সাইন্যাপস্ গল্প ৭ ।। গৌর বৈরাগীর গল্প |
কথাটা যে মিথ্যে তা কিন্তু নয়। অথচ প্রথম প্রথম লোকের বিশ্বাসই হত না। বিশ্বাস না হবার অবশ্য যথেষ্ট কারণ আছে। রাজামশাইয়ের সঙ্গে কান্না ব্যাপারটা একদমই খাপ খায় না। তিনি রাগী হবেন। এমনকি রেগে আগুন হয়ে থাকবেন। সব সময় গম্ভীর হয়ে থাকাও তার একটা গুণ বলা যায়। হাসতে পারেন। অবশ্য খুব কম। কান্না একদমই নয়। কান্না জিনিসটা হালকা-পলকা। এই জিনিস দুর্বলদের একচেটিয়া। রাজামশায়ের মত শক্ত ধাতের মানুষের কান্না একেবারেই বেমানান। অথচ সেই জিনিসই দখল করেছে তার শরীর আর মন।
ভরতপুরের রাজামশাই এদিকে
খুব বিখ্যাত মানুষ। তার মহানুভবতার কথা দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন প্রজাবৎসল, এমন
দয়াবান রাজা এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। তার বৈভবেরও সীমা-পরিসীমা নেই, অথচ কী সরল
জীবনযাপন। সরল বলেই সাদা রংটি তার বড় পছন্দের। বেশিরভাগ সময়ে তার পরনে সাদা কুর্তা আর চোস্ত পাজামা, সঙ্গে
জরির পাড় বসানো সাদা পাগড়ি। টিভির সামনে বাইট দেন এই পোষাকেই। যখন প্রেস মিট
করেন তখনও ক্যামেরার ফ্ল্যাশের সামনে এই সাদা অর্ডিনারি পোশাক। অর্ডিনারি
হলে কী হবে এর মর্যাদা আলাদা, দামও
আলাদা। এই ড্রেস কোডে তাকে মানায়ও ভালো। রাজামশাই বলতেই সাদা কুর্তা পাজামা, সাদা
দাড়ি-শোভিত এই সুঠাম আর ঋজু মানুষটি। কথা যখন বলেন, বোঝা
যায় তার বুকভর্তি দরদ। দরদ প্রকাশের সঙ্গে সাদা রঙের একটি সম্পর্ক আছে। কিন্তু
শোক প্রকাশের সঙ্গে এই ফিট সাদা পোশাকটি একেবারেই খাপ খায় না। আবার সেই শোক যদি
মৃত্যু সম্পর্কিত হয়
তাহলে সেই পোশাকটি হবে কালো। অবশ্য শুধু মৃত্যু নয়, বন্যা বা
প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষদের অভাবনীয় কষ্টের কথা বলার সময় ফিট সাদা পোশাক
একেবারেই চলবে না। সেই সময় অফ হোয়াইট কালারটি দরকার তার। এসব কারণেই তাঁর
সংগ্রহে দুধ সাদা পোশাক আছে দুশো বাহান্নটি। দুঃখ প্রকাশের জন্য অফ হোয়াইট
ছিয়ানব্বুই-টি। শোক প্রকাশের জন্য কালো পোশাক বাইশটি
থেকে বাড়িয়ে একশো বত্রিশটি করা হয়েছে। এছাড়া তার সংগ্রহে জমকালো রঙিন পোশাকও
আছে বেশ কিছু। আনন্দ-উৎসব, পালা-পার্বণ, কিংবা বৃহৎ কর্মকাণ্ডের উদ্বোধনে যেগুলির
প্রয়োজন। তবে সেগুলি পরার সময় আর সুযোগ হয়ে উঠছে না।
আসলে এখন সুখ কিংবা আনন্দের
ঘটনা ঘটছে কোথায়! প্রতিদিনই দুঃসংবাদ, তাই
রাজামশাই কাঁদছেন।
