এই সংখ্যার কবিতাগুচ্ছ ।। তৃষ্ণা বসাকের কবিতা
তৃষ্ণা বসাক ।। ছবি - ফেসবুক থেকে সংগৃহীত |
তৃষ্ণা বসাক, বর্তমান সময়ে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এক কথাসাহিত্যিক। কবিতা দিয়েই যাত্রা শুরু। প্রথম প্রকাশিত কবিতা 'সামগন্ধ রক্তের ভিতরে' যা দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল (১৯৯২)। প্রথম গল্প 'আবার অমল' যা প্রকাশিত হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয়তে (১৯৯৫)। লিখেছেন উপন্যাস, প্রবন্ধ। মৈথিলি অনুবাদে তার নাম উল্লেখযোগ্য। যাদবপুর থেকে এম টেক। সরকারি মুদ্রণ সংস্থায় প্রশাসনিক পদ, উপদেষ্টা বৃত্তি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিদর্শী অধ্যাপনা, সাহিত্য আকাদেমিতে আঞ্চলিক ভাষায় অভিধান প্রকল্পের দায়িত্বভার এবং আরো বহুবিধ কর্ম অভিজ্ঞতা তার কথাসাহিত্যকে পুষ্ট করেছে। বর্তমানে কলকাতা ট্রান্সলেটর্স ফোরামের সচিব।
বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি - পূর্ণেন্দু ভৌমিক স্মৃতি পুরস্কার (২০১২), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ প্রদত্ত ইলা চন্দ স্মৃতি পুরস্কার (২০১৩), পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সোমেন চন্দ স্মারক সম্মান (২০১৮), কারিগর কৃতি সাহিত্যসম্মান (২০১৯), কবি মৃত্যুঞ্জয় সেন স্মৃতি সম্মান (২০২০) এবং নমিতা চট্টোপাধ্যায় সাহিত্য পুরস্কার (২০২০)।
প্রকাশিত গ্রন্থ
উকুন ।। রা প্রকাশন (একটি সিরিজ)
আত্মারামের নতুন খাঁচা।। ধানসিড়ি (কল্পবিজ্ঞান গল্প সংকলন)
মেয়েদের সেকাল, একাল ও চিরকাল।। সোপান (প্রবন্ধ)
প্রযুক্তি ও নারী ।। ধানসিড়ি (প্রবন্ধ)
বাড়িঘর ।। একুশ শতক
ছায়াযাপন ।। একুশ শতক
নির্বাচিত পঁচিশটি গল্প ।। একুশ শতক (গল্প সংকলন)
গোপন ট্যাটু ।। কৃতি (কবিতা সংকলন)
লাইব্রেরি শার্ট খোলো।। কৃতি (কবিতা সংকলন)
ইয়াকুব মামার ভারতবর্ষ (ই-বুক)।। প্রশাখা প্রকাশনি
গল্প ৪৯।। কৃতি (গল্প সংকলন)
অগ্নিবলয় ।। আকাশ, বহরমপুর (উপন্যাস)
অনুপ্রবেশ ।। এবং মুশায়েরা (উপন্যাস)
টেসলার টাওয়ার (প্রকাশিতব্য) ।। তবুও প্রয়াস (উপন্যাস)
সম্পাদিত গ্রন্থ
ভারতীয় কবিতায় নারীর স্বর।। ধানসিড়ি
ভারতীয় কবিতার নারীর স্বর ।। ধানসিড়ি
ধারাবাহিক উপন্যাস 'অজিত সিং বনাম অজিত সিং' প্রকাশিত হয়ে চলেছে আবহমান ডট কমে
একটা নিয়ন্ত্রণহীন পিয়ানোর মতো
আমি একটা নিয়ন্ত্রণহীন পিয়ানোর মতো,
মাঝরাতে একা একাই বেজে উঠছি,
কে বাজাচ্ছে , কেনই বা - এসব প্রশ্ন অবান্তর,
কারণ আমি একা একাই বাজছি, বহু বছর ধরে।
আমার সামনে একটা গরল নীল সমুদ্র,
যার মানে হল ভেসে পড়লেই হয়,
আমি এই সমুদ্রের শুরুতে, খানিকটা অগভীর জলে
নিজেকে স্থাপন করি, হ্যাঁ স্থাপন করি এবং প্রোথিতও,
আসলে আমি সমুদ্রকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছি,
