ছবি সৌজন্য - ফেসবুক


স্মরণ
অজয়কুমার নাগ
(১৯৩৯ – ২৫ জুন ২০২১)

বিশ্বজিৎ অধিকারী

 

 ১৯৯৩ সালের মার্চ কি এপ্রিলের এক বিকেলে আমরা হাজির হয়েছিলাম কবি অজয়কুমার নাগের বাড়িতে। আমাদের দলটির নেতৃত্বে ছিলেন মাদপুর হাইস্কুলের গণিতের শিক্ষক শ্রী স্বপনকুমার মাজী। আমার তখন ইলেভেন। স্যার থাকতেন স্কুলের হোস্টেলে, সেখানে তাঁর কাছে অঙ্কের অবৈতনিক টিউশন পড়তে গিয়েই আবিষ্কার করি আধুনিক সাহিত্যের জগত। স্যার সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। তাছাড়া তাঁর সংগ্রহে ছিল দে'জ প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ কবিতা সিরিজের প্রায় সম্পূর্ণ সেট। তখন ধীরে ধীরে আমার মনোযোগ গণিতের বদলে কাব্যের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে, এবং তাতে স্যারের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়ের কথা নাই বা বললাম। তো একদিন প্রসঙ্গক্রমে স্যার বললেন, জানিস কি আমাদের কাছাকাছিই বসবাস করেন একজন মস্ত বড় কবি। চল, একদিন তোকে নিয়ে তাঁর বাড়ি যাই, আমারও আলাপ হয়নি।

           দুটো সাইকেলে চেপে আমরা তিনজন (সঙ্গে ছিল স্যারের আরেক ছাত্র রামকৃষ্ণ দাস) হাজির হলাম কবির বাড়িতে। বাড়ির অদূরে একটি শতাব্দীপ্রাচীন কারুকার্যময় নব-চূড়া মন্দির (শ্রীধর জিউ-এর মন্দির), অবশ্য বিগ্রহ তখন অন্যত্র স্থানান্তরিত মন্দিরের মাথায় পেতলের কলস, বিকেলের রোদ্দুর লেগে সোনার মতো ঝকমক করছিল। বাড়ির সামনের উঠোনে আমাদের বসার জন্য বিছিয়ে দেওয়া হল মাদুর। কবি খুব আন্তরিকতার সঙ্গেই কথা বললেন আমাদের সঙ্গে। সহজ কথায় বুঝিয়ে দিলেন আধুনিক সাহিত্যের খুঁটিনাটি। লেখালেখির ব্যাপারেও খুব উৎসাহ দিলেনআমাদের খেতে দেওয়া হল মুড়ির সঙ্গে তেল দিয়ে ভাজা বাদাম, আর গরম-গরম রসগোল্লা। সেসময়টা তিনি প্রায় বৎসরাধিক কাল লেখালেখি বন্ধ রেখেছিলেন, কিছু একটা পারিবারিক সমস্যার কারণেস্যারকে বললেন, আপনাদের দেখে আমার আবার লেখালেখি শুরু করার ইচ্ছে হচ্ছে। সে-ইচ্ছে তাঁর অপূর্ণ থাকেনি। সেই সময় থেকে আবার পুনরুদ্যমে লেখালেখিতে মেতে উঠেছিলেন। বলতে গেলে সেটা ছিল তাঁর সাহিত্যচর্চার দ্বিতীয় ইনিংস, যা নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চলেছিল মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

কবি অজয়কুমার নাগ।। ছবি সৌজন্য ফেসবুক

          অজয়কুমার জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালে খড়গপুর থেকে দক্ষিন-পূর্বে প্রায় তেরো কিলোমিটার দূরের গ্রাম “বাড়-হিন্দু”-তে, এক ক্ষয়িষ্ণু জমিদার পরিবারে। লেখাপড়ায় তাঁর তেমন মতি ছিল না। প্রাথমিক স্কুল পাস করার পর তাঁকে ভরতি করা হয়েছিল নারায়ণগড় থানার মদনমোহনচক হাইস্কুলে, সেসময়ে তা ছিল অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার মধ্যে একটি অগ্রণী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেখানেই এক শিক্ষকের উৎসাহে প্রথম সাহিত্যে হাতেখড়ি, তখন সম্ভবত তিনি ক্লাস-এইটে। তাঁর রচিত প্রথম গল্পটিই প্রকাশিত হয়েছিল “শুকতারা” পত্রিকায়, গল্পের নাম “এ নহে কাহিনি”। ব্যাস সেই যে সাহিত্যের ভূত চেপে বসল ঘাড়ে, লেখাপড়া আর খুব বেশি এগোল না। দূরের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসে বাড়ির কাছাকাছি সাঁকোয়া হাইস্কুলে ভরতি করে একটা শেষ চেষ্টা করলেন অভিভাবকেরা। কিন্তু তিনি স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারলেন না।