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বেড টি খেতে খেতে রোজই আশা করেন আজ একটি সুসংবাদ দিয়ে শুরু হবে দিন। ভাবতে ভাবতেই চায়ে চুমুক দেন। এ ব্যাপারে তার কোন বিলাসিতা নেই। চা মানে শুধু লিকার। তাতে দুধ নেই, চিনি নেই। এই জিনিস রাজবাড়ির পাশের গলিতে এতোয়ার নামে যে জুতো সারাইওলা বসে, সেও এক চুমুক মুখে তুলে থু থু করে ছুড়ে ফেলে দেবে। অথচ রাজামশাই অম্লানবদনে কাপে চুমুক দেন। আবার শুধু চুমুক দেওয়াই নয়। তার মুখ থেকে তৃপ্তির ‘আহ’ শব্দটিও বেরিয়ে আসে এই সময়।
কিন্তু
রাজামশাই-এর এমন কপাল এই সামান্য তৃপ্তিও স্থায়ী হয় না বেশিক্ষণ। আজকাল রাজসভা
শুরু হতে না হতেই পরপর দুঃখের খবর আসতে থাকে, আসতেই
থাকে। তার আগে কোনোরকমে ব্রেকফাস্ট-টা শুধু সারতে পারেন তিনি। আয়োজনও অবশ্য তেমন কিছু নয়। ডিম কলা আর টোস্ট।
খুবই সামান্য ব্যবস্থা। তবে ওই যে বলা হলো, আসলে মানুষটি অসামান্য।
তাই বুঝি তার আচরণ আমাদের নিরাপদ মাইতির মত। ওই সামান্য আহারও ভালো করে মুখে তুলতে
পারেন না তিনি। কী করে পারবেন!
গতকাল হঠাৎ করে গভীর
নিম্নচাপ তৈরি হয়ে গেল। আচমকা ঝড় সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। ফাঁকা মাঠে বাজ পড়ে পাঁচ
জন চাষীর মৃত্যু হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে মাঠে জল জমে দশ হাজার বিঘের ফসল তছনছ
হয়ে গেল।
সকালে
ঘুম ভেঙ্গে খবরটি পেয়ে প্রথমে টুইট করলেন রাজামশাই। টুইটারে মৃত মানুষদের জন্য “শোকাচ্ছন্ন” শব্দটি
প্রয়োগ করে তার পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিলেন। জলমগ্ন হয়ে শস্যহানি
হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য “সমবেদনা” জানালেন।
সেদিন
রাজসভায় এসে প্রথমেই ডাকলেন মন্ত্রীকে। ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ তার কাছেই থাকার
কথা। মন্ত্রী যে নোট-টি বাড়িয়ে দিল তাতে লেখা —
👉 ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত সাতাশ জন।
👉 প্রবল বর্ষণে সাতশো বাড়ি জলমগ্ন। তারমধ্যে
শতাধিক কাঁচা বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস।
👉 জমা জল থেকে মহামারী হবার সম্ভাবনা।
তারপর আপনার ওই ‘বজ্জাত রোগ’।
‘বজ্জাত রোগ’?
আজ্ঞে
হ্যাঁ রাজামশাই। যে রোগটা হইহই করে রাজ্যে এসে দাপাচ্ছে। ওই যে অদৃশ্য ভাইরাস, নাক মুখ
দিয়ে ভেতরে ঢুকে এক কাণ্ড ঘটাচ্ছে, সেটা। এমন এক রোগ যার
ওষুধ নেই। রুগী যাচ্ছে হাসপাতালে। সেখানে বেড নেই। ডাক্তার নেই। ওষুধও প্রায় নেই
বললেই চলে। এর ফলে হচ্ছে কি, সংখ্যায়
বেড়ে যাচ্ছে মৃত্যু।
সেনাপতি
বললো, এতে
অবশ্য আপনি কোনো ত্রুটিই রাখছেন না।
তাই?