আমি বলতে চাইছি, আমার ভেসে যাওয়ার জন্যে
কোনো সমুদ্রের দরকার নেই,
আমি নিজেই এক যাত্রা এবং গন্তব্য,
কারণ আমার মধ্যে আছে সুর,
আমার নিজস্ব একটি স্বরও আছে, এবং আছে ভাষা,
যদিও অনেকে বলে, আমি বাতাসের ভাষায় কথা বলি,
এবং কথা বলার জন্যে অপেক্ষার করি
বেহালার ছড়ের মতো আঙুলের,
কিন্তু যেহেতু অত বেদনা আমাকে মানায় না,
আমি আঙ্গুলগুলো মাপ মতো কেটে নি,
যেমন ভাবে লোকে প্রস্তুত রাখে খাগের কলম,
মুখটা ছুঁচোলো, যাতে ইচ্ছেমত
অক্ষর ফুটিয়ে তোলা যায়,
আমিও অক্ষর ফুটিয়ে তুলি বালির ওপর,
যারা স্নান করবে বলে এখানে রেখে গেছে
আঙ্গুরের গুচ্ছওলা হাওয়াই চটি, রামধনু রোদচশমা,
এবং একটি ঢেউ সম্পর্কিত বই,
তাদের পাহারা দ্যায় আমার অক্ষর,
অনুগত কুকুরের মতো,
যারা স্নানে গেছে, যারা ভেসে গেছে,
যারা ফিরবে না কোনদিন,
সবাইকে বাজাই আমি একা একা,
এক অচেনা সমুদ্র শহরে।
অগ্নিবলয় ঘিরে
এসবই নিজের কাছে বসে থাকা,
হাত বাড়ালেই আমি ছুঁতে পারি,
তবুও সে হাত আমি জমিয়ে রেখেছি,
হাতের বিচিত্র মুদ্রা
একটাও খরচ করিনি,
আলো আঁধারিতে শুধু দেওয়ালের গায়
দ্যাখো ঐ ছুটে যায় চকিত হরিণ,
আলোকচলন করে সমবেত পাতা,
এসবই নিজের কাছে -
অগ্নিবলয় ঘিরে বসে থাকা,
বসে আছি আমরা পাঁচজন . . .
প্রত্যেকের তরবারি
কমলা আভায়
স্বপ্নাদেশ বলে মনে হয়
হাত বাড়ালেই আমরা হতে পারি,
তবুও সে হাতগুলি জমিয়ে রেখেছি . . .
বিদেশ বিভুঁই
নিজের বিভুঁইয়ে ঘুরি,
ট্রেন বহুক্ষণ ছেড়ে গেছে।
এখানে কেউই নেই, কেউ নেই
ষাট পয়সা গুনে দিলে
নোংরা লতাপাতা কাপে চা আনবে,
জিভের ডগায় সেই স্বাদ সুড়সুড়ি কাটে,
প্লাটফরম দেখা যায়,
জানলা খুলে সোনাঝুরি, পলাশের ছুট
দুপুর ভরে দিচ্ছে মুগ্ধ করপুট,
তামার পয়সার মতো বৃষ্টি পড়ে,
ধুলো নষ্ট মাঠ
বিলি বিনিময় ফের শুরু হয় বিদেশ বিভুঁইয়ে!
ওর জন্যে লাল-নীল বল
শুরু করো এইবার
যা যা শুরু হয়নি এখনো,
ভালোবেসে ছুঁয়ে দেখো
কচি নিমপাতাটির শিরা
হেঁটে এসো, দেখে এসো
সোজা ওর বুকের ভেতর
জেনে নাও রক্তলতা
কোথায় ও কীরকম আছে . . .
এসব তো ওরই জন্যে
ওর জন্যে নতুন বাগান,
রোজ ভোরে ঝাড়াপোঁছা,
স্বাস্থ্যবিধি, আকাশবদল,
ওর জন্যে শুরু করা।
ওর পায়ে বিকেলের মাঠ,
কাদামাটি ভেঙে আসা
ওর জন্যে লাল নীল বল।
রফিকুল কবিতা পড়ছেন
রফিকুল কবিতা পড়ছেন
হারিকেনটাকে বাঁহাতে একটু উশকে দিয়ে
বইটাকে সামনে ধরে
কবিতা পড়ছেন রফিকুল,
আমি দেখছি
দেওয়ালে আমাদের ছায়াগুলো
কীরকম ভৌতিক দেখাচ্ছে . . .
-----------------------------------------------------
5 মন্তব্যসমূহ
আশ্চর্য কবিতা গুচ্ছ! ছত্রে ছত্রে কবির নিজস্বতা বহন করছে। আলাদা করে ভালো লাগল প্রথমটি।
উত্তরমুছুননিজের বিভুঁইয়ে ঘুরি!!!
উত্তরমুছুনআমি আঙুলগুলো মাপ মতো কেটে নিই
উত্তরমুছুন"তবুও সে হাত আমি জমিয়ে রেখেছি"__অথবা নিজের হাত,চলে যাচ্ছে হাতের বাইরে...
উত্তরমুছুনঅপূর্ব লাগল প্রত্যেক কটাই।
উত্তরমুছুন