একঃ কিপিং বিহাইন্ড দ্যা এনিমি লাইন
সাঁৎ করে অফ স্টাম্পের একটু বাইরে পড়ে আলতো বাঁক নিয়ে গ্লভসে জমা পড়লো সাদা বলটা . . . ফ্রন্টফুটে থাকা নিধি লাইন মিস করল কিন্তু কপাল জোরে বেঁচে গেল . . . নইলে অবধারিত কিপারের গ্লভসে, নাহয় ছোট্ট এজ নিয়ে ফার্স্ট স্লিপে . . . ফিরে যেতে হতো ডাগাউটে।
“কী! এবার চুপ কেন? এতক্ষণ তো দিব্যি সব কথাই উড়িয়ে দিচ্ছিলে . . .” বেশ একটা ‘কেমন দিলাম’ ভাব ফুটে উঠলো যেন বাপ্পার গলায়।
নিধিও দমবার পাত্র নয়, এরকম পাওয়ার প্লের সময় দুচার বার লাইন মিস হতেই পারে . . . তা বলে সামনের পায়ে খেলা বন্ধ করা যায় না . . .
“ তুমি তোমার মতো ভেবে নাও যা ইচ্ছে . . . কথা হচ্ছিল তোমার অফিস ট্যুরে যাওয়ার ফ্রিকোয়েন্সি নিয়ে . . . তুমি চলে এলে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে . . . পারো মাইরি !”
নাঃ . . . নিধিকে স্টেপ আউট করতে দেওয়া যাবে না। বাপ্পা হাড়ে হাড়ে চেনে নিধিকে! . . . একটা দুটো বল ডিফেন্স করল মানে এবার আচমকা ক্রীজ ছেড়ে বেরবে . . . স্কুপ করবে গ্যলারীতে, টাইমিং চিরকালই দারুন নিধির! বাপ্পাও নাছোড়, জোরে বলে বাইয়ের ঝুঁকি নিয়েও স্টাম্পের গা ঘেঁসে দাঁড়ায়, যাতে নিধি স্টেপ আউট করার আগে দুবার ভাবে . . . মিস করলেই স্টাম্প উড়িয়ে দেবে বাপ্পা! আর কে না জানে স্টাম্প আউট বেশ লজ্জাজনক।
“কেন! ব্যাপারটা মুল বিষয়ে একই রকম নয় বলতে চাইছো?”
“নয়ই তো! একটা আউট ডোর, একটা ইনডোর . . . একটা ভিসিবল আর একটা . . . কিন্তু তুমি এত ইরিটেট হচ্ছো কেন? . . . আমি তো তোমার ট্যুর নিয়ে কটা নির্বিষ প্রশ্ন করেছি!”
“শোনো ও সব ইনডোর-আউটডোরের ফান্ডা ঝেড়ে লাভ নেই . . . ওটার একটা দেশী বাংলা আছে জানো তো! ঘোমটার নিচে ইয়ে . . . ”
“হোয়াট!! . . . কী মিন করছো? সোজা সাপ্টা বলো . . .” . . . নিধি সাহস নিয়েই ক্রীজের লাইনে এসে দাঁড়ালো, নতুন ওভার শুরু হচ্ছে . . . গুগলি পড়লেই আড়া চালাবে, যা হয় হবে . . .
বাপ্পা উইকেটের পিছনে বসে পড়ে, হাঁটু মুড়ে ওঁত পেতে . . . এতক্ষন স্টাম্প আউটের আশায় সোজা দাঁড়িয়ে ছিলো। প্রথম এক দু বল পরেই একটা স্ট্রেটার আসবে ও জানে, উকেটের সামনে নিধির পা পেয়ে যাবে . . . বাপ্পা জানে কারন ওই তো বোলারও ওদের এই ধুন্ধুমার T-20 ম্যাচে!
“কিছুই মিন করিনি . . . করব মনে করলে ঘরে বসেও অনেক কিছু করা যায় . . . এই আর কী।”
বাপ্পা ইচ্ছে করেই হাল্কা চালে . . . নিধিও সামনের পায়ে গিয়ে টার্নের ফণার উপর ব্যাট নিয়ে গিয়ে পিচে চেপে দিয়ে নির্বিষ করে দেয় . . .
