পেরুর কবি
গ্লোরিয়া মেন্দোসা বোরদার কবিতা
মূল স্প্যানিশ থেকে
অনুবাদে 
জয়া চৌধুরী

কবি পরিচিতি
Gloria  Mendoza Borda 

প্রবীণ এই কবি ১৯৪৮ সালে পেরুর পুনো (Puno) রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা চোদ্দো। ইংরিজি, আফ্রিকান, গ্রীক, জার্মান, ইতালিয়ান ভাষায় অনূদিত তাঁর কবিতা। ২০১৭ সালে পেরুভিয়ান স্টেট মিনিস্ট্রি অফ কালচার সোলার সালভাদোর তাঁকে পেরুর সংস্কৃতি প্রসারের জন্য মেরিট গোল্ড ও ডিপ্লোমা প্রদান করেন। পেরু সহ অন্যান্য লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে বেশ ক'টি পুরষ্কারে ভূষিত। 


রাখাল বালকের ভাবমূর্তি

প্রথম অঙ্ক

আমি তোমার মেষযূথের সামান্য মেষপালিকা 

কৃপাময় প্রভু
প্রতি গোধূলিতে সজীব চারণভূমিতে 
করিয়েছি স্নান তোমার মেষযূথ
যতক্ষণে নগ্ন তারা ধরা দেয় আমার চোখে 
                            অবিস্মরণীয় সেইসব 
আবছা হয়ে আসা ছাই ছাই এবং কফি রঙা চোখে 
                                  তোমায় দেখি 
বন্য মেষের মতন কোঁকড়ানো চুল আমার
প্রভু
হিংস্রতার ঋতুকালের রোমন্থনকারী এই আমি
বয়ে যাই উন্মুখ
ক্ষিপ্ত স্রোতধারার মত
শব্দদের নিয়ে যাই চারণে 
শেষ হওয়া কাজ আমার
বালুরাশির মূর্খ ধুলোর জঙ্গলে 
                    আটক আমি হাঁসফাঁস করি
কুরেকুরে খায় কুঁড়েঘরের জাল 
                    অথবা তোমার দুধভরা চোখ
প্রভু
চারণ যথেষ্ট করা গেছে
ক্লান্ত হয়ে গেছি তোমার অর্জন দেখে দেখে
আমায় তুমি অন্য কাজ দাও 
গাছের ছাল দিয়ে বানানো খেলনা
রাজহাঁস হতে চাই কিংবা মাছরাঙা
হৃদয়ের সামান্য বসতবাটিতে
আমি চিতাবাঘ হতে চাই
জলশূন্যতার পর
ব্যাঙেদের আকাশের মেঘ 
যত নাড়িয়েছি উথালপাতাল
ঝড়ের সঙ্গীত শুনতে যেয়ে
সুক্ষ্ম কানের জল
কবিতার চারণভূমি চিবোতে চিবোতে
যে নদী আমার জলসেচন করে সেখান থেকেই করি 
                               অঙ্কুরোদগমের ভান

 ছায়াবৃত করো আমায় 

            আমি গেরিলা যোদ্ধার সঙ্গে খেলতে চাই
প্রভু আমি নির্জীব হয়ে গেছি
খালি পায়ে এতদূর হেঁটে হেঁটে
শান্ত চাষি মেয়ে হতে আমার তো কষ্ট হয়।


দ্বিতীয় অঙ্ক

ভালবাসি ও আমার মন্দ প্রভু

তোমার মেষগুলি চারণ করাতে করাতে আমি ক্লান্ত
কেবল হাতে চাবুক ধরে রাখা
তৃণভূমির ঘাসেদের গলায় 
যন্ত্রণার চিৎকার শোনা।

তোমার চাষি কন্যা হব বলে কেন ফের জন্ম নেব

তোমার মেষযূথের চারণকারিণী 
                    তোমার স্বপ্নের মেষচারিকা
অশরীরী নৃত্যসভায় 
       আমি কি তোমার চোখের মণি রাখালবালিকা?

তৃতীয় অঙ্ক

ভালবাসি ও আমার মন্দ প্রভু
তোমার উৎসবের মেষযূথ সাথে
নিয়ে ওখানেই থাকো তুমি
ওরা পায় না দেখতে
তোমার শিরার রঙিন কোমরবন্ধনী
পূর্বপুরুষের গন্ধ পাই
জানি মেষ যূথের মধ্যখানে এখন
তোমার দৌড়োবার সময়। আমি যাই

চাবুকের কম্পাস দিয়ে তোমার 
                পশু চারণ করানো উচিৎ
এবার তোমার পালা

কবিতায় আমার গন্ধ থেকে

শোনো ফসলের অট্টহাসির শব্দ
আমার অসংযত ও দুঃখী মেষযূথ 

                            এবার তোমার পালা চষবার 
জলের ভেতরকার আমার সে দুঃখে 
                     এবার তোমার পালা
প্রথম মৃত্যু ঘনিয়ে এল
মেষপালক অস্তিত্বহীন পাহাড়ী মেষপালক
মেষপালক, তুমি শুনতে পাচ্ছ?
হারিয়ে যেয়ো না
অজ্ঞান হয়ো না
মেষপালক
শেষ অবধি।

