সাইন্যাপস্ পত্রিকার একটি ধারাবাহিক কলাম কবিতা ভাবনা। প্রতি সংখ্যায় কোনো কবি কলম ধরবেন কবিতা বিষয়ে তার নিজের বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার জন্য। 

সঙ্গে থাকবে তার নিজের স্বনির্বাচিত একটি কবিতা, যা প্রতিনিধিত্ব করবে তার কবিতা-দর্শনের। সাইন্যাপস্ পত্রিকার জন্য এই কলামের তৃতীয় কবিতা ভাবনা লিখলেন মেদিনীপুরের প্রখ্যাত কবি সুমন মহান্তি। 


সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা কবিতা ভাবনা ৩ ।। কবি সুমন মহান্তি

কবিতার নিভৃত ভুবনে


    প্রধানত আমি গদ্যকার হিসেবেই পরিচিত,মানে গল্প-উপন্যাস লিখে থাকি। কবি হিসেবে সেভাবে পরিচিত নই,জেলার কবি হিসেবে কোথাও আলোচনার জায়গাতে থাকি না। এসব নিয়ে ভাবিও না। ভাবি না মানে কিছু কবিতা লিখে নিজেকে কবি ভেবে গর্ব অনুভব করি না। নিজেকে পার্টটাইম কবি ভাবতেই ভালোবাসি। সেভাবে নিয়মিত কবিতাচর্চা বা অনুশীলন বলতে যা বোঝায় তা এখনো পর্যন্ত করিনি। ইচ্ছে হলে কবিতা লিখতে বসি। আপন খেয়ালে কবিতা লিখি। কবিতা লেখার সময় শৈলী বা কাঠামো ইত্যাদি কিছু নিয়েই ভাবি না। কবিতা লেখা হয়ে গেলে তা আধুনিক/উত্তরাধুনিক/পুনরাধুনিক কোনটা হল তা নিয়েও মাথা ঘামাই না। নিজের অনুভব ঠিকভাবে প্রকাশ করতে পারলেই সেটিকে সার্থক কবিতা ভাবি।

    শুধু একটি ব্যাপার মাথায় রাখি। কবিতাটি যেন কমিউনিকেট করতে পারে। যে কোনও শিল্পমাধ্যমের প্রথম এবং মুখ্য উদ্দেশ্যই হল নিজের ভাবনাকে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এই কমিউনিকেশনের পথটি বিভিন্ন শিল্পীর বেলায় আলাদা, কবিরাও বিভিন্ন মত এবং পথের অনুসারী। সচেতন ভাবেই কবিতাকে খুব বেশি বিমূর্ত করি না,সহজ কথায় গভীর অনুভব বা নিজস্ব অনুভূতির দিগন্ত উন্মোচিত করতে চাই। কবি রণজিত দাশ বলেছেন, “আমি খুব সচেতনভাবেই বলছি, যে কবিরা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, শুধু আমি নই, প্রত্যেকে, সেই আদিকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত, প্রত্যেকের কবিতা অত্যন্ত সুস্পষ্ট ভাবার্থসম্পন্ন। সেই ভাবার্থটাই বিষয়। যে কল্পনাটি আসছে সেটি বিষয়, যে চিত্রকল্পটি আসছে সেটি বিষয়।’’ তাঁর এই কবিতা-ভাবনা যেন আমার ভাবনার সঙ্গে মিলে যায়। কবিতায় দুর্বোধ্যতা বা বিষয়হীনতা আমার অভিপ্রেত নয়। তাঁর কাছে আলাদাভাবে সময়কে ধরে রাখার আরোপিত চেতনা গুরুত্ব পায়নি। ভালো কবিতায় সময়ের ক্ষতচিহ্ন ছাপ রেখে যাবেই। উত্তর-আধুনিকতা বড় বেশি নাস্তিক্যবাদী অস্তিত্ব তুলে ধরে, একাকী বিচ্ছিন্ন মানুষকে প্রকট করে তোলে। তাই অতিচেতনা বা উত্তর-আধুনিকতা আমাকে টানে না। 
    