হ্যাঁ তাই রাজামশাই। সেনাপতি গলা তুলেই
বললো, আপনার
কোন ত্রুটি নেই। যত দুঃখ আর শোকের ঘটনা ঘটছে, যত
মৃত্যুর খবর আসছে, ততই বেড়ে যাচ্ছে আপনার টুইটার। সকালে ঘুম
ভাঙার পর এখন আপনার প্রথম কাজই হলো টুইট করা। রাজসভায় বসার আগে একবার।
দ্বিতীয়বার লাঞ্চ করার আগে টুইটারে সহমর্মিতা প্রকাশ না করে
আপনি লাঞ্চে বসতে পারবেন না। আপনি অভিভাবক, দেশের
জনগণের প্রতি আপনার কর্তব্য আছে। সেই কর্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে আপনি অবিচল।
নাগরিকদের দুঃখ-কষ্টে সমবেদনা প্রকাশ না করে আপনি খাবার মুখে তুলতেই পারেন না।
আসলে এটা একটা লড়াই। মন্ত্রী আস্তে করে
বললো, প্রতিমুহূর্তে
লড়াই করতে হচ্ছে আপনাকে।
কিন্তু এদিকে লড়াইটা ঠিকমতো যে হচ্ছে না
মন্ত্রী।
কেন রাজামশাই?
একই কথা বলতে বলতে বলার ধার কমে যাচ্ছে “সমবেদনায়”
আর তেমন করে “বেদনা” প্রকাশ
করা যাচ্ছেনা “সহমর্মিতা”তেও প্রকাশ
হচ্ছে না “মরমি” ভাব।
শুধু তাই নয়, শোনা
যাচ্ছে বাছাই করা শব্দেরও খুব টানাটানি চলছে। স্টক থেকে ভালো ভালো হৃদয়বিদারক
শব্দ ক্রমশ কমে যাচ্ছে।
এই তো গেল মাসে সাহিত্যিক বনবিতান হাজরা
নিদান দিয়ে গেল। বলল, স্টক শেষ হয়ে যাচ্ছে রাজামশাই।
কীসের স্টক বনবিতান?
বনবিতান বলল শব্দের স্টক। আপনার টুইটারে
এত এত শব্দ খরচ হচ্ছে , এত ভালো ভালো আর দামি শব্দ যে সে
সবের স্টক আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসছে।
রাজামশাই বললেন, কীরকম?
দেখুন আপনার সহানুভূতি স্টক খুব কমে গেছে।
মাত্র একুশটা “সহানুভূতি” পড়ে
আছে। “সহমর্মী”র
অবস্থাও তাই। পড়ে আছে মাত্র দশটা। “সমব্যথী”
আছে তিনটে। ইদানীং মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় “শোকাচ্ছন্ন” আর “শোকসন্তপ্ত” শব্দ দু'টি নিয়ে
খুব টানাটানি চলছে।
মন্ত্রী বলল, খুব চিন্তার
কথা রাজামশাই।
সেনাপতি বলল, চিন্তা
না করে এক্ষুনি ভাবুন স্টক কী করে বাড়ানো যায়।
বনবিতান হাজরা বলল, শব্দ আর
বাড়ানো যাবে বলে মনে হয় না। সহানুভূতি সমব্যথী কিংবা ধরুন শোকাচ্ছন্ন’র মতো শব্দ
বারবার রিপিট না করে সমার্থ শব্দকোষও ঘেঁটে
ফেলা হয়েছে। এবার থামতে হবে আমাদের।
রাজামশাই বললেন, কেন?
বনবিতান বলল, এবার
অন্য কিছু ভাবতে হবে। শুধু কথা দিয়ে আর চিড়ে ভেজানো
আর যাবে না।
রাজামশাই হতাশ গলায় বললেন, তাহলে
উপায়?
মন্ত্রী বলল, উপায়
একটা বার করতেই হবে। আপনি একদিন সময় দিন। আমরা সবাই মিলে ভেবে ভেবে একটা উপায়
বার করবই।
পরেরদিন রাজামশাই বললেন, উপায় কি
বেরুল মন্ত্রী?
মন্ত্রী বলল, আমরা
ভাবছি রাজামশাই। আরও দুটো দিন সময় চাই।
কিন্তু
দুদিনের বেশি আর সময় দিতে পারবো না মন্ত্রী। সমাধান একটা চাই।
সকলের সঙ্গে রাজামশাইও ভাবতে বসলেন।
ভাবতে-ভাবতে মাথার চুল ছিঁড়লেন তিনি। মন্ত্রী মশাই সারারাত পায়চারি
করল। সেনাপতি শুয়ে শুয়ে কড়িকাঠ গুনল। পাত্র মিত্র অমাত্য সকলেরই নির্ঘুম রাত
কাটল।
পরদিন
বেলা করেই রাজসভা বসল। মন্ত্রী এল বেলা বারোটায়। তার চোখ মুখ শুকনো, এক রাতেই চেহারা যেন আধখানা।
তাকে রাজসভায় ওই অবস্থায় দেখে রাজামশাই
বললেন, একটি
উপায় পাওয়া গেছে মনে হচ্ছে।
কী করে বুঝলেন রাজামশাই?
