লিটল ম্যাগাজিনের খবরাখবর
আলোসাগরের ঢেউগুলি — ২
রাজীব কুমার ঘোষ
আলোচিত
পত্রিকা
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২০৮
মূল্যঃ ১০০ টাকা
ভিক্ষাজীবীদের নিয়ে একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যা
প্রকাশ করেছে খড়গপুরের লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্য সমাজ। উল্লেখযোগ্য যে ২৭ অক্টোবর খড়গপুর
রেলস্টেশনের কাছে মণিশংকর বুকস্টলে এই সংখ্যাটি উদ্বোধন করেন শহরেরই একজন ভিক্ষাজীবী
পূর্নেন্দু বর্ধন।
ভিখারি সংখ্যার মূল বিষয় সমাজের ভিখারিদের
আর্থসামাজিক অবস্থা জনসমক্ষে তুলে ধরা। পত্রিকাটিতে মূল্যবান বেশ কয়েকটি প্রবন্ধ রয়েছে,
রয়েছে গল্প এবং প্রবন্ধের মধ্যের ক্ষেত্রটিকে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা তিনটি গল্পে এবং
বিষয়ের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে উত্তম ছ’টি কবিতা। লিটল ম্যাগাজিনের আঞ্চলিকতার ধর্মকে মেনেই
মূলত খড়গপুর এবং মেদিনীপুরকে কেন্দ্র করেই উঠে এসেছে নানা মূল্যবান তথ্য। যদিও এগুলি
রকমফেরে গোটা পশ্চিমবঙ্গেই প্রযোজ্য।
এই সংখ্যার অন্যতম সম্পদ লকডাউনের আগে খড়গপুর
শহর ও শহরতলী এলাকার প্রায় ১৫০ জন ভিখারিদের নিয়ে করা একটি অনবদ্য সমীক্ষা। এই শ্রমসাধ্য
সমীক্ষাটি করেছেন কবি ও প্রাবন্ধিক ভবানীপ্রসাদ গুঁই। সঙ্গত কারণেই পত্রিকায় প্রত্যেক
ভিখারির বিস্তারিত দীর্ঘ বিবরণের বদলে ৬৫ জনের সারাংশ প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি দীর্ঘ
বিবরণ থেকে সারাংশ তৈরি করার শ্রমসাধ্য কাজটি করেছেন মধুমিতা সরকার, স্নেহাশিস কোনার,
দীপান্বিতা দাস এবং দীপঙ্কর চক্রবর্তী। এই রেলশহর তল্লাটে লকডাউনের আগে (এই সমীক্ষার
ওপর ভিত্তি করে) অনুমিত ভিখারির সংখ্যা প্রায় ২৩০, যার মধ্যে পুরুষ ১৪৫ জন এবং নারী
৮৫ জন। এই সমীক্ষা থেকে আরো দেখা যাচ্ছে ৬০ বছরের উর্দ্ধে ভিখারিদের সংখ্যাই সবচেয়ে
বেশি। প্রতিবন্ধী ভিখারিদের সংখ্যাটিও উল্লেখযোগ্য। ভাবতেও ভয় হয় দীর্ঘ লকডাউন পরিস্থিতিতে,
বন্ধ রেলচলাচল পরিস্থিতিতে এই বিপুল সংখ্যক ভিখারিরা বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছেন।
পত্রিকাটির সমস্ত প্রবন্ধই পরিশ্রম করে তৈরি
কিন্তু এই সুন্দর সংখ্যাটি সম্পর্কে অনুযোগ একটিই — সম্পাদক যদি প্রবন্ধকারদের মধ্যে
একটু তালমিল করার ভূমিকা নিতেন তাহলে পাঠক বিভিন্ন প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধে একই বিষয়ের