মূল কবিতা

IMAGEN DE UN PASTOR 

She is currently a teacher at the
Carlos Baca Flor Superior School of Art, in Arequipa

সমুদ্রের সামনে
(কার্লোস ওকেন্দো দে আমাতে স্মরণে) 

তীর্থযাত্রা করেছিলাম
এক ঝাঁক 
ঢেউয়ের ধাক্কা বেয়ে
তোমাদের নামধাম
নির্বাসিত অনন্ত
কীভাবে ফের দেখা হবে স্বপ্নের সাথে
নির্যাতিতের ওপরে পড়া
ঝাঁকুনির ক্লান্তিতে
কোন দিন সাড়ে তিনশ মানুষ
অন্য দিন, বুঝি চারশ
পাহাড়ের ঈশ্বর
কোটি মৃত মানুষ
হেঁটে যায় স্মৃতির
পথ জুড়ে অন্ধকারে
আমরা ওর নিজস্ব ঢেউয়ে ঢুকে যাই
যখন সে আমাদের দিকে চেয়ে থাকে
যখন উচ্চারণ করি জোরে জোরে 
আমারই দেশে অনাশ্রিত
তাদের নাম
বারান্দাই আমার পথ
আমি ওকে চলতি
নাম দিই কষ্টে থাকা নিষেধ
কিন্তু প্রিয় কার্লোস
মৃত্যু লুকিয়ে থাকে এভাবে
গাছেদের পাতার ভেতর
কখনও সমুদ্রে মেশে
মুক্ত সিগাল পাখিদের নাচ
ভোরের সারস পাখিদের বিষণ্ণ নাচ
খাড়া পাহাড়ের গায়
মৃতেরা
হাত তোলে 
আমাদের ডেকে চলে
লুকনো ঢেউয়ের ছলে
গোধূলির মত হেঁটে চলে 
ওরা কাঁপতে থাকে
কোন দিকে চোখ রাখি
জনশূন্য বাঁধ
চেষ্টা করে সান্ত্বনা দিতে
নির্যাতিতর বর্ণনার ছটা
অসংখ্যের মাঝখানে থাকা জেমস এনসোর
কফির কাপ
বারান্দার টেবিলে ইদানীং এসে পৌঁছনো 
বইয়েরা হেঁটে যায় একটি উটপাখি
প্রশ্ন করি ওর কন্ঠে দুঃখী সুর কেন 
বাতাস মেপে দেখি
স্বাভাবিকতায় ফিরবে কি কখনও?
টিকে থাকা পাঁচনে 
পরিণত হয় উত্তর যতক্ষণ না
দরজায় এসে দাঁড়ায় যন্ত্র মিস্ত্রী
তর্কে পরাস্ত মানুষের
অনন্ত নীরবতা 
অঘোষিত কোন এক
যুদ্ধের গোধূলি কাল
নরম কালো প্লাস্টিকের থলে
ওগুলোকে ঢেকে রাখি কাপড়ের মত
বুকে ঘুষি মারি নিজের
একবার না একবার
সূর্যহীন এই আলো জ্বেলে দিই
অন্য কোন বিশ্বের
প্রত্যাবর্তন দেখবার জন্য
ইতিমধ্যে ভার নেবে
সব সমুদ্রতীরেরা
যন্ত্রণা হলে যেভাবে তুমি করো প্রিয় কার্লোস
উত্তরণের জন্য তোমার শব্দগুলোকে
এলোমেলো করা অসম্ভব
এখানে কষ্টে থাকা নিষেধ
শোক আমাদের ভয় ছুঁড়ে দেয়
দেশের শিশুদের চোখ থেকে ভয় সরিয়ে দিতে দিতে 
ঝড় পুঞ্জীভূত হয় আমাদের বারান্দায়।


মূল কবিতা

FRENTE AL MAR
(Carlos Oquendo de Amat)

আপনার মতামত নিচে 
'আপনার মন্তব্য লিখুন' শীর্ষক বক্সে লিখে 
আমাদের জানান। 
লিটল ম্যাগাজিন বেঁচে থাকে 
পাঠকদের মতামতে। 🙏

জয়া চৌধুরী। মূল ছবি - ফেসবুক থেকে।

অনুবাদক পরিচিতি

জয়া চৌধুরী/ অনুবাদক, কবি, প্রাবন্ধিক। অনূদিত মুদ্রিত বইয়ের সংখ্যা এগারোটি এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় আরো তিনটি মৌলিক বই প্রচারিত। ভারত আর্জেন্টিনা কিউবা মেক্সিকো বাংলাদেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন ব্লগ ও পত্রিকায় বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশিত। স্প্যানিশ ভাষায় মৌলিক প্রবন্ধ ও কবিতা প্যারাগুয়ে হন্ডুরাস আর্জেন্টিনার বিভিন্ন বই ও পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। অনুবাদ সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী প্রদত্ত লীলা রায় স্মারক সম্মান সহ আরো কয়েকটি পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। এছাড়াও ইংরিজি ভাষা থেকে কয়েকটি দেশের গল্প অনুবাদ করেছেন।

সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার প্রকাশিত
আগের অনুবাদগুলি পড়তে হলে ওপরের মেনু বারে 
SYNAPSE LIBRARY শিরোনামে ক্লিক করে 
'সব অনুবাদ' সাব মেনুতে ক্লিক করতে হবে।