সাইন্যাপস্ পত্রিকা ।। কবিতা ভাবনা ১ ।। কবি রামকিশোর ভট্টাচার্য
নুড়িপাথরের পাশে ছুটতে ছুটতে
সাইন্যাপস্ পত্রিকার একটি ধারাবাহিক কলাম কবিতা ভাবনা। প্রতি সংখ্যায় কোনো কবি কলম ধরবেন কবিতা বিষয়ে তার নিজের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার জন্য। সঙ্গে থাকবে তার নিজের স্বনির্বাচিত একটি কবিতা, যা প্রতিনিধিত্ব করবে তার কবিতা-দর্শনের। সাইন্যাপস্ পত্রিকার জন্য এই কলামের প্রথম কবিতা ভাবনা লিখলেন শ্রীরামপুরের প্রতিথযশা কবি রামকিশোর ভট্টাচার্য। রামকিশোর ভট্টাচার্যের সঙ্গে সাইন্যাপস্ পত্রিকার পাঠকদের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমাদের প্রিয় কবি তিনি। সাইন্যাপস্ পত্রিকার শুভানুধ্যায়ী। তার কবিতা ভাবনা দিয়েই আমরা আমাদের ওয়েব পত্রিকায় এই নতুন বিভাগটি শুরু করলাম।
নুড়িপাথরের পাশে ছুটতে ছুটতে ।। রামকিশোর ভট্টাচার্য
কবিতা কেন লিখতে এলাম? বেশ তো ভালোই ছিলাম রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ বা জসীমুদ্দীন, কুমুদরঞ্জন, কালিদাস রায়, সত্যেন্দ্র দত্তের গন্ডীতে। লিখছিলাম ছন্দের কথাছবি। কলেজ বয়সে হঠাৎ জীবনানন্দ ভিতরে ভিতরে দিলেন এক পৃথিবী তরঙ্গ। সে সময় হঠাৎ একদিন কাগজের গায়ে কলমের অন্যরকম চলা শুরু হয়েছিল এভাবেই, ‘সম্প্রতি গণিকালয় থেকে রেশনের চিনি বিক্রি হচ্ছে’, সেই ‘চিনিবৃতান্ত’ অনেকের কাছেই তিক্ত লেগেছিল, কিন্তু ‘কবিতা ক্যাম্পাস’ এর এক ঝাঁক তরুণ কবি আমায় দিয়েছিল সমর্থনের ঐশ্বর্য। হাত ধরে তারা টেনে নিয়েছিল তাদের পৃথিবীতে। সেই থেকে নিজের এক কাব্যজগৎ গড়ে তোলাই লক্ষ্য হয়ে গেল। নিজস্ব মানস রূপটি গেল বদলে। মন বলল মনকে, শব্দ তৈরি করছে মানুষ, শব্দের আপাত অর্থও প্রসঙ্গ অনুসারে মানুষেরই তৈরি। কিন্তু শব্দ তো কারও দাস নয়। ভরত, বামন, ভামহ বহু আগেই এক শব্দার্থের বিভিন্ন অর্থ বদলের কথা বলেছিলেন। আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী শব্দের সীমাবাঁধনটি যাচ্ছে খুলে, ফলে ভাবনার ছবিও যাচ্ছে পাল্টে। তার একরৈখিক ব্যবহারকে বহুরৈখিক করে তোলা দরকার বলে মনে হওয়া শুরু অনেক আগেই, সেই বিশ্বাসেই মনে হল অর্থপ্রসারতা কবিতার শব্দভাবনার ক্রমটি বদলে দিতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে এলো শব্দকেও কী করে নতুন ভাবে বলা যায়। তৈরি করা যায় নতুন শব্দজোট অর্থজোট। আমি দেখতে পাই, ‘এই উপত্যকা জুড়ে আমার লেবুলজেন্সবেলা। আমার রূপকথাদিনের রোদ্দুরগুলো জি.