    অসীম রহস্যময় জগতের আনন্দ-বেদনার চিরায়ত প্রবাহটিকে, মানুষের বেঁচে থাকাকে চিত্রায়িত করতে চাই কবিতায়। জীবনানন্দের অনুভবে কাব্য হল জীবনের সঙ্গে এক গোপনীয় সুড়ঙ্গলালিত সম্পূর্ণ  সম্বন্ধে আবদ্ধ। সম্বন্ধের ধূসরতা ও  নুতনতা নিয়েই কবিতা। কবিতায় খুঁজে বেড়াই চিরকালের ‘ অধরা মাধুরী’, তাই ‘যারে যায় না পাওয়া তারি হাওয়া’ আমাকে ব্যাকুল করে, বিষাদে রাখে। কবিতা সেই ব্যাকুল বিষাদেরই অক্ষররূপ আমার কাছে। জীবনানন্দের ‘স্নায়ুর আঁধারে’ কথা খুব প্রভাবিত করে তাই। করোটির অন্ধকারে যে স্নায়ুস্পন্দন, যে  রহস্যময় অনুভব সেই অনুভবে পাঠককে স্পন্দিত করতে পারলে আমার কবিতাকে সার্থক মনে করব। অধরা মাধুরী আছে সর্বত্র, দূরে-কাছে, আমাদের প্রাত্যহিক যাপনে, প্রকৃতির রূপে, তুচ্ছ ধূলিকণায়, নারীর সৌন্দর্যে, নারীর সংস্পর্শে। এই হল কবিতার বিষয়। বিষয়হীনতায় যাত্রা কখনো করতে চাই না কবিতায়।

    তাই কোনো তত্ত্ব মাথায় রেখে কবিতা লিখি না। কোনও তত্ত্বের কাছে কবিতা বন্ধক রাখব কেন? ইদানিং দেখি অনেক বিভিন্ন প্রবন্ধে বা ব্লগে নানারকম তত্ত্ব তৈরি করছেন,অতিচেতনা বা পুনরাধুনিক ইতাদি থিয়োরি দিচ্ছেন। কবিতা কি অঙ্ক যে থিয়োরি বা সূত্র মেনে লিখতে হবে? হ্যাঁ,আজ পর্যন্ত বিভিন্ন কবিতা আন্দোলন বা মুভমেন্ট হয়েছে,তা লিটল ম্যাগাজিন বা গবেষণার বিষয় হয়েছে (অ্যাকাডেমিক স্বার্থে) কিন্তু শেষপর্যন্ত বিশেষ কিছু কবিতাই দাগ রাখতে পেরেছে। হাংরি আন্দোলন নিয়ে অনেক লেখালেখি দেখতে পাই কিন্তু সেই আন্দোলনের ফসল হিসেবে ক’টি কবিতা সময়ের বুকে ছাপ রেখেছে ? যা বললাম তা আমার নিজস্ব ধারণা,কবিতা নিয়ে কো্নও তর্ক-বিতর্ক পছন্দ করি না। কেউ অন্য মত ও পথের শরিক হতেই পারেন এবং আমিও ‘যত মত তত পথ’ এই উদার মনোভাবে বিশ্বাসী। তবে ভাবনা চাপিয়ে দেওয়া না-পসন্দ। ভাবনার উদারতা ভালো, মৌলবাদ নয়। এভাবে লেখা চলে না, এটা পুরনো, এভাবে লিখলে ছকভাঙা, ঐভাবে লিখলে আধুনিক, শ্লোগান বা প্রতিবাদ প্রকট হলে প্রথাবিরোধী এমন অজস্র মতামত দেখি পত্রপত্রিকায়, ভাষণে,প্রবন্ধে। কোনোটা নিয়েই মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করি না। কবিতা শেষমেশ শিক্ষিত এবং অনুভবী পাঠকের। কবিতা হল বা কেমন হল তা নিয়ে শেষ কথাটি তাঁরাই বলবেন। 