ওপর মোটামুটি একই তথ্যের উল্লেখ পাঠ থেকে মুক্তি পেতেন। যদিও এতে গবেষক-পাঠকের পক্ষে
ক্রশ রেফারেন্সের কাজটি সহজ হয়ে যায়।
আকাশবানীর অনুমোদিত গীতিকার এবং সুরকার কালীপদ
সামাই যিনি গ্রাম বাংলার বিস্মৃতপ্রায় পার্বণকেন্দ্রিক নৃত্যগীত অবলম্বনে ‘বারোমাস্যা
লোকনৃত্য’ নামে একটি নতুন আঙ্গিকের স্রষ্টা এবং বর্তমানে সেকালের ভিক্ষাজীবী লোকশিল্পীদের
মাগনের গান নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মাণের কাজ করছেন, তার দীর্ঘ প্রবন্ধটি পাঠকদের নির্বাক
করে দেয়। একেবারে মাটি থেকে উঠে আসা লেখা। অখন্ড মেদিনীপুর জেলায় গৃহস্থের বাড়িতে আগে
নানা ধরনের ভিক্ষাজীবি লোকশিল্পীরা যে গান পরিবেশন করে ভিক্ষা করতেন, যাকে বলা হয় মাগনের
গান, তাই তার লেখার বিষয়। গ্রাম্য সংস্কৃতির একাল ও সেকালের তুলনামূলক বিচার করে তিনি
মূল বিষয়ে প্রবেশ করেছেন। তিনি প্রায় কুড়ি রকমের মাগনের গান এবং তার সঙ্গে জড়িত লোকশিল্পীদের
সম্পর্কে বিশদ জানিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন গান, উল্লেখ করেছেন তাদের নাম ধাম। বর্ণনা
দিয়েছেন তাদের পোশাক, বাদ্যযন্ত্র থেকে গান পরিবেশনের। এই প্রবন্ধটির কাছে পাঠককে নত
হতেই হয়।
কামরুজ্জামান তার প্রবন্ধে তুলে এনেছেন তুলনামূলক
অনালোকিত এবং অনালোচিত বাঙালি ফকির বীর সেনানী মজনু শাহ তথা সেই প্রসঙ্গে ফকির বিদ্রোহকে।
পলাশীর যুদ্ধের বছর তিনেক পর বিক্ষিপ্তভাবে যে বিদ্রোহ শুরু হয়ে ১৭৬৩ থেকে জোরদার হয়ে
আঘাত এনেছিল ব্রিটিশদের ব্যবসা আর অস্তিত্বে। এই বিদ্রোহকে হেস্টিংস বলেছিলেন, “বহিরাগত
ভ্রাম্যমান সন্ন্যাসী ও ফকির দস্যুদলের বাংলাদেশ আক্রমণ।” উইলিয়াম হান্টার লিখেছিলেন,
“এই কৃষক, কারিগর, ফকির সন্ন্যাসীদের বিদ্রোহে উজ্জীবিত হয়ে মোঘল সাম্রাজ্যের ধ্বংসপ্রাপ্ত
সেনাবাহিনীর বেকার ও বুভুক্ষু সৈন্যগণও ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল।”
কার্ল মার্কস যাকে বলেছিলেন বিদেশি শাসন ও শোষনের বিরুদ্ধে বাংলা ও বিহারের কৃষক আন্দোলন।
এই বিদ্রোহের সর্বজনগ্রাহ্য নেতা মজনু শাহকে কেন্দ্র করে প্রাবন্ধিক তুলে এনেছেন বিদ্রোহে
ফকিরদের ভূমিকা।
কামরুজ্জামান যেখানে
মজনু শাহকে কেন্দ্র করেছেন সেখানে মহুয়া ব্যানার্জী তার প্রবন্ধে সামগ্রিকভাবে ফকির
বিদ্রোহকে তুলে এনেছেন। মজনু শাহ ছাড়াও এই বিদ্রোহের প্রধান কান্ডারীদের পরিচয় দিয়েছেন
তিনি। আমরা পাই বাস্তবের দেবী চৌধুরানী আর ভবানী পাঠককে। আমরা জানতে পারি জলপাইগুড়ি