টি. রোডের গা বেয়ে চলে গেল মনকষ্টের বিকেলে’। ‘মাইনের ব্যাগে সে সব গল্প শুয়ে থাকে। গায়ে প্রবাল-পালক’। ‘কষ্টবাদনের নিরুপায় রাত তাদের পাঠালো শুধুই ক্লান্ত সান্ত্বনা।’ এইভাবেই ‘শিরা ফুঁড়ে আশাঙ্কুর মাথা তুললেই বর্ণময় কৌতুকের শুরু।’
আমি উত্তরআধুনিক বিষয়ে পড়েছি বেশ কিছু বই। অগ্রজ সমীর রায়চৌধুরি, অমিতাভ গুপ্ত, বন্ধু জহর সেন মজুমদারের সঙ্গে বহু আলোচনাও করেছি। কিন্তু সত্যি বললে বলতে হয় আমি আজও তেমন কিছু স্বচ্ছ ধারনা তৈরি করতে পারিনি। হয়তো মন দিয়ে বুঝতেই চাইনি। কারণ তাতে প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়। আসলে মাঝে মাঝে এই মনটাই যে নিজের বশে থাকে না। তখনই কবিতা এসে বসে পাশে।
‘ক্লোরোফিল আলো ধুয়ে দেয় তাদের শরীর।’ ‘ঘাসে গুল্মে লেগে থাকে কত কথা মুখ’, ‘গ্রহ-উপগ্রহে, মহাব্যোমে স্বরবর্ণের আত্মীয়-স্বজন লতাজাল বোনে।’ এইসবই নিজের মতোই ভেবেছি। কিন্তু দেখেছি এই বিশিষ্ট আলোচকেরা বিভিন্ন আলোচনায় আমার কবিতাকে উত্তরাধুনিক কবিতার অন্তর্গত বলেই মনে করেছেন। এই কথাগুলি বলার উদ্দেশ্য এই যে আমি মনে করি কবিতা যখন লেখা হয় তখন সেই সময়ের নিজস্ব ভাবনাকেই তুলে ধরা হয় মাত্র। লেখার সময় এই ‘আমি’র একটা বিন্যাস তৈরি হয় যে ‘আমি’র মধ্যে দিয়েই কবিতার মানসটিকে চিনতে পারা যায়। কিন্তু যখনই ভাবা হচ্ছে এই ‘আমি’র তো কোনো নির্দিষ্ট পরিচয় নেই। এই আমি কেবলমাত্র ‘an assembly station of life . .
.’ এই পৃথিবীর সব প্রাণই যেহেতু এই ‘আমি’র অন্তর্গত তাই ‘আমি’র চিরকালীন মিথ ভেঙে বলা যেতে পারে ‘আমি’ এক অসীম ক্ষেত্রমাত্র। আসলে অহম বা আমি-র সেই ব্রহ্মটি যে অসীম। তাহলে সেই যে কবিগুরু বলেছিলেন ‘ওদিকে অসীম যিনি স্বয়ং করেছেন সাধনা মানুষের সীমানায় তাকেই বলে আমি’ সেটা আর মানুষের নির্দিষ্ট সীমানায় থাকল না। এইভাবে যদি ভাবা যায় তাহলে কবিতার নিজস্ব ভাববীজটিও যাবে বদলে। তখন যদি বলি ‘ভাবো আমি সেই ঝরাপাতা যাকে দোলের আগের দিন নাড়াপোড়ায় বসানো হয়েছিল . . .’ হয়তো আপাত থমকে যেতে হবে। হয়তো আমাদের অভ্যস্থ চৈতন্যে ধাক্কা লাগবে। কিন্তু অভ্যাসদায়ের বাইরে যদি না দাঁড়াতে পারা যায় তাহলে আর লিখতে এলাম কেন? ‘নিরিবিলি শিল্পরূপ মেধার ভিতর’ বৈচিত্রের খোঁজে যেতে পারলে তবেই অন্তরালে থাকা নতুনটির সন্ধান পাওয়া যাবে। শব্দ ধ্বনি অর্থের পরিবর্তনে ক্ষণকালের কবিতা তখন চিরকালের দিকে চলতে শুরু করে। আত্মপ্রসঙ্গ তখন খেলা শুরু করে বিশ্বপ্রসঙ্গের সঙ্গে।