    এখানে একটি কথা বলা দরকার,না-হলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হবে। আর পাঁচজন বাঙালি যুবকের মতো শুরুতে কবিতা বেশি লিখতাম, গল্প তুলনায় কম।সাতাশ বছর বয়সে মনে হয়েছিল যে কবিতা আমার জন্য নয়, যা লিখি সরল আবেগের কাঁচা কবিতা। তারপর প্রায় দশ বছর কবিতা লেখার প্রয়াস করিনি সেভাবে। বীতশোক স্যারের (ভট্টাচার্য) কাছে প্রায়ই যেতাম।প্রায় চার বছর ধরে আমার প্রতিটি গল্পের তিনিই ছিলেন প্রথম পাঠক ও সমালোচক। একদিন ভয়ে-ভয়ে তাঁকে কয়েকটি পুরনো কবিতা দেখালাম। তিনি সস্নেহে বললেন, ‘কবিতা লেখা ছেড়েছিলে কেন? অবশ্যই লিখবে। ‘উদ্যমে বেশ কিছু কবিতা লেখার পর তাঁকে দেখালাম। তিনি প্রায় দু’বছর আরো কিছু কবিতা পড়ে যা বলেছিলেন আজ নিজের কবিতা সম্পর্কে ঠিক তাই ভাবি। তিনি বলেছিলেন যে রোমান্টিক বিষন্নতা আমার কবিতার আসল সুর,এটিই আমার নিজস্ব ঘরানা, কে কী বলল তা নিয়ে মাথা না-ঘামিয়ে যেন এই বিশেষত্ব রাখি। অকারণ কৃত্রিম হবার চেষ্টা না করাই ভালো। তিনিই আমার লেখালেখির মোড় ঘুরিয়ে দিলেন,আত্মবিশ্বাসে কবিতায় ফিরে এলাম। কবিতায় যে আড়াল রাখতে হয় কিছুটা, ব্যাঞ্জনাধর্মী হতে হয় এই বোধ আগে সেভাবে ছিল না। ওটুকুই ঠিক আছে, দুরুহ বা দুর্বোধ্য হবার চেষ্টা সচেতনভাবেই ত্যাগ করি।

    গল্প বা উপন্যাস নিয়ে বিচলিত হই। লেখা অপ্রকাশিত হলে বা অমনোনীত হলে অস্থির হয়ে পড়ি। কবিতার বেলায় একেবারে উল্টোটি ঘটে। কবিতা লিখি কম,বছরে ন’দশটি,পাঠাই খুব কম, পার্টটাইম এই কবির কাছে কেউ ভালোবেসে কবিতা চেয়ে ফেললে বিব্রত হই,কেননা জোর করে কবিতা লেখার চেষ্টা করি না। কবিতা পাঠিয়ে ভুলে যাই। প্রকাশে তেমন উচ্ছ্বসিত হই না,কবিতা পড়ে কার কেমন লাগল সে ব্যাপারেও উদাসীন থাকি,রিভিউ না-হলেও নির্লিপ্ত থাকি। কবিতা উৎসব,কবিতা পাঠ এসব থেকে দূরে থাকি। আমার বিশ্বাস এই যে কবিতা নিভৃতি দাবি করে,উচ্চকিত বা প্রচারিত হবার দায় তার না থাকাই শ্রেয়।  অনেকে দেখি অমুক জায়গায় কেন ডাকল না,তমুক কবিতা উৎসবে কেন অনাহূত এইসব নিয়ে অভিমানী হয়ে পড়েন, কোনো প্রবন্ধে তাঁর নাম উল্লেখ করেনি ইচ্ছে করে ভেবে ক্ষুণ্ণ হয়ে পড়েন। আমার কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না। কবিতা আমার কাছে নিভৃত প্রেম, নিজস্ব অনুভব-ব্যথা-আনন্দ-বিষাদ প্রকাশের আকাশ, তাই তা নিরুচ্চারে থাকাই ভালো। কবিতা নিয়ে সোচ্চার, প্রচারসর্বস্ব, চতুরালি, দলাদলি ইত্যাদি অপছন্দ করি, আমার কেন যেন মনে হয় শুদ্ধ কবিতা লেখার বাধা হয়ে দাঁড়ায় এইসব সাম্প্রতিক ব্যাপারগুলি। অনেকে তা করেন, ভাবেন অনেকের কাছে পৌঁছে দেবার দায় আছে, লাইমলাইটের আলো পড়ুক কবিতার ওপরে, বিশেষ করে কবি যেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যেভাবেই হোক থাকতে পারেন।

