হৃদ মাঝারে… / মৌসুমী ঘোষ

একবিংশ শতক এই প্রজন্মের হাতে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ এনে দিয়েছে। এই সহজলভ্য যুগে মেসেজ, চিঠি, এমনকি ছবিও মুছে ফেলা কত সহজ। একটা আঙুলের স্পর্শে ডিলিট। আর একটা আঙুলের স্পর্শেই ব্লক। ব্যস, একটা সম্পর্কের অবসান।

এখন প্রশ্ন হল, ডিলিট আর ব্লক অপশান স্পর্শ করলেই যেখানে সবের সমাপ্তি সেখানেও আধুনিক প্রজন্ম কিছু না পেলেই আত্মহননের পথ বেছে নেয় কেন?

একসময় কোনো কিছু পাবার আগে যে প্রতীক্ষার ধাপ পেরোতে হতো, এবং প্রতীক্ষা শেষে যে মধুর অবসান, সেটাই ছিল রোমান্টিসিজম। ভিডিও কল আর যাই দিক এই রোমান্টিসিজম দিতে পারে কি?

কী করে দেবে? আজ যে যোগ্যতা, বংশ পরিচয়, প্রতিষ্ঠা, এই সমস্তকে তুচ্ছ করে প্রযুক্তির হাতে তৈরি ইমেজ দিয়ে জীবন নামক শিল্পটি বহে চলেছে। এই প্রজন্মে 'প্রিয়' বা 'প্রিয়া' নামক মুগ্ধ সম্বোধন নেই, আছে ইমোজির ছড়াছড়ি, আদরের ইতি নেই, আছে জি আই এফের ক্লিপিংস, হাতের সুগন্ধ নেই আছে দামী ফোনের হাই ডেফিনেশানে তোলা কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও।

তবু নিরাশ হবার কিছু নেই। এখনও প্রেম আছে। এটাই সত্য। এখন লড়াই প্রেম বনাম মানুষের উদ্ভাবনী ক্ষমতার অর্থাৎ মেধার। অল্প পরিসরে এই লড়াইএর ইতিহাস বলা সম্ভব নয়। কারণ আমি যদি বলতে শুরু করি, প্রেম-ভালোবাসা একটি ধর্ম। সেক্ষেত্রে ধর্মের অভিমুখ বদলে যেতে কতক্ষণ? না এই লেখার সমাপ্তি ধর্মীয় প্রেমের কচকচি দিয়ে কখনোই শেষ করব না। এ প্রেম নব্বইএর দশকের হিন্দি বা বাংলা সিনেমার অন্তিম দৃশ্যও নয়। এ প্রেম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের হানাহানির বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সমস্ত অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে দেবে, এটা ভাবারও কোনো কারণ নেই।

এটা একপ্রকার ভালোবাসা, যা থেকে ফেবু পোস্ট দিলে আমরা এখনও সমর্থন পাই। করোনার সময় দেখেছি ডাক্তার থেকে শুরু করে সামাজিক কর্মীদের নিরলস যুদ্ধ। সেই আস্থা বা ভরসার স্থল হল এই প্রেম। এর বেশি প্রেম টিঁকে থাকার আশা আর করতে পারি না এই করোনা পরবর্তী মোবাইল সর্বস্ব যুগে। প্রেম বিষয়ক আরো সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন মনোবিদরা।

শেষে যে কথাটা বলতেই হয়, যুগের পর যুগ ধরে আমরা একটি স্বভাব বহন করে চলেছি, তা হল- নতুন প্রজন্মের যা কিছু সবই খারাপ আমাদের প্রজন্মের থেকে, এমন একটি ধারণা। যা কিছুর মধ্যেই প্রেমও পড়ছে কিন্তু। এই ধারণার বশেই কিন্তু আমরা নতুন প্রজন্মের নতুন রকম প্রেমের ধারণাকে নাকচ করে লঘু আখ্যা দিচ্ছি। তাই এ লড়াই মেধা আর প্রেমের নয়। এ চিরকালীন লড়াই মনগড়া ধারণার আর হৃদয়ের। যা অনেকটাই আরোপিত। এখান থেকেই যত সমস্যার উৎপত্তি। কিন্তু ভুললে চলবে না ভালোবাসা তথা প্রেমের ঠিকানা হৃদয়। যা আজোও পাল্টায়নি।

হে, জেন জেড প্রজন্মের প্রেম, তোমাকে স্বাগত। বাসা বাঁধো হৃদ মাঝারে…

📌 20.04.2022


মূল পাতায় যেতে এখানে ক্লিক করতে হবে
মৌসুমী ঘোষ

সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। নয়ের দশক থেকে লেখালেখি শুরু। ছোটো গল্পের জন্য বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন 'অনন্ত কুমার সরকার' স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৭)। অণুগল্পের জন্য পেয়েছেন গল্প-সল্পের আটচালা আয়োজিত 'উৎপল স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৯)। 'মৌসুমী যে অণুগল্পগুলি লিখেছিল' এই নামেই প্রকাশিত প্রথম বই। অণু-পুস্তিকাটি সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাঠকমহলে। প্রথম গল্প সংকলন, 'সোনালি খড়ের বোঝা' (২০২০), যুগ্ম গল্প সংকলন 'যেসব গল্পের কোনোও মানে হয় না' (২০২১)। বর্তমানে মৌসুমী আরেকটি ওয়েব পত্রিকা সম্পাদনা করছেন 'জ্বলদর্চি' পত্রিকার উদ্যোগে প্রকাশিত, ছোটোদের জন্য সাপ্তাহিক ওয়েব পত্রিকা 'ছেলেবেলা'।