আসলে প্রত্যাশিতের বাইরে মানুষের মধ্যে থাকে এক অপ্রত্যাশিতের সম্ভাবনাও, যা তাকে নিয়ে যায় বাঁকবদলের দিকে। জনপ্রিয়তার মোহ তো আছেই। তাকে কীভাবে অস্বীকার করি। কিন্তু কবিতা কি শুধু খদ্দেরের কাছে পরিবেশনের জন্যেই লেখা! খদ্দের যেটা ভালো খাবে সেটাই? নিজের ভিতরের অন্য আমিটি তখন বলে ওঠে সরস্বতী বাণিজ্যে বসত করে না, আর তখনই ভাবমুখটি যায় বদলে। নিয়মবৃত্তের গন্ডী ভেঙে খোঁজ শুরু নতুনের। নুড়ি পাথর নিয়ে ছুটতে ছুটতে মাঝে মাঝে সামনে কিছু ছবি দুলে ওঠে। দুলে ওঠে শব্দরাও। যেন ধ্বনিগুলোর কাঁপন অনুভব করতে করতে বুঝতে পারি ‘যে মেয়েটির আশাবরী বুকের বাঁদিকে, সেও পাখিপুরাণেরর সুরে ভেসে যাচ্ছে মাঙ্গলিক আলোর দিকে।’ এই আলোর সঙ্গেই যে কবিতার তল-অতলের নিবিড় যোগ। যুথবদ্ধ হয়ে নয় আত্মস্বতন্ত্রের পথ ধরে সীমাভাঙার প্রবল ইচ্ছা। কবিতাকে বহুরৈখিক মাত্রা দিতে হবে। থাকবে যুক্তির ফাটল। তখন যেন দিনযাপনটাই বদলে যাচ্ছে মনে হয়। শুধুই মানুষ কি আমার চারদিকে?
ওই যে দেখতে পেলাম, ‘নাইটল্যাম্পের পায়ের কাছে পৌষের নিরীহ রাত সাপলুডো খেলে’ কিম্বা ‘কোমল ঋষভে আসে পানকৌড়ি বক। সোনাচড়াই। ঝোটন বুলবুলি। শুরু হয় ‘পাখিপাঠশালা’, সে পাঠশালায় সব আমিদের সঙ্গে এই আমিও মিশে বহুপক্ষীয় হয়ে যাই। সে অদ্ভুত স্বপ্ন জগৎ। সীমা নেই। পরিসীমা নেই। সৃষ্টিপ্রক্রিয়ায় যত কিছু গোপন রহস্য সব যেন জায়মান হয়ে আছে। সেখানে বসে বসে ব্যথা কিম্বা আনন্দ বুনতে বুনতে আলো অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে বুঝতে পারি খেলা হয় হাওয়ার ভিতরে হাওয়াদের, বুঝতে পারি কীভাবে হাওয়া স্তব শুনে পাল্টে যায় তেলছবির কান্নালাগা ক্যানভাসটিও, তখন অনির্দিষ্ট যাত্রা শুরু বহুরৈখিক রসের অফুরন্ত ভান্ডটির দিকে। ‘কতটা বিপন্ন হলে সম্পর্ক আত্মহত্যা করে’, যখন ভাবি তখন আর ব্যালাডধর্মী বৃত্তে থাকা নয় ধীরে ধীরে শব্দের গভীরে পৌঁছে যেতে যেতে আমি-তুমি-সে-সখা মিলেমিশে একাকার। জল থেকে জলে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে কত হাওয়া ছবি হয়ে যায়। কত সেতু গেয়ে ওঠে ঘুমপাড়ানিয়া গান। সে গানের কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নেই। ঘুমপাড়ানিয়া গানের কি কোন বিষয় থাকে? হয়তো আতঙ্কছিন্ন করা একটা সুরও হতে পারে। কিম্বা নিতান্তই এক মায়াজাল সৃষ্টি। যে সুরের রেশ ধরে কত অচেনা স্তরের মানস ভ্রমণ সেরে আসা যায়।