তোমার চেহারা দেখে মন্ত্রী। উপায় বার
করতে তোমার খুব ধকল হয়েছে দেখছি।
তা হয়েছে। একটা মোক্ষম উপায় বার করা যেমন
তেমন কর্ম নয়। এ এমন উপায় যা দিয়ে সবদিক বজায় রাখা যাবে।
কী রকম?
বলছি বলছি। আস্তে শুরু করলো মন্ত্রী।
আপনাকে দিনে অন্তত চারবার কাঁদতে হবে।
তার মানে কান্না?
কান্না হলো শোক প্রকাশের এক মোক্ষম
দাওয়াই। এটাকে আর্টের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারলে, একজন
দুঃখী মানুষের শোকে সান্ত্বনা দেওয়া যায়। দেশের পাবলিক কান্না দেখে ভাবতে পারে, তাদের
দুঃখে রাজামশাইও দুঃখী।
শুধু কেঁদে দুঃখ ভাগ করা যায় মন্ত্রী?
আলবৎ
যায়। তেমন তেমন করে কাঁদতে পারলে মানুষ রাগ ভুলে যাবে, দুঃখ
ভুলে যাবে। এবার থেকে ওইসব টুইটার ফুইটার বাদ দিন। প্রেস মিটে আপনি চোখে জল আনুন, মানে
কাঁদুন।
কাঁদবো?
হ্যাঁ কাঁদবেন। তবে যেমন তেমন কান্না হলে
হবে না।
কান্না কী রকম
হওয়া দরকার। পরিবেশ-পরিস্থিতিটাও যে জরুরি সেটাও ডিটেলে বলে দিল মন্ত্রী।
রাজামশাই সব শুনলেন। শুধু শুনলেন না, কাজও শুরু করে দিলেন। তার মাথায় সাদা শনের মতো ঘাড়ছোঁয়া এক ঢাল চুল, কাজে
লাগল। সঙ্গে একগাল শ্বেতশুভ্র দাড়ি, এটাও
কাজে লাগলো। পরণের সাদা ঢোলা আলখাল্লা। কাঁধে আলগা করে ফেলে রাখা সাদা দোপাট্টা।
তার সঙ্গে সন্ন্যাসীর মতো তার নির্মোহ দৃষ্টিপাত।
চমৎকার ফিট করে গেল।
বাইট
দেবার জন্য মাইকের সামনে কথা শুরু করলেন রাজামশাই। কণ্ঠস্বর খুব মৃদু। শুনলেই মনে
হবে কথা বলতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। ব্যথা জর্জর কন্ঠে শুরু করলেন —
— আজ বড় দুঃখের দিন।
আমাদের দেশে বিপর্যয়ের দিনও বলা যায়। গতকাল দশটি প্রাণ…
এইটুকু বলতে গিয়ে তার গলা কাঁপল। কাঁপতে
দিলেন রাজামশাই। মন্ত্রীর কথামতো আঠাশ সেকেন্ড বিরতি দিয়ে আবার বলতে গেলেন … আজ আমি…
এবার গলাটা রুদ্ধ হয়ে গেল। শুধু গলা নয়
চোখ দুটোও মনে হল ঝাপসা। মনে হলো চোখের কোলে কান্নার ফোঁটা জমছে।
তবে
মন্ত্রী পই পই করে বলে দিয়েছে, চোখের কোলে জমা জলের নাম
অশ্রুবিন্দু। এর ওজন বেশ ভারী। সেই অশ্রু চোখ বেয়ে গালে নামলেই সেটার নাম কান্না।
অশ্রুর তুলনায় কান্নার ওজন বেশ কম। তাই অশ্রুকে কান্না হতে দেবেন না রাজামশাই।
কথাটা মনে ছিল তাই তাড়াহুড়ো না করে, খুব ধীর লয়ে পকেট থেকে রুমাল বার করে, আলতো হাতে চোখে চাপলেন রাজামশাই।
রাজামশাই ভেবেছিলেন চোখে জল আনাটা বেশ শক্ত কাজ। কিন্তু কাজটা শুরু করার পর দেখলেন, ব্যাপারটা মোটেই আর শক্ত মনে হচ্ছে না। ইদানিং প্রায় সব ঘটনার শুরুতেই চোখে জল এনে ফেলছেন তিনি। জলটা যে কান্নার সেটা কাউকে বলে দিতে হচ্ছে না। কান্নাটা যে বেদনার সেটাও জানান দেবার দরকার হচ্ছে না।