    সেসময় কলকাতার বাইরে পত্রপত্রিকা ছিল হাতেগোনা, লিটল-ম্যাগাজিন-এর ধারণটাই তখন একেবারে আনকোরা। তাই সাহিত্যচর্চা করতে গেলে কলকাতার কাগজই ছিল ভরসা। গ্রামে বসে কেবল ডাকঘরের ওপর নির্ভর করে তিনি হয়ে উঠেছিলেন কলকাতার পত্রপত্রিকার একজন নিয়মিত লেখক। গল্প কবিতা দুইই লিখেছেন কলকাতার ছোট বড় সবরকম কাগজে। একটা আশ্চর্য তথ্য হল—জীবনে তিনি একবারই কলকাতায় এসেছিলেন, তখন তাঁর ষাট-বাষট্টি বছর বয়সতাও সাহিত্যের প্রয়োজনে নয়, হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে থাকা নিজের একমাত্র মেয়েকে দেখতে।   

          'একক' (শুদ্ধস্বত্ত্ব বসু সম্পাদিত) সহ সেকালের প্রায় সমস্ত নামি ছোটকাগজে এবং অনেক বাণিজ্যিক কাগজে তিনি সমানতালে গল্প-কবিতা লিখেছেন। নিয়মিত পত্রিকা-দপ্তরে গিয়ে সম্পাদকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আলাপ-পরিচয় গড়ে তোলার ইচ্ছে বা সুযোগ কোনটাই তাঁর ছিল না। বরং দেখেছি একটি জনপ্রিয় মাসিকের সম্পাদক তাঁর দীর্ঘ নীরবতা দেখে চিঠি লিখেছেন, ‘অনেকদিন হয়ে গেল আপনার কোনও লেখা পাইনি আমরা। অনুগ্রহ করে লেখা পাঠান...’গত শতকের আটের দশকে তাঁর নাম সাহিত্য অ্যাকাডেমির “হুজ হু অব ইন্ডিয়ান রাইটার্সে” নথিভুক্ত হয়ে যায়, বলা বাহুল্য, কোনোরকম ব্যাক্তিগত উদ্যোগ ছাড়াইআর নয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি লেখক হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকার প্রদত্ত একটি মাসিক ভাতা পেতে শুরু করেন, যা প্রথমে ছিল দু’ হাজার, এবং পরের দিকে বেড়ে হয় চার হাজার।

          আটের দশকে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করতেন কবি, পত্রিকার নাম ছিল ধুলোমাটি মাত্রই দুবছর টিকে ছিল কাগজটি, কিন্তু সেই অল্প সময়ের মধ্যেই তা বিশেষ সুনাম অর্জন করতে পেরেছিল। এমনকি সেই সুদূর গ্রাম থেকে প্রকাশিত কাগজে গজেন্দ্র মিত্র, সুমথনাথ ঘোষের মতো লেখকও গল্প লিখেছেন। সারা জেলা জুড়ে ছড়িয়ে ছিল পত্রিকাটির গ্রাহক। প্রেসে বর্ধমান দেনায় দায়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

          জীবদ্দশায় অজয়কুমারের মাত্রই তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছেকবিতার বই “মধুমতী” ও “অস্থির ঘুঙ্গুর বাজে” (প্রকাশক ‘বাকপ্রতিমা’) এবং গল্পের বই “তৃষ্ণার খেয়াঘাট” (প্রকাশক ‘মাটি’) আর তাঁর নিজহাতে বাঁধানো খাতাগুলোতে থেকে গেল অন্তত কুড়ি-বাইশটি বই হতে পারে এমন লেখা। বড়দের গল্প-কবিতার পাশাপাশি ছোটদের লেখাও লিখেছেন অজস্র। লেখা প্রকাশের ব্যাপারে তিনি ছিলেন বাছবিচারহীন। ছোট বড় যে পত্রিকাই লেখা চেয়েছে তাকেই লেখা দিয়েছেন, কারুকে নিরাশ করেননি এমনও কোনও কোনও বছর হয়েছে গল্প কবিতা ছড়া মিলিয়ে দ্বিশতাধিক কাগজে তাঁর লেখা ছাপা হয়েছে। লেখক হিসেব অজয়কুমার ছিলেন প্রধানত রোম্যান্টিক। প্রেম প্রকৃতি নস্টালজিয়া তাঁর লেখায় এক অনন্য  রূপে প্রতিভাত হয়েছে। তাঁর নম্রভাষী কবিতাগুলোকে বলা চলে এক বিশেষ ধরণের লিরিক্যাল ব্যালাড।