সুর আমার রক্তেই আছে তাকে কীভাবে অস্বীকার করি? পৈতৃক সূত্রে পাওয়া। নিজেও এক সময় সেতার বাজাতাম। বাবার মৃত্যু থামিয়ে দিয়েছিল সেতার। তারপর অনেক যুক্তি এসেছে সামনে কিন্তু সেতার আর হাতে ওঠেনি। কিন্তু সেই সব রাগ-রাগিণীরা ঘুরে বেড়ায় চারপাশে, আমি তাদের সঙ্গেই বসবাস করি দিনরাত। ফলে তারা কবিতার শরীরে বসে যায় সুযোগ পেলেই ‘চন্দ্রকোষ। কোষে কোষে চাঁদ লেগেছে। ছিটকে যাওয়া ইচ্ছার গন্ধ সমস্ত গায়ে। সরোদে অনন্ত জীবন।’ যখন বৃষ্টিদের ডেকে বলি ধ্রুপদ শোনাতে শ্রাবণ মুখ বাড়িয়ে দেখে-ভাটিয়াল-দিন বাজতে বাজতে এগিয়ে যাচ্ছে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা এক দেবদারুর দিকে। দেব আর দারুর সামনে এক দারুচিনি গ্রামের মেয়ে . . . আহা ইমন . . . আহা বেহাগ বলে প্রেম এসে আরামচেয়ারে বসে।
প্রেম যে কতবার এসেছে তার হিসেব নেই। আজও আসে। আসলে প্রেম তো কোনো নির্দিষ্ট হিসেবে আসে না। মগজের ভিতরে কোষে কোষে রাসায়নিক খেলা শুরু হলেই সে এসে পাশে বসে পড়ে। কিন্তু যখন দেখি কেউ বলছেন হৃৎপিন্ডে প্রেম বসছে আমি বুঝতেই পারি না একটা পিউরিফায়ারে কীভাবে প্রেম বসে!
সেখানে কোথায় তার বসা শোয়া থাকার জায়গা। আসলে প্রেম বসে মগজে। আমি কিন্তু মনে করি কবি
প্রেমের শখের চাকরটি নয়। প্রেম চিন্তনের খন্ড অংশ মাত্র। কবি স্ব-নির্দিষ্ট, তার থাকবে
অনায়াসগামীতা। আঁটোসাঁটো রক্ষণকামিতা কবিতাকে বড় বেশি একমুখী করে তোলে। সাজানো বাগানে
বসে থাকার একটা আনন্দ আছে ঠিক কিন্তু অনির্ণেয় একটা বাগানে কত রোমাঞ্চ থাকে। নতুন নতুন
আবিষ্কারের মজা। তাই যখন বলা হল অদ্ভূত স্বপ্নকণারা আঁচল আড়াল থেকে . . . মেয়েদের চুল
বেয়ে, জামার নক্সা বেয়ে . . . বাংলা ব্যাকরণের খাতা ছুঁয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সবুজপ্রদেশে
. . . তখন হয়তো পাঠক আপাতভাবে মাখো মাখো প্রেমের স্বাদটি পাবেন না। তবু সামান্য কয়েক
ছটাক জমির মধ্যে শুরু কবিতার খেলা।
তবে কথাগুলি এমন জায়গায়
থামলো মনে হলো কবিতাটি তো শেষ হল না। তখন নিবিষ্ট পাঠকের মনেও শুরু হয়ে গেছে নতুন ভাবনা।
পাঠকের মনের বিষয়কেন্দ্র . . . ভাবনাকেন্দ্র চলতে শুরু করে দিলো আপন মনে নতুন দিকে।
