অণুগল্প ৩
ছবি - সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা

মণিভূষণ ও মন্টু হারামজাদা 

রাজীব কুমার ঘোষ

প্রখ্যাত কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্যের 'মন্টুর জীবন' নামে বিখ্যাত কবিতাটিকে উৎসর্গীকৃত


লকডাউনের ধাক্কায় কমলা স্কেলউঠে যাবার পর অশীতিপর মণিভূষণবাবুর খেয়াল হল ব্যাপারটা তিনি বয়স অনুসারে যথেষ্ট সুস্থ এবং সবল ধীরে ধীরে যখন দোকানপাট খোলা শুরু হল তিনি সরেজমিনে
তদন্ত করে দেখলেন, হ্যাঁ, ব্যাপারটা ঠিক ওজন একেবারেই হারিয়ে গেছে এই তল্লাট থেকে।

 ‘কমলা স্কেলছিল বাস রাস্তার মোড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনুমোদিত কাঁটা ও বাটখারা বিক্রির দোকান। ডিজিটাল ব্যালেন্সের ঠেলায় বিক্রিবাটা কমতে কমতে দোকানটি দেহ রাখল করোনাকালে। আর তারপরেই মণিভূষণবাবু আবিষ্কার করলেন তার চেনা দুনিয়া এখন ওজনহীন। একটিও মুদির দোকান এমনকি রাস্তার বসা সব্জিওয়ালারাও আর দাঁড়ি-পাল্লা, বাটখারা ব্যবহার করে না। সবার কাছে ডিজিটাল ব্যালেন্স। মাল চাপালেই টুকরো টুকরো লাল বা সবুজ বা অন্য কোনো আলো খেলা করে পলকে গড়ে তোলে কোনো সংখ্যা যাকে ওরা ওজন বলে। মণিভূষণবাবু একে ওজন হিসাবে মেনে নিতে পারেন না। আসল ওজনগুলো তিনি আর দেখতে পান না আর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন বিশেষত হাটবারে। হাটবারে তার প্রধান কাজ হয়েই দাঁড়ায় কালিপদ-র চায়ের দোকানে বসে কয়েক কাপ চা খাওয়া আর ক্রমাগত বিড়বিড়ানি, “ওজন হারিয়ে গেছে . . . ওজন হারিয়ে গেছে।

পঞ্চায়েত প্রধান নাথবাবু এই দোকানেই মাস্কের আড়ালে জনসংযোগের পবিত্র কাজটি হাটবারে সেরে নেন। তিনি মাঝে মাঝেই মজা করে হাঁক ছাড়েন, “ও মণিজ্যাঠা ওজন খুঁজে পেলেন।হাটের লোকেদের ফ্রি মাস্ক বিলিয়ে তাদের মুখ ঢেকে দিতে ব্যস্ত চ্যালারা খ্যাক্‌ খ্যাক্‌ করে হেসে ওঠে। ফার্মেসির মালিক কেশববাবু, সাপ্লায়ার দীনবন্ধু প্রতিবার মাস্কের আড়ালে চা খেতে খেতে একটা চুক্‌ চুক্‌আওয়াজ ছাড়েন। অধ্যাপক স্যানিটাইজ কাগজের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে বলেন, ‘সো স্যাড।

চায়ের দোকানে মন্টু হারামজাদার এই সময় ইচ্ছে করে চায়ের একটা গ্লাস ফেলে দিতে . . . বেশ একটা কাঁচ ভাঙার আওয়াজ। চারিদিকটা একটু চলকে যাবে। মন্টুর ইচ্ছে করে ওজন হয়ে উঠতে। কিন্তু মন্টু জানেনা কীভাবে দিনদুপুরে ওজন হয়ে উঠতে হয়। রাতে মন্টু স্বপ্নে ওজন হয়ে ওঠে, দেখতে পায় দাঁড়িপাল্লার কাঁটা উল্টোদিকে হেলতে শুরু করছে। 🚫

রাজীব কুমার ঘোষ
ছবি - সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা


    ‘চুঁচুড়ার রাজীব’ মানেই ‘সহদেববাবুর ঘোড়া’, ‘ভীষ্মদেবের মৃত্যুমুহূর্ত’, ‘অনেক জলের শব্দ’, ‘টাওয়ার অফ্ সাইলেন্স’, ‘হিবাকুশার ছেলে’ বা ঘোষ স্যারের গল্পগুলি — বহুচর্চিত, ভিন্নমাত্রার কিছু গল্প। জন্ম ১৯৭৭; পড়াশোনা, বেড়ে ওঠা চুঁচুড়া-হুগলি-চন্দননগর। ১৯৯৭ সাল থেকে লিটল ম্যাগাজিন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নিয়মিত লেখালেখি। সম্পাদিত পত্রিকা ‘সাইন্যাপস্’। আছে বেশ কিছু কবিতার বই। প্রথম গল্প সংকলন ‘ঘর ও দরজার গল্প’। দ্বিতীয় গল্প সংকলন ‘অনেক জলের শব্দ’। গল্পের জন্য বারাসাতের বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ২০১৯ সালের ‘অনন্তকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কার’। অণুগল্পের জন্য ২০১৮ সালে চুঁচুড়ার গল্প সল্পের আটচালার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ‘উৎপল স্মৃতি পুরস্কার’। 
পেশায় বিজ্ঞান শিক্ষক। নেশায় পাঠক। প্রিয় অবকাশ যাপন  পাঁচশো বছরের পুরনো জনপদের অলিগলিতে সময়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরে বেড়ানো।

সাইন্যাপস্‌ পত্রিকা ওয়েবে প্রকাশিত

অন্য অণুগল্পগুলি পড়ার জন্য
ক্লিক করুন 👉  সব অণুগল্প