পিছাবনী / মৌসুমী ঘোষ
কোনো নারী নিজের মতো করে বেঁচে থাকার মানে কি সেই নারী স্বাধীন?
তবে কেন বলা হয়, কোনো নারী একা থাকা নিরাপদ নয়?
কোনো মেয়ের হত্যা বা আত্মহত্যার পর যখন খবরে বলা
হয়,
মেয়ের বাড়ির আত্মীয়রা জানিয়েছে — অনেকদিন ধরেই শ্বশুরবাড়িতে
পণের জন্য অত্যাচার করত। তখন প্রশ্ন উঠে আসে, অত্যাচার করত জানা সত্ত্বেও কেন মেয়েটিকে
সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয় নি। সুতরাং এ দায় সমগ্র সমাজের ওপরই বর্তায়।
অন্যদিকে মেয়েদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত যেসব সমস্যা মাঝে মাঝেই ঝড় তুলছে তা আদৌ
মেয়েদের একার সমস্যা নয়, সমগ্র সমাজের
সমস্যা সেটা আগে বুঝুক সমাজ।
পুরুষদের পারঙ্গমতা নিয়ে কখনো কোনো সংশয় ছিল না বলেই আজও প্রতি ক্ষেত্রে লেখা হয়, প্রথম ‘মহিলা’ অমুক, প্রথম ‘মহিলা’ তমুক...
এখনও মেধাভিত্তিক খেলা দাবায়, ‘মেয়ে’ বনাম ‘মেয়ে’, শিক্ষালয়ে মেয়েদের
মধ্যে প্রথম, এইভাবে পারঙ্গমতা বিচার হয়।
মেয়েরা তো ঘরে বাইরে সর্বদাই এক্টিভ ছিল, আছেও (এক্ট কথাটি অধিক কায়িক পরিশ্রম অর্থে না যেকোন কাজ অর্থে বোঝায় সেটা কাজের ধরণ অনুযায়ী আলোচনা হবে)। আবার যখন মেয়েরা সক্রিয় আন্দোলন করেন হয়ে যান এক্টিভিস্ট ‘উইমেন’। চিপকো আন্দোলনে যেসব মেয়েরা গাছের গুঁড়ি জড়িয়ে ধরে পরিবেশ রক্ষা করেছিলেন, এইসব মেয়েরা কিন্তু গৃহবধূই ছিলেন। এরা আবার আন্দোলনকারী বা এক্টিভিস্টও।
সুতরাং মেয়েদের ঘরে বাইরে আগের থেকে বেশি এক্টিভ
হয়ে ওঠার জন্য যারা উদ্বিগ্ন হচ্ছেন তাদের উদ্বিগ্নতার কোনো কারণ নেই (আগের থেকে
অধিক লেখিকা রাজ করছেন লেখার জগতে, প্রকাশনার জগতে, সেই কথা ভেবে 'হায় হায়' করারও কিছু নেই)।
বদলাতে হলে মেয়েদের সংখ্যা বা মুভমেন্ট বা পোশাক নয় সমগ্র সমাজের মানসিকতাটাই বদলাতে হবে। মেয়ে জন্মানোর আগেই ভ্রূণ হত্যা নয় — এই স্লোগান, নারীদের দৃষ্টিকোণ দিয়ে না দেখে নিরপেক্ষ ভাবে অবলোকন করা প্রয়োজন। সুতরাং আন্দোলন টিপ পরা বা না পরার জন্য নয়। আন্দোলন হোক বৃহত্তর ক্ষেত্রে।
মাত্র সাতাত্তর বছর আগে ভারতছাড়ো আন্দোলনে ইংরেজ পুলিশ সুপারের “stop” এবং “go back” ঘোষণা শুনে মাতঙ্গিনী হাজরা এটুকু বুঝেছিলেন যে সাহেব তাঁদের পিছিয়ে যেতে বলছে। তাই দুহাতে গুলি লাগা অবস্থাতেও তেরঙ্গা ধরে চীৎকার করে বলেছিলেন “বন্দেমাতরম”। ইংরেজ পুলিশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে স্থানীয় ভাষায় বলেছিলেন, ‘পিছাবনী’। যার অর্থ, পিছিয়ে যাবো না । মাতঙ্গিনী হাজরার মুখের এই শেষ উক্তি অনুসারে গ্রামের লোকেরা তাদের গ্রামের নাম বদলে রাখেন “পিছাবনী”।
নারীদের এই এগিয়ে আসার লড়াইকে কেন সীমায়িত করা হবে কেবল মেয়েদের লড়াই বলে? আজকের মেয়েরা মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলেছে অর্ধেক নয় সম্পূর্ণের লক্ষ্যে। সারা পৃথিবীটা যখন বাজার ছাড়া আর কিছু নয় তখন ধর্মের মতো, জাতের মতো, ভাষার মতো, লিঙ্গপরিচয়কেও আলাদা ভাবে প্রাধান্য দেওয়া নিজেদের ধ্বংসকে এগিয়ে আনা, বাজার রাজনীতিকদের খেলা শুরুর আগেই জিতিয়ে দেওয়া। আসুন লিঙ্গ, জাত, ধর্ম, ভাষার প্রভেদ ভুলে আরো বেঁধে বেঁধে থাকি।
📌 ০৪.০৫.২০২২
![]() |
মূল সূচিতে যেতে এখানে ক্লিক করতে হবে |
মৌসুমী ঘোষ
3 মন্তব্যসমূহ
খুব ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনখুব ভাল লিখেছ
উত্তরমুছুনবা সুন্দর ভাবনা। আমিও এই কথা অনেকদিন বলছি। কিন্তু প্রধান বাধা মেয়েরা। তারাই বেশি করে মেয়েদের পিছন থেকে টেনে ধরে। শাশুড়ী তার মেয়েকে বলে আমার মত জামাইকে বশ করবি। আবার ছেলেকে বলে বউ র ভেড়ুয়া। আবার অত্যচারিতা মেয়েকে মা উপদেষ দেন , মেয়েদের মানিয়ে নিতে হয়। আমি জানি ছেলে ও তার বাবা পণ বিরোধী ছিল। মা বিয়ে বয়কটের হুমকি দেয়। পরে পিছু হটতে মা বাধ্য হয়। মেয়েদের একমাত্র মেয়ে রাই স্বাধীনতা দিতে পারে
উত্তরমুছুন