হয়তো নির্দিষ্ট বিষয় ছেড়ে কবিতা চললো বিষয়হীনতার দিকে। সেখান থেকেই হয়তো সৃষ্টি হবে
হাইপাররিয়ালিটি। সেক্ষেত্রে ছন্দের পুরাতন পথটি রাখাও যেতে পারে কিম্বা নিরূপিত ছন্দের
পথ ছেড়ে নতুনভাবে চলা শুরু করাই যেতে পারে। কত ভুখা মিছিলের হাত ধরেও চলেছে প্রেম।
যৌবনভূমির সাপগুলো সুখবিক্রেতার সামনে নাচতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে আছে। একটা স্লেজগাড়ির
গন্ধ আসছে ইংরাজি কবিতার বই থেকে। তখনই কি কবিতায় প্রেম লেগে যেতে পারে না? তখনই সে
আসে . . . অনায়াসে দেখতে পাওয়া যায় — পোস্টকার্ডে নৌকার ছবি ভেসে যাচ্ছে . . . স্পর্শপ্রতীক্ষায় . . . প্রীতিভাজনেষু ঢেউটির
দিকে। সাম্প্রতিকের জানলা দিয়ে দেখা গেল বদলে যাচ্ছে বহু বিষয়ের সংজ্ঞা। তৈরি হচ্ছে
কত বৈপরীত্য বোধ। কবিতা লেখার নেই কোনো ম্যানিফেস্টো। একা আমি হয়ে যাচ্ছে বহু আমি।
জানেমন প্রজাপতি দোতারা দেখলেই দুঃখ ঢেলে দিচ্ছে পায়ে। হয়তো কোনো কৃষ্ণমার্কা বিকেল
ধুলোতত্ত্বের ভজন গাইছে। এসব বলতে বলতেই কলম কাগজকে জিজ্ঞাসা করবে কবিতার কথা সব কবিতা
হয়ে উঠল তো। সেটার উত্তর কে দেবে? কিন্তু পাঠকই শেষ কথা যদি হয় তবে তার মেধাকেও ছুতমার্গীতা
বর্জন করে কবিতার কাছাকাছি নিয়ে আসতে হবে। তেমনই কবিতার শরীর তো রুক্ষ কর্কশ হতে পারে
না। অন্তত আমার তাই বিশ্বাস, কবিতার সব শিল্পই অনুভবের, একাত্মতার। কথা যত কম বলা যাবে
কবিতা আরও শিল্পিত হয়ে উঠবে। আরও ঘন। কোষের ভিতরে খুলে যাবে আচ্ছাদন। আমাদের হারমোনিয়াম
দিনগুলির গায়ে বেজে উঠবে অনিবার্য একফালি জমি। কবিতা আলো হয়ে জেগে থাকবে চেতনা, অতিচেতনা
ভাবনাবিশ্বের চারদিকে। মহাজগৎ পথে খেলা করবে প্রাণ জুড়ানো গন্ধের রোমাঞ্চ।
ইচ্ছেদের ছুঁয়ে
এ শহরে ইচ্ছের দল সেতু হয়ে থাকে। পাড়ায় পাড়ায় ঘোরে
হারানো দিনের গান। বিদ্যাপতি লেনের সকাল সাজে ভাটিয়ালি রঙে,
বেজে যায় অতিথি যেমন। ইচ্ছেদের গায়ে মৃদু টোকা দিলে
অন্তরায় এখনও বাজে শৈশবের মন। ইচ্ছের ভিতরে হাসে
ইচ্ছের পোশাক। অথচ দিনপঞ্জি খুলে দেখি চৌমোহনায় কেউ
কারো পরিচিত নয়। ইচ্ছের জন্ম নানা বেহিসাব গল্পের আড়ালে।
কক্ষপথে আহ্লাদ নেই। নির্জন বসে থাকা অপেক্ষা-শরীর থেকে
ধোঁয়া ওঠা দেখে অবাধ্য নগরবাজির ইচ্ছে-হাওয়া ঝাপটা মারে।
এ শহরের ছায়ারাও হাঁটে তার সঙ্গে, একটু নজর করে দেখি —
বৃষ্টির জলে এখন ভাসে না আর ইচ্ছেবন্ধু কাগজ নৌকার দল . . .