জেলার শিকারপুর চা বাগানের কাছে দেবী চৌধুরানী ও ভবানী পাঠক আজো পূজিত হন। এই দুটি
প্রবন্ধ পাঠে পাঠক এই বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি সামগ্রিক ধারণা পাবেন।
খড়গপুরে সাহিত্য সমাজের ভিখারি সংখ্যা উদ্বোধন করছেন ভিক্ষাজীবী পূর্ণেন্দু বর্ধন। ছবি সৌজন্য - সাহিত্য সমাজ পত্রিকা |
একইভাবে অনিল ঘোষের
‘রেল ভিখিরি’ কাহিনি ও ভাস্করব্রত পতির ‘ট্রেনের ভিখিরিদের কথা’ প্রবন্ধে পাঠক ট্রেন
আর স্টেশনকে কেন্দ্র করে ভিক্ষাবৃত্তির একটি বাস্তব ছবি ও পর্যালোচনা পাবেন। ভাস্করব্রত
পতি সার্থকভাবে মন্তব্য করেছেন, “ট্রেন যেন আজ এক শ্রেণীর মানুষের কাছে বেঁচে থাকার
শেষ ধাপ।” তিনি ট্রেনের ভিখারিদের ভিক্ষা চাইবার পদ্ধতি অনুসারে ভাগ করে দেখিয়েছেন।
অনিল ঘোষ তার কাহিনিতে গল্পের স্রোতে তুলে এনেছেন অভিনব নানা তথ্য এবং রূঢ় বাস্তব।
তার গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র শম্পা দত্ত লোকাল ট্রেনের ভিখারিদের ওপর একটি ডকু ফিচার
করার সুযোগ পায়। এই সূত্রে পরতে পরতে উঠে আসে ফ্রেমের পর ফ্রেম আর শম্পা বুঝতে পারে
একটা ক্যামেরায় এই বিশাল ও গভীর সমস্যার ছবি সে ফুটিয়ে তুলতে পারবে না। সে যা ভেবেছিল
এরা তার থেকেও অনেক দূরের, অনেক গভীরের। পৃথিবীর কোনও শক্তিশালী ক্যামেরার লেন্স সেখানে
পৌঁছাতে পারবে না। অনবদ্য একটি তথ্য জুড়ে জুড়ে বুনে যাওয়া কাহিনি। সংঘমিত্রা দে-র
‘জীবন যেমন’ কাহিনির কেন্দ্রীয় চরিত্র স্টেশনের ভিখারি শিশুদের এন জি ও দিদি তিস্তা।
উঠে আসে এইসব শিশুদের জগৎ। আরেকটি কাহিনি আছে অঞ্জন সিকদারের ‘ভিখারি সম্রাট’। এক ভিখারির
দিক থেকে বুনে চলা সামাজিক এক দলিল। এই তিনটি কাহিনিকে প্রবন্ধ থেকে পৃথক করে স্বতন্ত্র
বিভাগে উপস্থাপনা করার প্রয়োজন ছিল। যার ফলে আপাতভাবে মনে হয় পত্রিকাটিতে ভিখারিদের
নিয়ে কোনো গল্প স্থান পায়নি।
প্রখ্যাত সাহিত্যিক
কিন্নর রায়ের প্রবন্ধে উঠে এসেছে ভিক্ষাবৃত্তির বিবর্তনের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপনা এবং
ছয় ও সাতের দশকের ভিখারিদের প্রসঙ্গ, গোবধ ভিখারি বা গান ঠাকুরদের কথা। উপভোগ্য প্রবন্ধ।
জয়ন্তপ্রকাশ ভৌমিক
তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন ভিখারি প্রসঙ্গের প্রাসঙ্গিকতা আর বিবর্তন। মূলত সরকারি ব্যবস্থাপনাগুলিকে
তিনি বিশ্লেষণ করেছেন বাস্তবের রূঢ় মাটিতে দাঁড় করিয়ে। কীভাবে ব্যবস্থাসমূহ গোঁজামিল