এই ছবিটি ছড়িয়ে পড়ছে দিকে দিকে
দেশেবিদেশে। ইতিমধ্যে যারা যারা ভেবে রেখেছিল, দাবি
নিয়ে আওয়াজ তুলতে হবে। তারা তারা দাবি তোলার দিনক্ষণ পেছিয়ে দিল। যারা যারা
ভেবেছিল আজকে একটা হেস্তনেস্ত করতে হবে, তারা দমে
গেল। তারা ভাবল, এমন শোকমগ্ন পরিবেশে এ কাজটা বাড়াবাড়ি
হয়ে যাবে। আর কটা দিন যাক। যারা দিকে দিকে বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল তারা সেটা
অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দিল।
গৌর বৈরাগী |
সত্তরের শেষদিক। শাস্ত্র-বিরোধী আন্দোলনের যুগ। যোগ দিয়েছিলেন বলরাম বসাকের ‘মুক্ত গল্পসভা’য়। গল্পকার বন্ধু হিসাবে পাশে পেয়েছিলেন রমানাথ রায়, শেখর বসু, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, আশিস ঘোষ ও আরো অনেককে। এরপর রাধানাথ মন্ডলের ‘গল্পচক্র’তে যাতায়াত শুরু। এর মধ্যে চন্দননগরে ‘গল্পমেলা’ তৈরি, উদ্দেশ্য ছিল গল্পকারদের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। সবসময় চেয়েছেন নতুন নতুন গল্পকার উঠে আসুক। তিনি গৌর বৈরাগী, যতটা বড়দের লেখক ততটাই ছোটোদের। ছোটোগল্পের সংখ্যা সাতশোর ওপর, অণুগল্প ধরলে সংখ্যাটা হাজারের ওপর। অসামান্য সংগঠক। চল্লিশ বছর পেরোনো চন্দননগর গল্পমেলার স্থপতি। যে গল্পমেলা অতিক্রম করেছে তিনশোটি গল্পপাঠের আসর। প্রতি রবিবার সকালে যার বাড়িতে বসে গল্পের আড্ডা। আড্ডায় কাছে দূরে মিলিয়ে গড়ে উপস্থিত থাকেন পঁচিশ থেকে তিরিশ জন গল্পপাগল লোক। গল্পের সমালোচনায় তিনি কঠিন-কঠোর, এক নির্মম সমালোচক।
4 মন্তব্যসমূহ
খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ এবং অনবদ্য
উত্তরমুছুনরাজামশাইকে কাঁদাতে চাওয়া গল্পটা খুব ভালো লাগলো। প্রচ্ছন্নভাব যে গল্পের পরিসরকে বাড়িয়ে দিতে পারে এ গল্প তার প্রমাণ।
উত্তরমুছুনপুরো গল্পে বেশ রসিয়ে তুলে ধরা হয়েছে রাষ্ট্রের বা ক্ষমতার মূলগত চেহারা। ঝরঝরে লিখন। একটানে পড়িয়ে নিলো।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গৌর বৈরাগী বলেছিলেন, রাজা মশাই কে নিয়ে তিনি যেমন খুশি লিখতে পারেন। এই গল্পটা পড়ে বুঝলাম তিনি মিথ্যা বলেন নি।
উত্তরমুছুনগল্পটা political satire। কিছু দিন আগে এক রাজা মশাই করোনা জন্যে কেঁদে ছিলেন। তিনি প্রেস মিট যদিও করেন না তবে তার কথাই মনে করিয়ে দিলেন লেখক। দারুণ গল্প। চমতকার রচনা।