মণিভূষণ ও মন্টু হারামজাদা
রাজীব কুমার ঘোষ
প্রখ্যাত কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্যের 'মন্টুর জীবন' নামে বিখ্যাত কবিতাটিকে উৎসর্গীকৃত
‘কমলা স্কেল’ ছিল বাস রাস্তার মোড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত কাঁটা ও
বাটখারা বিক্রির দোকান। ডিজিটাল ব্যালেন্সের ঠেলায় বিক্রিবাটা কমতে কমতে দোকানটি
দেহ রাখল করোনাকালে। আর তারপরেই মণিভূষণবাবু আবিষ্কার করলেন তার চেনা দুনিয়া এখন
ওজনহীন। একটিও মুদির দোকান এমনকি রাস্তার বসা সব্জিওয়ালারাও আর দাঁড়ি-পাল্লা, বাটখারা ব্যবহার করে না। সবার কাছে ডিজিটাল ব্যালেন্স। মাল
চাপালেই টুকরো টুকরো লাল বা সবুজ বা অন্য কোনো আলো খেলা করে পলকে গড়ে তোলে কোনো
সংখ্যা যাকে ওরা ওজন বলে। মণিভূষণবাবু একে ওজন হিসাবে মেনে নিতে পারেন না। আসল
ওজনগুলো তিনি আর দেখতে পান না আর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিশেষত হাটবারে। হাটবারে তার
প্রধান কাজ হয়েই দাঁড়ায় কালিপদ-র চায়ের দোকানে বসে কয়েক কাপ চা খাওয়া আর ক্রমাগত
বিড়বিড়ানি, “ওজন হারিয়ে গেছে . . . ওজন হারিয়ে
গেছে।”
পঞ্চায়েত
প্রধান নাথবাবু এই দোকানেই মাস্কের আড়ালে জনসংযোগের পবিত্র কাজটি হাটবারে সেরে
নেন। তিনি মাঝে মাঝেই মজা করে হাঁক ছাড়েন, “ও মণিজ্যাঠা ওজন খুঁজে পেলেন।” হাটের লোকেদের ফ্রি মাস্ক বিলিয়ে তাদের মুখ ঢেকে দিতে ব্যস্ত চ্যালারা খ্যাক্
খ্যাক্ করে হেসে ওঠে। ফার্মেসির মালিক কেশববাবু, সাপ্লায়ার দীনবন্ধু প্রতিবার মাস্কের আড়ালে চা খেতে খেতে একটা ‘চুক্ চুক্’ আওয়াজ ছাড়েন। অধ্যাপক স্যানিটাইজ কাগজের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলেন, ‘সো স্যাড।’
চায়ের দোকানে মন্টু হারামজাদার এই সময় ইচ্ছে করে চায়ের একটা গ্লাস ফেলে দিতে . . . বেশ একটা কাঁচ ভাঙার আওয়াজ। চারিদিকটা একটু চলকে যাবে। মন্টুর ইচ্ছে করে ওজন হয়ে উঠতে। কিন্তু মন্টু জানেনা কীভাবে দিনদুপুরে ওজন হয়ে উঠতে হয়। রাতে মন্টু স্বপ্নে ওজন হয়ে ওঠে, দেখতে পায় দাঁড়িপাল্লার কাঁটা উল্টোদিকে হেলতে শুরু করছে। 🚫
7 মন্তব্যসমূহ
আমিও ওজন হয়ে উঠতে চাই.... আমিও এমন গল্প লিখতে চাই
উত্তরমুছুনভাল
উত্তরমুছুনভাল
উত্তরমুছুনখুব ভালো গল্প। একদম অন্যরকম।
উত্তরমুছুনকত কিছুই তো হতে ইচ্ছে করে মানুষের! ওজন যখন অবধারিতভাবে কম পড়েছে তখন তাও হতে পারার ইচ্ছে মন্টুর / মন্টুদের জাগবেই। খুব ভালো গল্প।
উত্তরমুছুনএমন কিছু গল্প আছে রুপোর মত। বারবার ঘষলে চকচক করে। এই গল্পটি সেরকম। যতবার পড়ি ততবার চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
উত্তরমুছুনগল্পটা প্রতিলিপিতে আগেই পড়েছি,বোধহয় প্রথম হয়েছিল, তখনও খুব ভাল লেগেছিল, আবার পড়লাম,শুধুই মুগ্ধতা।
উত্তরমুছুন