    আমার বিশ্বাস ভালো কবিতা লেখা,অনুশীলন এবং পড়াশোনা করা দরকার। আজকাল অনেকেই বিন্দুমাত্র পড়াশোনা না করে, আধুনিক বা সাম্প্রতিক কবিতা সম্পর্কে কিছু না-জেনে কিছু লাইন সাজিয়ে লিখেই নিজেকে কবি ভেবে ফেলেন। তাই বাংলা ভাষায় কবি ও কবিতা সহজলভ্য, ঠিক যেভাবে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সহজলভ্য। কবিতা এত সহজ ব্যাপার নয়। কবিতা নিয়ে আগে শিক্ষিত হওয়া জরুরি। দশ বছর কবিতা অল্প লিখলেও তথাকথিত সাফল্য গদ্যের তুলনায় বেশি, বিভিন্ন কুলীন বা বাজারি(!) পত্রিকায় প্রকাশিত কবিতার সংখ্যা তিরিশের বেশি,তবু নিজেকে পার্টটাইম কবি ভাবি। নিবিড় নিয়মিত চর্চা করি না,গদ্যসাহিত্য বেশি পড়ি, সেভাবে এক্সপেরিমেন্ট করার মতো সাহসী হতে পারি না। তাই নিজেকে কবি বলতে বা ভাবতে বিব্রত বোধ করি। অকারণ বিনয় নয়,এই ভাবনা প্রতিটি কবির মধ্যে থাকলে সে নিজের সৃষ্টি নিয়ে আরো ভাববে,যত্নবান হবে,নিজেকে মূল্যায়ন করে সার্থক কবিতা লেখার জন্য নিবিড় মগ্নতায় ডুবে যেতে পারবে। নিজেকে কবি ভেবে ফেলা, চলনসই কবিতা লিখে আত্মগর্বে উদ্ধত হলে কিছুই হয় না। সময় বা মহাকাল বিচার করবে এই ভাবনাও হাস্যকর। জীবনানন্দ একজনই হন। কুড়ি বছর পরে বাংলা সাহিত্য ক’জন পড়বে সেটাই গবেষণার বিষয়। কবিতা নিজের মেধা জাহিরের জায়গা নয় শুধু,আবেগ ও মেধার মেলবন্ধনেই একটি মহৎ কবিতার জন্ম হতে পারে। এই বিষয়টি চিরকালীন দ্বন্দ্বের ব্যাপার, কবিতা মেধাসর্বস্ব হবে না শুধুই আবেগের নিয়ন্ত্রিত স্ফুরণ হবে?  শুধু মেধার উচ্চারণ, হৃদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই, এমন কবিতা ভালো লাগে না। নির্মোহ উচ্চারণ গদ্যে মানানসই, কবিতায় নির্মোহ হলে সেই কবিতায় প্রাণের স্পর্শ থাকে না, প্রাণ আবেগ ছাড়া অসম্পূর্ণ। কবিতায় নির্মোহ হতে পারি না, চাইও না তেমনটি হতে। রামধনু আসলে কী তা বিজ্ঞান বলে, এক প্রাকৃতিক ঘটনা, তা দেখে মুগ্ধতা জাগে নীরস যুক্তির কাঁটাতার পেরিয়ে, তাই যুগে যুগে রামধনু কবিতায় চিত্রকল্প-উপমা-প্রতীক হয়ে চিরন্তন সৌন্দর্যের আধার হয়েছে কবিতায়। আবেগের মুগ্ধতা না-থাকলে কবিতার জন্ম হতেই পারে না, কবিতার শরীর এবং ভাষা সেই আবেগকে মেধায় জারিত করে প্রকাশ করে। কবিতা লিখতে চাই হৃদয় দিয়ে, মনন থাকুক তার প্রকাশভঙ্গিতে।