“না আমি ভাবলাম . . . এনি ওয়ে এরপর ট্যুরে যাওয়ার আগে সঠিক ডেট জানিও, আমিও কিছু প্ল্যানিং করে রাখবো।”
উইকেটের পিছনে বাপ্পা স্টাম্পিং শ্যাডো করছে . . . এটা কিপারের অভ্যাস, ব্যাটসম্যানও যেমন করে থাকে আরকি . . .
এমন সময় নিধির খোলা ল্যাপে পিং ভেসে ওঠে . . . সেই মুহুর্তে বাপ্পার মোবাইলে একটা মধুর জানান দিয়ে এস এম এস ঢোকে . . . দুজনেই আলতো চমকে ওঠে, এবং একটা হাল্কা বিরক্তি দেখিয়ে দুজনে দুজনার যন্ত্রের দিকে এগিয়ে যায়। বাপ্পা তার মোবাইল নিয়ে ব্যালকনীতে চলে যায়, নিধি উবু হয়ে শুয়ে মসৃন আঙ্গুল চালাতে থাকে কিবোর্ডের উপর। আপাতত খেলা বন্ধ . . .
. . . স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউট।
দুইঃ কিপিং ইন দ্যা হোম ফ্রন্ট
মাজা ধরে এসেছে, বরং বেঁকে এসছে বলা ভালো অজিত সরখেলের। সেই মাঝ কলেজ থেকেই এক নাগাড়ে মাজা ভেঙে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সাংসারিক পিচের প্রান্তে। যে বলই আসুক না কেন উইকেটের পিছনে যে উনিই! বল মিস করা যাবে না, ক্যাচ মিস করা যাবে না . . . কখনও কখনও মিড উইকেটের উপর মেঘ জমেছে, ফাইন গেল হয়ে একটা ত্যারছা বাতাস বয়ে গেছে পিচ বরাবর। অজিত সরখেল অটল, উঠেছেন –বসেছেন প্রয়োজন মতো। নতুন ব্যাটসম্যান এসছেন ছোট জামাই, মাঝে মধ্যেই ছটফট করছেন ক্রীজের মধ্যে, সপাটে পায়ে খেললেন জামাই বাহাদুর . . . এল বির তীব্র আবেদন করলেন সরখেল মশাই . . . কে কার কথা শোনে! . . . ধর্মাবতার আম্পায়ার যে স্বয়ং সহধর্মীনি! তাঁর আবার ছোট জামাই বড্ড স্নেহের! সাত কেন! সতেরো খুনও মাফ! এদিকে জামাই বাবাজি ব্যাবসায় লাগবে বলে লাখ খানেক নিয়ে বেমালুম হজম করে দিয়েছে। উইকেটের পিছনে দাঁড়িয়ে সাধ্যমতো ফিসফিসিয়ে স্লেজিং করে গেছেন, বেশী করেল আবার লেগ আম্পায়ারের কানে যাওয়ার সম্ভাবনা! লেগ আম্পায়ার মানে আদরের কনিষ্ঠা কন্যা।
সংসারের চার দেওয়ালের কোনে কোনে জমে থাকা ঝুলের ঝুলঝাড়ু হয়ে বাঁচতে বাঁচতে ঝুলঝাড়া হয়ে সরখেল মশাই এখন মাঝে মধ্যেই আপন খেয়ালে ভাবতে থাকেন ইচ্ছাকৃত রিটায়ার হার্ট হয়ে মাঠের বাইরে চলে যাবেন কিনা! কিন্তু কিপারের সেই সুযোগ যে কম হয় না এমন নয়, কিন্তু তার জন্য তো একটা বিশ্বাসযোগ্য প্লে এক্টিংয়ের বন্দোবস্ত চাই!