(কবিতাটি কবির সাম্প্রতিক কবিতা সংকলন ‘নির্জন কোমল ঋষভ’ থেকে কবির অনুমতি সহকারে প্রকাশিত।)
কবি রামকিশোর ভট্টাচার্যের লেখা শুরু সাতের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে।
১৯৯৩ প্রথম কাব্যগ্রন্থ : নতুন জলের শব্দ।
১৯৯৫ ছোটোদের ছড়ার বই : ছিড়িক ছড়া।
১৯৯৬ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : স্বপ্নপূরণ সিলেবাসগুলি।
১৯৯৮ : যৌথ অনুবাদে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ Dream Sequence and Snake Ladder
১৯৯৯ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : লিখে রাখি ভাঙা সন্ধ্যাগুলি।
২০০০ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : পাতা ঘুঙুরের ছায়ালিপি।
২০০১ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ইশারাপাখির চৌষট্টিকলা।
২০০৪ ছোটোদের ছড়ার বই : তিন্তিরিতিরি।
২০০৫ ছোটোদের ছড়ার বই : রঙ দিয়েছি মেঘের গায়।
২০০৬ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : বৃশ্চিকসরণির কারুকাজ।(পত্রলেখা থেকে প্রকাশিত এবং পাওয়া যায়)
২০১০ প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ : ইমন মনের বিলাস খানি। (পরম্পরা থেকে প্রকাশিত এবং পাওয়া যায়)
২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার কবিতার অনুবাদ : Songs of Mohenzodoro (পরম্পরা থেকে প্রকাশিত এবং পাওয়া যায়)
২০১৬ তে প্রকাশিত : ছোটোদের শ্রেষ্ঠ ছড়া কবিতা। (পরম্পরা থেকে প্রকাশিত এবং পাওয়া যায়)
কবির একেবারে প্রথমদিকের বইগুলো আর পাওয়া যায় না কিন্তু সুখবর
২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি নির্বাচিত সংকলন পাওয়া যায়,
'একতারায় নির্বাচিত রামকিশোর'।
২০২০ সালে পরম্পরা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ
'নির্জন কোমল ঋষভ'।
শ্রীরামপুরে কবি রামকিশোর ভট্টাচার্যের বাড়িতে
তার সঙ্গে আড্ডায় মৌসুমী ঘোষ এবং শ্রীপর্ণা ঘোষ
ছবি - সাইন্যাপস্ পত্রিকা
2 মন্তব্যসমূহ
গভীর শিকড়ের আলোয় স্নান করলাম।
উত্তরমুছুন'চন্দ্রকোষ' তথ্যটি আমার কাছে নতুন। সুর-রিয়ালিজমের শিকড়ের ঠিকানা পেয়ে উল্লসিত। কলমসেতারের শব্দমায়ায় আমরা বহুদিন ধরে আচ্ছন্ন, এবার সেতারকলমের সুরে ভাসবো বন্ধু।
ভালো লাগলো। রামকিশোর বাবু কবিতামগ্ন মানুষ। বিশদে তাঁকে জেনে আনন্দ পেলাম।
উত্তরমুছুন