একদল সমালোচক ও কবি বলেন যে কবিতা মূলত আত্মজৈবনিক, ব্যক্তিসত্তার প্রকাশ। কবিতার অক্ষর ব্যক্তির অনুভব, দর্শন, সুখ-দুঃখ-আনন্দ-বেদনা  ছাড়া কিছুই নয়। কবিতা কিছুটা নিজের প্রকাশ, কবির আত্মপ্রকাশ মেনে নিলেও এই ধারণা আমার অসম্পূর্ণ মনে হয়েছে। যে কবিতা ব্যক্তিগত অনুভবের গন্ডি ছাড়িয়ে সার্বজনীন অনুভবে উত্তীর্ণ হতে পারে সে কবিতা পাঠককে স্পর্শ করে, তা বেঁচে থাকে। তাই রোমান্টিক বিষন্নতার পরিধি অতিক্রম করার চেষ্টা করি। কবি সময়-রাজনীতি-অস্থিরতা এড়িয়ে থাকতে পারেন না, দরকারে কবিতা  ন্যারেটিভ বা বক্তব্যপ্রধান হতে পারে। তা কতটা আধুনিক বা শিল্পসম্মত হল না-ভাবলেও চলে। নিজের কবিতা এই ভাবনায় বাঁক নিচ্ছে মাঝেসাঝে। এই দু’টি ভাবনা এখন কবিতা লেখার সময় এসে যায়। আমার কাছে কবিতা হল নির্জন গভীর পথে একা চলা,তার কাছ যশ-খ্যাতি এরকম কোনও দাবি রাখি না। নিরুচ্চার অক্ষরযাপন একজন প্রকৃত কবির ধর্ম।এই আমার কবিতা ভাবনা,এই আমার নিভৃত খেয়ালে কবিতার ছোট ভুবন। যথার্থ কবি হয়ে উঠতে পারা এক জীবনভর সাধনা, নিজেকে  আত্মদহনের আগুনে পরিশুদ্ধ করে নিতে হয়। পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয় মোটেই। কবিতার যাত্রা অন্ধকার পেরিয়ে আলোর পথে উত্তরণ, নিরন্তর সত্যের অণ্বেষণ। আজন্ম রোমান্টিক থাকতে না-পারলে কবিতা মরে যায়। জীবনের প্রতিকূলতা ও রুক্ষ বাস্তবতায় রক্তাক্ত হতে-হতে সেই মনটি বাঁচিয়ে রাখতেই হয়। মন শেষপর্যন্ত কবিতার উৎসমুখ। নিভৃত ভুবনের আলোয় শব্দরা বেঁচে থাকুক শাশ্বত সত্য ও রোমান্টকতায়। বেঁচে থাকার আনন্দ ও সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়ার নাম রোমান্টিকতা। কবিতায় যেন তা ফুটিয়ে তুলতে পারি আজীবন,বিশ্বস্ত থাকতে পারি সত্য ও সুন্দরের কাছে। 🚫

স্বনির্বাচিত প্রতিনিধিত্বমূলক একটি কবিতা

শূন্যতার বিরুদ্ধে

শরীরে নষ্টতা বাড়ে, মাঝবয়সে বাড়ে অপ্রাপ্তির নামগান
করোটির অন্ধকারে ওড়ে ছাই,
শেষ হল বুঝি যা কিছু বর্ণময়
গন্তব্য কোথাও নেই জেনে অভ্যেসে দিনযাপন মেনে নেওয়া।
মাথার ভিতর পাসবুকের খোলা পাতা উড়ে যায় খালি
হিসেব গরমিল।
শিমুলের হাহাকার ধুলো ছড়াল চোখে।
এখনই বৈরাগ্যের ধুলোপথে হেঁটে যাব,
অকাল মৃত্যুর সাথে কোলাকুলি সেরে এখনই যাব অস্তরাগে?