দিয়ে বহমান ধারায় বয়ে চলেছে তা আমরা পেয়ে যাই তার লেখায়।
পত্রিকাটিতে যে শুধু
অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল প্রান্তিক মানুষের কথা বলা হয়েছে তা কিন্তু নয়। উঠে এসেছে মানসিকভাবে
ভিখারিদের কথাও যাদের আমরা সমাজের সর্বস্তরে দেখতে পাই এমনকি প্রশাসনেও। যা আর্থ-সামাজিক
ক্ষেত্রে আজ ভারতবর্ষে বিষ উৎপন্ন করে চলেছে। রয়েছে দার্শনিকতার দিকটিও, যা আমরা পাই
তৈমুর খানের প্রবন্ধে, ‘মানুষ মাত্রেই ভিখিরি’। তিনি লিখছেন, “প্রতিটি মানুষই সারাজীবন
ভিখিরি। শুধুমাত্র ভিক্ষা চাওয়ার পদ্ধতিটিই আলাদা।”
‘বিদ্যাসাগর ও ভিক্ষুক’
রচনাটিতে প্রভাত মিশ্র তুলে এনেছেন বিদ্যাসাগরের জীবন থেকে কিছু মণিমুক্তা। ভিখারিদের
সঙ্গে তার নানা ঘটনা জানার সঙ্গে আমরা জানতে পারি ১৮৬৬ সালের দুর্ভিক্ষে তিনি কীভাবে
বহু মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে এবং পরোক্ষভাবে বাঁচিয়েছিলেন।
বিমলকুমার
শীটের প্রবন্ধের বিষয় ‘সেকালের ভিখারি’। মুঘল যুগে দ্রুত নগর জীবনের সম্প্রসারণের সঙ্গে
তিনি কৃষকের গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এই শহর গড়ে ওঠার
পরিণাম ছিল ভিখারির সংখ্যা বৃদ্ধি। তার লেখাতে উঠে এসেছে ইবন বতুতা, মা-হুয়ান, মাতাঁ-র
বর্ণনা।
মার্কসীয়
বিশ্ববীক্ষা অনুসারে ভিখারিদের নিয়ে দুটি প্রবন্ধ আছে। একটি বিজয় পালিতের ‘একদা শ্রমজীবী
আজ পথের ভিখারি’’ এবং বিজয় পালের ‘ভিখারিঃ মার্কসবাদী দৃষ্টিতে’। দুটি প্রবন্ধ-ই তথ্য
আর আলোচনায় ধারালো। বিজয় পালিত দেখিয়েছেন প্রাচীন কালে যারা ভিক্ষা করত তাদের সঙ্গে
আজকের পুঁজিবাদী রাষ্ট্রের ভিখারিদের গুণগত পার্থক্য ঘটে গেছে কীভাবে। তিনি ২০০০ সালের
সেন্সাস অনুযায়ী মুম্বাই, কলকাতা, দিল্লী, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ এবং বেঙ্গালুরুর ৬০
শতাংশ যে মানুষ বস্তি অঞ্চলে বসবাস করছে তাদের দ্বিধাহীনভাবে মার্কস কথিত ‘অতিরিক্ত
সংরক্ষিত শ্রমিক’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। বিজয় পাল তার প্রবন্ধে দেখিয়েছেন কীভাবে ভিক্ষাবৃত্তিকেও
পুঁজিবাদ কাজে লাগাচ্ছে নতুনতর শোষণ নির্মাণের কাজে। যা একপ্রকার বিকৃতি আর এই বিকৃতির
প্রভাব পড়ছে ব্যক্তিমানুষের ওপরেও। তিনি লিখছেন, “ধান কোটা মেশিনে যেমন সামনের দিক
থেকে চাল বেরিয়ে আসে আর পেছন দিক থেকে উপজাত হিসেবে আসে তুষ। তেমনি পুঁজিবাদের অনিবার্য