          তিনি ছিলেন উদার ও অসূয়াশূন্য, কোনোরকম সঙ্কীর্ণতা বা দলবাজিতে তাঁর বিশ্বাস ছিল না। নবীন প্রবীণ সবাইকে সাদরে কাছে টেনে নিতেন। একসময় কলকাতার কবি অজয় নাগের (“সুন্দর” পত্রিকার সম্পাদক) সঙ্গে সমনাম-জনিত কারণে সাহিত্যমহলে কিছু বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল। একথা ঠিক যে অজয়কুমার নামের সঙ্গে ‘কুমার’ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বদা খুব সচেতন থাকেননিতবে মনে রাখা দরকার তিনি তাঁর প্রায়-সমনামির চেয়ে বয়সে সাত বছরের বড় ছিলেন এবং ‘হুজ-হু’-তে তাঁর নাম ‘অজয় নাগ’ হিসেবেই নথিভুক্ত। যাইহোক উদ্ভুত বিতর্কটিতে আগাগোড়া তিনি ছিলেন সংযত এবং অনুত্তেজিত।

          আগেই লিখেছি যে আমাদের সঙ্গে আলাপ হওয়ায় পর থেকে তিনি আবার নবউদ্যমে লেখালেখি শুরু করেছিলেন। তখন মাদপুর ও তার সন্নিহিত অঞ্চলে সাহিত্যের বেশ একটা অনুকূল পরিবেশ গড়ে উঠেছিল। তাঁর উৎসাহেই গঠিত হয় “মাদপুর সাহিত্য পরিষদ ও পাঠচক্র”, স্বপনকুমার মাজী সম্পাদক ও তিনি সভাপতি। প্রকাশ পেতে শুরু করে একটি নতুন কাগজ, “ঠিক এখনই”। সেসময় আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন আমাদের স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক কবি দেবকুমার সুঁই (“আটপৌরে” পত্রিকার সম্পাদক), কবি লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ, কবি অরিনিন্দম মুখোপাধ্যায় (“বৃষ্টিদিন” পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক), এবং আরও অনেক তরুণ কবি-লেখক।

          জমিদার বংশের সন্তান হলেও তাঁর প্রায় সারাজীবন কেটেছে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে। কিন্তু আর্থিক অভাব তাঁর মনকে কখনও দীন করে দিতে পারেনি। নানা সময়ে বহু কবি-লেখক তাঁর চমকা গ্রামের ছায়াঘেরা মাটির বাড়িটিতে এসেছেন। এবং যারা এসেছেন তারা প্রত্যেকে পরিচয় পেয়েছেন তাঁর প্রবাদপ্রতিম আতিথেয়তার।

          জীবনের শেষ কয়েকটা বছর প্রায়ই নানা বয়সজনিত সমস্যায় ভুগতেন। তবু কোনও সাহিত্য-সভার আমন্ত্রণ ফেরাতে চাইতেন না। পরিবারের লোকজন বাধা দিলে অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বায়না করতেন শিশুর মতো। আসলে তিনি নানা বয়সের নানা ধারার কবি-লেখকদের সান্নিধ্য ভালো বাসতেন। আরও ঠিক করে বললে, তিনি মানুষের সান্নিধ্যই বড় ভালো বাসতেন। কখনও দেখা করতে গেলে চট করে ছাড়তে চাইতেন না। বলতেন রাতে থেকে যাও, অনেক গল্প হবে। আমাদের দলটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছিল। অরিনিন্দম-দা চাকরি নিয়ে কলকাতায়, স্যার রিটায়ার করে ফিরে গেলেন দেশের বাড়িতে। কিন্তু অজয়-বাবু জীবনের শেষ দশ বছর কার্যত একা একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে খড়গপুর-গ্রামীণ এলাকার সাহিত্যের ক্ষীয়মাণ ধারাটিকে সজীব রেখেছিলেন। তাপস মিশ্রের সঙ্গে শেষ বার তাঁর বাড়িতে দেখা করতে গেলাম দুহাজার কুড়ির ডিসেম্বরে। অনেক কথা হল, অনেক কথা বাকি থেকে গেল। স্ত্রী, তিন পুত্র, পুত্রবধূ, নাতিনাতনি আর অগণিত গুণগ্রাহীর একটা ভরা সংসার ফেলে রেখে চলে গেলেন কবি। কবিরা সাধারণত হন নির্জনতা-বিলাসী আর অন্তর্মুখী। কিন্তু এলাকার যে সব মানুষ সারাজীবনে এক বর্ণ কবিতা পড়েননি তাদের কাছেও অজয়কুমার ছিলেন একজন আপনজনএমন সর্বজনীন জনপ্রিয়তা বড় একটা চোখে পড়ে না আজকাল।