এখনো ফিরে পাবার আকাঙ্ক্ষা আগুনের ঘরবাড়ি চায়
ঘুঙুরখোলা জীবনের প্রচ্ছদে এখনো আছে আকাশ অনন্ত।
ঝুঁকে আছি নদীজলে অমোঘ সময় থেকে দূরে
পরিদের আসার মুহুর্ত কখনো ফুরায় না আমার রূপকথায়।

মহাপৃথিবীর স্বাদ নিতে রোগা নদীটির বুকে ভেসে আছি।

সুমন মহান্তির সঙ্গে আড্ডায়
সম্পাদক রাজীব কুমার ঘোষ

ছবি - সাইন্যাপস্‌

    সুমন মহান্তি। কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক। জন্ম ১৯৭০ মেদিনীপুর শহরে। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। নয়ের দশকের মাঝামাঝি থেকে লেখালেখি শুরু। বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিনে গল্প প্রকাশ। গল্প প্রকাশিত হয়েছে দেশ, সানন্দা, এবেলা, নন্দন, ভাষাবন্ধন, তথ্যকেন্দ্র, বর্তমান ও অন্যান্য পত্রিকায়। প্রথম উপন্যাস 'প্রস্তুতিপর্ব' (২০১৪) শারদীয় উনিশ কুড়িতে প্রকাশিত হয়। শখ গান শোনা ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা। প্রকৃতি, ইতিহাস এবং মনস্তত্ত্বে বিশেষ আকর্ষণ লেখাকে অনুপ্রাণিত করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত উপন্যাস 'প্রথম দ্রোহিণী'  পাঠকমহলে বিশেষ সাড়া জাগিয়েছে। চূয়াড় বিদ্রোহ ও রানি শিরোমণিকে নিয়ে রচিত এই উপন্যাসটি।

প্রকাশিত গ্রন্থগুলি

লক্ষণরেখা ।। গল্প সংকলন ।। জ্বলদর্চি।। ২০০২
অপরিচিত ও অন্যান্য গল্প।। গল্প সংকলন।। ২০০৫।। বাকপ্রতিমা
দশটি গল্প ।। গল্প সংকলন ।। পরশপাথর ।। ২০১১
শূন্য সমুদ্র পেরিয়ে।। গল্প সংকলন ।। ২০১৪ ।। এবং মুশায়েরা
প্রস্তুতিপর্ব।। উপন্যাস।। আনন্দ পাবলিশার্স।। ২০১৫ (লেখকের প্রথম উপন্যাস)
আলোছায়ার কথাকলি ।। উপন্যাস ।। আনন্দ পাবলিশার্স ।। ২০১৫
দেশের বাড়ি।। কবিতা সংকলন।। ২০১৮।। সিগনেট প্রেস
জিনকার্ডের প্রজাপতি।। কবিতা সংকলন।। সৃষ্টিসুখ ।। ২০১৮ 
হারিয়ে যেতে যেতে।। উপন্যাস ।। সৃষ্টিসুখ ।। ২০১৯ 
(লেখকের তৃতীয় উপন্যাস। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল প্রয়াগ প্রকাশনি থেকে ২০১৭ সালে।)
রোদের দিকে ।। উপন্যাস ।। আনন্দ পাবলিশার্স ।। ২০১৯
প্রথম দ্রোহিণী ।। ঐতিহাসিক উপন্যাস ।। ধানসিঁড়ি ।। ২০২০