পরিণতি ভিখারির সংখ্যা বাড়িয়ে তুলেছে। আর তার উপজাত হিসেবে বাড়ছে ভিক্ষাবৃত্তিকে কেন্দ্র
করে নানা বিকৃতি।”
বিজন
চক্রবর্তী তার ‘ভিক্ষাজীবীতার উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধে আবার দেখিয়েছেন পুরাণ-কথা অনুসারে
কীভাবে উদ্ভব হয়েছে সন্ন্যাস আশ্রমে ভিক্ষার অধিকার। যে সন্ন্যাস গ্রহণের উদ্দেশ্য
ভিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ নয় বরং ত্যাগের মাধ্যমে সুখ ভোগ। তাড়াতাড়ি মোক্ষলাভের
জন্য সন্ন্যাসীর প্রতি বিধান ছিল বানপ্রস্থীদের আশ্রমে বারবার ভিক্ষা করার। কারণ সন্ন্যাসীর
গৃহীদের থেকে ভিক্ষা হিসেবে উপাদের খাদ্য পাবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে
ভিক্ষা ভারতের সমাজচেতনারও অঙ্গ হয়ে উঠেছিল। তিনি সোজাসুজি উপার্জনহীনতাকে ভিক্ষাজীবীতার
জন্য দায়ী করেছেন এবং উপার্জনহীনতাকে অর্থনৈতিক বৈকল্যের ফল বলেছেন। তার প্রবন্ধে আমরা
পাই তার দেখা কিছু অদ্ভূত ভিখারির বর্ণনা।
লোকসংস্কৃতি,
আঞ্চলিক ইতিহাস ও পুঁথি গবেষক শ্যামল বেরা তার প্রবন্ধে কবি রামেশ্বরের শিবায়ন, কবিচন্দ্র
মুকুন্দ মিশ্রের বাশুলীমঙ্গল, কবিকঙ্কন মুকুন্দের অভয়ামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, দ্বিজ নিত্যানন্দের
মনসামঙ্গল কাব্য অনুসারে শিবের ভিক্ষে আর চাঁদসদাগরের ভিক্ষার মধ্য দিয়ে মধ্যযুগের
ভিক্ষাবৃত্তির, তথা ভিক্ষুকের চেহারা ও অবস্থানের একটি চিত্র উদ্ধার করতে সচেষ্ট হয়েছেন
পর্যাপ্ত উদ্ধৃতির মাধ্যমে। একটি অত্যন্ত সুখপাঠ্য প্রবন্ধ।
এই
সংখ্যায় একটি ব্যতিক্রমি প্রবন্ধ লিখেছেন স্বর্ণেন্দু সেনগুপ্ত। তিনি তানেদা সানতোকা
নামক একজন বৌদ্ধভিক্ষুকে নিয়ে আলোচনা করেছেন যিনি আধুনিক হাইকু রচয়িতাদের মধ্যে অন্যতম
একজন। স্বর্ণেন্দু বার বার বলেছেন সানতোকার হাইকু তার জীবনকে বাদ দিয়ে পড়া সম্ভব নয়।
রাত্রে তিনি প্রতিদিনের অভিজ্ঞতা লিখে রাখতেন যেগুলি থেকে জাপানের সেই সময়, সমাজ, জনজীবনের
পরিষ্কার চিত্র পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, “সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ঘাম ঝরিয়ে, একদিনে
একজন শ্রমিক, যদি সে পুরুষ হয় তাহলে ৮০ স্যান উপার্জন করে, আর মহিলা হলে ৫০ স্যান।
একজন কয়লা শ্রমিক সারাদিন পরিশ্রম করে খুব জোর ২৫ স্যান উপার্জন করে। সুস্বাদু মাছের
জন্য বিখ্যাত, কুমা নদীতে একজন মাছ ধরে সারাদিনে ৭০ থেকে ৮০ স্যান উপার্জন করে। নিশ্চিতভাবে
