৩২ টি অণুগল্প, পশ্চিমবঙ্গের ১৯ টি অণুগল্প, ত্রিপুরার ৯ টি অণুগল্প এবং আসামের ৯ টি অণুগল্প। আগেই বলা হয়েছে গল্পগুলি সুনির্বাচিত এবং বর্তমানে অণুগল্পের সম্ভাব্য বিভিন্ন সঞ্চারপথের প্রতিনিধিত্ব করেছে সার্থকভাবে। বিভিন্ন পাঠকের কাছে একই গল্প ভিন্ন মাত্রায় ধরা দেয় তবুও বর্তমান আলোচকের যাদের অণুগল্প আলাদা করে উল্লেখের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বলে মনে হয়েছে তারা হলেন বাংলাদেশের অরূপ কিষান, আলমগীর মাসুদ, খালেদ চৌধুরী, জাকির হোসেন, ঝর্ণা রহমান, হামিম কামাল; পশ্চিমবঙ্গের উত্তম বিশ্বাস, চন্দন কুমার ভট্টাচার্য, নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত, মৌসুমী ঘোষ, রক্তিম ভট্টাচার্য; ত্রিপুরার চিরশ্রী দেবনাথ, পৃথ্বীশ দত্ত; আসামের কান্তারভূষণ নন্দী, রণবীর পুরকায়স্থ, শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়। এছাড়াও বিশেষ উল্লেখযোগ্য অণুগল্প লিখেছেন আবু সাঈদ, ঋষি অরুণ চন্দ্র, চন্দন চৌধুরী, জাকির হোসেন, রনি রেজা, মাসুম মাহমুদ, মাহফুজ রিপন, মোস্তাক খান, শুকদেব হালদার, শফিক আজিজ, শেলী সেনগুপ্তা, সনোজ কুন্ডু, অলোক বিশ্বাস, শুভশ্রী সাহা, রূপরাজ ভট্টাচার্য, বরুণ কুমার সাহা, তপন মহন্ত, অভিজিৎ চক্রবর্তী।

    নির্দিষ্ট অণুগল্প নিয়ে আলোচনা করতে গেলেই গল্পের রহস্যটি বিনিষ্ট হয়ে যাবে। তাই সেই প্রচেষ্টা থেকে বিরত থাকাই ভালো। তবে বর্তমান সংকলনে বিশেষভাবে নজর কেড়ে নেয় আসামের অণুগল্পগুলি। 

    একেবারে শেষে পত্রিকার অণুগল্পগুলির তাৎপর্য উঠে এসেছে একটি পাঠ-পর্যালোচনায়। লিখেছেন আখতারুজ্জামান রাশেদ। তার পর্যালোচনার একটি অংশ তুলে দিই, “অণুগল্পের ছক বলি আর বৈশিষ্ট্যই বলি কোনটি থেকেই পৃথক করা যায় না অখন্ড বাংলার অণুগল্প লেখকের লিখনি। হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির মতো প্রশান্তি দিয়ে যায় গল্পগুলো।  . . . অণুগল্পকে নির্দিষ্ট ছকে বাঁধা খুবই কঠিন তবে বিষয়ের একটি সূক্ষ্ম উপস্থাপনের মাধ্যমে কাঙ্খিত বার্তা পৌঁছে দিতে পারলেই লেখক ও লিখনিকে সার্থক বলে মনে করা যায়। সে অর্থে  অখন্ড বাংলার অণুগল্পগুলোকে সার্থক বলা যায়।

  পত্রিকার আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ ও নামলিপি করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। 

 

যোগাযোগঃ mahfuzripon07@gmail.com
প্রাপ্তি স্থান
কলকাতায় সৃজন প্রকাশনী (9831475206)
বাংলাদেশে পাঠক সমাবেশ, বাতিঘর, জনান্তিক।

 


‘চুঁচুড়ার রাজীব’ মানেই ‘সহদেববাবুর ঘোড়া’, ‘ভীষ্মদেবের মৃত্যুমুহূর্ত’, ‘অনেক জলের শব্দ’, ‘টাওয়ার অফ্ সাইলেন্স’, ‘হিবাকুশার ছেলে’ বা ঘোষ স্যারের গল্পগুলি — বহুচর্চিত, ভিন্নমাত্রার কিছু গল্প। জন্ম ১৯৭৭; পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা চুঁচুড়া-হুগলি-চন্দননগর। ১৯৯৭ সাল থেকে লিটল ম্যাগাজিন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নিয়মিত লেখালেখি। সম্পাদিত পত্রিকা ‘সাইন্যাপস্’। আছে বেশ কিছু কবিতার বই। প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘ঘর ও দরজার গল্প’, ‘অনেক জলের শব্দ’, 'আমাদের আশাতীত খেলাঘর'।  গল্পের জন্য বারাসাতের বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ২০১৯ সালের ‘অনন্তকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কার’। অণুগল্পের জন্য ২০১৮ সালে চুঁচুড়ার গল্প সল্পের আটচালার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘উৎপল স্মৃতি পুরস্কার’। 

পেশায় বিজ্ঞান শিক্ষক। নেশায় পাঠক। প্রিয় অবকাশ যাপন  পাঁচশো বছরের পুরনো জনপদের অলিগলিতে সময়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরে বেড়ানো।