একটি ঐতিহাসিক মন্দির এবং একজন সৃষ্টিশীল মানুষ এতকাল অবস্থান করছিলেন পাশাপাশি। মন্দিরটির ক্ষয় শুরু হয়েছিল আগেই, ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল তার মহার্ঘ টেরাকোটার কারুকাজ। এবার স্রষ্টা মানুষটি অন্তর্হিত হলেন, নিজের অধিকাংশ রচনা অগোছালো অগ্রন্থিত অবস্থায় ফেলে রেখে। আমরা জানি না ধূসর খাতার পাতায় আত্মগোপন করে থাকা লেখাগুলির ভবিষ্যৎ। আমরা চাই—পরিবার এবং শুভানুধ্যায়ীদের উৎসাহে অচিরেই তাঁর একটি নির্বাচিত রচনার সংকলন প্রকাশিত হোক 🚫  

 

বিশ্বজিৎ অধিকারী

বিশ্বজিৎ অধিকারী

বাবা দীনবন্ধু অধিকারী, মা দীপ্তি অধিকারী; জন্ম মাতুলালয়ে, অখণ্ড মেদিনীপুর জেলার বালিচাতুরি গ্রামে, ১৯৭৬ সালে। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর। লেখালেখির শুরু স্কুল-জীবন থেকেই, শ্রী স্বপনকুমার মাজীর প্ররোচনায়। প্রথমে কবিতা, পরে গল্প ও প্রবন্ধ। এপর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে ছটি বই। প্রথম কাব্যগ্রন্থের জন্য পেয়েছেন একটি লিটল ম্যাগাজিনের পক্ষ থেকে দেওয়া “কবিতা একবিংশ” পুরস্কার। “কৃষিকথার আসর” গল্পের জন্য পেয়েছেন মুম্বাই-এর পত্রিকা “মায়ামেঘ” প্রদত্ত একটি বিশেষ পুরস্কার। রচনা প্রকাশিত হয়েছে অজস্র ছোটো পত্রিকায় এবং প্রায় সমস্ত জনপ্রিয় বাণিজ্যিক কাগজে। ‘শ্রীপর্যটক’ ছদ্মনামে একসময় কিছু বিদেশি গল্প-কবিতার অনুবাদও করেছেন। এছাড়া প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যাও কম নয়। ভালোবাসেন ছোটদের জন্য গল্প-কবিতা লিখতে। শখ নানা ধরণের ভারতীয় গানবাজনা শোনা। বর্তমানে একটি বিখ্যাত কলেজের গ্রন্থাগারিক হিসেবে কর্মরত।

লেখকের প্রকাশিত গ্রন্থ

পায়রার অসুখ (কবিতা, ২০০১)

বকম বকম বকম (ছোটোদের কবিতা, ২০০৬)

মাটির থিওরি (কবিতা, ২০০৯)

কৃষিকথার আসর (ছোটোগল্প সংকলন, ২০১০)

একটি সহজ গাছতলা (কবিতা, ২০২০)

দেবেন দাশের ঝোলা (ছোটোগল্প সংকলন, ২০২০)

 

আবার সূচিতে যাবার জন্য ক্লিক করুন 📃


আপনার মতামত নিচে 
'আপনার মন্তব্য লিখুন' শীর্ষক বক্সে লিখে 
আমাদের জানান। 
লিটল ম্যাগাজিন বেঁচে থাকে 
পাঠকদের মতামতে। 🙏