এইসব মানুষগুলি কোনোক্রমে বেঁচে থাকে। জীবনকে কোনোভাবেই উপভোগ করতে পারে না।” সানতোকার
বেশ কিছু হাইকু অনুবাদে হাজির প্রবন্ধে।
পত্রিকাটিতে
ছ’টি কবিতা আছে যার মূল বিষয় ভিক্ষুক বা ভিক্ষা। ছ’টি কবিতাই উল্লেখযোগ্য এবং সার্থক
কবিতা। আলোচকের ভালো লাগা কিছু পংক্তি উল্লেখ করা হল —
না, কখনোই বলতেন না ‘ভিখিরি’!” (বিশ্বজিৎ কর)
ভিক্ষা-অনুদান ঘোরে . . . আমার, আমারই অপরাধ ঘোরে . . ” (স্নেহাশিস পাল)
‘ভিখারির চেয়েও ভিখারি’। (মিলন চট্টোপাধ্যায়)
আমি মহান সমাজসেবী
কখনও বা ডাক্তার, কখনও উকিল
কখনও বা শিক্ষক, কখনও পুলিশ
কখনও বা অফিসবাবু, কখনও ইঞ্জিনিয়ার
কখনও নেতা-মন্ত্রী” (অমিতাভ চক্রবর্তী)
তার সহজ শুভেচ্ছা রেখে যায়ঃ
‘ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন’। (লক্ষ্মীকান্ত ঘোষ)
পায়ে হেঁটে মথুরা, মাঝপথে থামালো যারা পরিচয় চাইলো
কিছুই ছিল না নেই তাই পায়েল কে টেনে নিয়ে গেল চাষজমিতে” (স্নেহাশিস কোঙার)
সাহিত্য সমাজের এই বিশেষ সংখ্যাটি আগ্রহীদের
জন্য অবশ্যই সংগ্রহযোগ্য একটি সংখ্যা। প্রীতিমান গিরির প্রচ্ছদ সজ্জাটিও নান্দনিক।
তবে পত্রিকার সমস্ত লেখায় একই বানানবিধি অনুসরণ করা প্রয়োজন ছিল। কোনো লেখক ‘ভিখারি’
লিখেছেন, কেউ আবার ‘ভিখারী’। বিষয়ের গুরুত্বে এইটুকু আমরা উপেক্ষা করতেই পারি।
পত্রিকা
সংক্রান্ত যোগাযোগ
e-mail:
kgp_amitava@yahoo.com
Mobile
no. 9547309234
‘চুঁচুড়ার রাজীব’ মানেই ‘সহদেববাবুর ঘোড়া’, ‘ভীষ্মদেবের মৃত্যুমুহূর্ত’, ‘অনেক জলের শব্দ’, ‘টাওয়ার অফ্ সাইলেন্স’, ‘হিবাকুশার ছেলে’ বা ঘোষ স্যারের গল্পগুলি — বহুচর্চিত, ভিন্নমাত্রার কিছু গল্প। জন্ম ১৯৭৭; পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা চুঁচুড়া-হুগলি-চন্দননগর। ১৯৯৭ সাল থেকে লিটল ম্যাগাজিন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নিয়মিত লেখালেখি। সম্পাদিত পত্রিকা ‘সাইন্যাপস্’। আছে বেশ কিছু কবিতার বই। প্রকাশিত গল্প সংকলন ‘ঘর ও দরজার গল্প’, ‘অনেক জলের শব্দ’, 'আমাদের আশাতীত খেলাঘর'। গল্পের জন্য বারাসাতের বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ২০১৯ সালের ‘অনন্তকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কার’। অণুগল্পের জন্য ২০১৮ সালে চুঁচুড়ার গল্প সল্পের আটচালার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘উৎপল স্মৃতি পুরস্কার’।
আরো লিটল ম্যাগাজিনের খবর জানতে এখানে ক্লিক করে মূল সূচিতে যান |
0 মন্তব্যসমূহ