“হাউজ দ্যাট” বলে উল্লাস বা বল আকাশে ছুঁড়ে চরম আনন্দে লাফালাফি সে অনেক অনেকদিন হলো, আজকাল কেমন যেন ঝিমিয়ে গেছেন সরখেল মশাই, মাঝে মাঝে বল ধরে এক হাত তুলে মৃদু আবেদন ছাড়া আর কিছু করতে ইচ্ছেই করে না! . . . ‘আমি’ ‘আমার’ ট্যাগ লাইনগুলো বাসি খবরের কাগজের সঙ্গে চলে গেছে সিঁড়ির নিচে। এখন আধার কার্ডের হিসেবে পারিবারিক মাথাগোনা হিসেবে একটা মাথা মাত্র। কর্মের অনুপাতে কর্তা!
ঐ আবার বোলার রান আপ শুরু করেছে। সরখেল মশাই একবার অভ্যাস মতো ফিল্ড সেট আপে চোখ বুলিয়ে নেন। সবাই নিজের নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে একটু আধটু নড়াচড়া করছে, নইলে পা জমে যাবে যে! বোলার এগিয়ে আসছে, ব্যাটসম্যান এবারে বড় জামাই . . . বড় মেয়ে ন মাসের পোয়াতি . . . যথারীতি ডেলিভারি টু অন্নপ্রাশনের আগে অবধি ব্যাগেজ সরখেল মশাইয়ের কাঁধেই! এটাই নাকি রেওয়াজ, শুধু ছ’মাসের পুষ্ট সন্তানের মালিকানাটা তার বাপের! . . . বোলার গায়নকলজিস্ট ডাঃ তপোধর জানা ধেয়ে এসে হাই আর্ম একশানে বল রিলিজ করলেন . . . অনেক জোরে বোলারই ডেলিভারির মুহুর্তে এক এক রকম শব্দ বের করে মুখে . . . এমনিতেই বোলিং এন্ডে যাওয়ার সময়ে ইশারায় ‘কর্ড এরাউন্ড’ বলে গেছিলেন . . . এবার গাঁক করে বেরিয়ে এলো ‘সিজার’ শব্দটা . . . বল ছাড়া দেখে অভিজ্ঞ কিপার সরখেল বাবু বুঝতে পারলেন এ নির্ঘাৎ শর্টপিচ পড়বে! . . . বল গোঁত্তা খেয়ে ধেয়ে এলো বড় জামাইয়ের দিকে, গোঁয়ার গোছের জামাই বেশ জোরে ব্যাট হাঁকড়ালো . . . ব্যাটের ইনার এজে লেগে বল আচমকা গতি বদলে সপাটে সরখেলবাবুর হেলমেটের ফাঁক দিয়ে কপালে গিয়ে লাগল বল থেকে চোখ সরিয়ে নেওয়ায়। সরখেলবাবু মাটিতে . . . বাঁ চোখের ভ্রুরর উপর ফেটেছে . . . সংজ্ঞা না হারালেও সংজ্ঞাহীন পড়ে রইলেন সরখেল মশাই। কিছুই শুনতে পারছেননা এমন নয় কিন্তু আবহে একটা চিঁইইইই . . . শব্দ ভেসে রয়েছে ।হঠাৎ মাথায় বিদুৎ খেলে গেল! চোখ বন্ধ করে ফেললেন . . . জামাই ছুটে এসছে, আম্পায়ার গিন্নি ছুটে এসছে . . . স্ট্রেচার . . . নাঃ এ সুযোগ ছাড়া যাবে না!
অজিত সরখেল স্ট্রেচারে করে মাঠের বাইরে . . . উইকেটের পিছনে আধা ক্যাঁচড়া উইকেট কিপার এতক্ষণের স্লিপ ফিল্ডার একমাত্র ছেলে অনি মুখ ব্যাজার করে এসে দাঁড়িয়েছে অগত্যা . . .
জীবনের সেরা প্লে এক্টিং করে গেলেন অজিত সরখেল।
. . . অজিত সরখেল এখন অফিসিয়ালি ‘রিটায়ার্ড হার্ট’। 🚫
5 মন্তব্যসমূহ
গল্পের লিটল মাস্টার। সব বল স্ট্রেট ড্রাইভে ক্রিজের বাইরে
উত্তরমুছুনদারুণ গল্প ইন্দ্রনীল। ক্রিকেটারদের দেখতেও পেলাম।
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুনঅসাধারণ
উত্তরমুছুন