কবিতার পাতা ।। ওয়েব সংখ্যা ৪ 


সূচি
পর পর পড়ুন অথবা যার কবিতা পড়তে চান তার নামে ক্লিক করুন



ভূতনাথের খেলা
তৃষ্ণা বসাক
 

যেমতি শব জাগে একাকী শ্মশানে,
যেমতি লাশ ভেসে চলেছে গঙ্গায়,
তেমতি আগুন স্পর্শ দিবা অবসানে
তেমতি বিস্ফার হই, উড়ি তিরঙ্গায়

 

এ দেশ মন্ত্র জানে প্রেত জাগানোর,
এ মাটি মন্ত্রে পূতঃ, ধরে রক্তবীজ,
এ কুম্ভ ভাঙলে বন্ধ দক্ষিণের দোর,
এখানে মনুস্মৃতি খারিজ, খারিজ!

 

আমরা ভাসছি দেখো পতিতপাবনী
আসমুদ্রহিমাচল, আর নেই বেলা -
ভাসে পাপ, ভাসে তাপ, ভাসে প্রেতযোনি,
এবার ভূতনাথ  তোর শুরু কর খেলা!


লাশ
গৌরাঙ্গ দাস

বেদনাবোধ নিয়ে চেনা শব্দগুলো, এগিয়ে যাচ্ছে 
রাজধানীর দিকে, 
রাজাকে কিছু বলবেন - বেওয়ারিশ লাশ 
   জাতপাত নির্বিশেষে গঙ্গায় ভাসা লাশ 
রাজাকে কিছু বলবেন - চিতার আগুন 
   আগুনের হলকা আর মাংস পোড়া গন্ধ 

 

রাজা ঘরে আছো, প্রাসাদে?
ময়ূরের সঙ্গে খেলছ বুঝি?
দানার শব্দ, খাওয়াচ্ছ বুঝি? 
রাজা তোমার পোষাকে দাগ, যদিও - 
দম্ভ বলে - টেরাকোটার কারুকাজ

 

রাজা তোমার চারপাশে - দাঁড়িয়ে আছে লাশ 
                  ক্ষুধার্থ লাশ, রোগাক্রান্ত লাশ 
                                 গনতন্ত্রের লাশ।


একটা ঠিক ঠাক নিরপেক্ষ কবিতা দেবেন
রাজীব কুমার ঘোষ

একটা ঠিকঠাক নিরপেক্ষ কবিতা দেবেন।

আপনার কবিতার গায়ে যেন 
কোনো রক্ত না লেগে থাকে
অথবা কোনো বিপজ্জনক রূপক।

আপনি নিশ্চয়ই মানবেন

কাব্যের কাজ সত্যকে সুন্দরের চেহারা দেওয়া?
রক্ত-স্বেদ নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করবেন না।

আপনার কবিতা যেন

কোনো রাষ্ট্রদ্রোহের কথা না বলে
অথবা হয়ে ওঠে রুলিং পার্টির পক্ষে অহিত।

আপনি নিশ্চয়ই মানবেন 
হিতকে মনোহারী করাই কাব্যের লক্ষ্য?
কৃষিবিল বা বিলগ্নীকরণ নিয়ে মাথা ঘামাবেন না।

আপনার কবিতা

কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের পায়ে পায়ে হাঁটছে
অথবা বসে আছে সব হারানোদের মাঝে?

আপনার কবিতায় ফুল ফুটুক 
     এসে বসুক পাখি,
        প্রজাপতি হয়ে বসুক অলংকার।
বিভাব, অনুভাব আর সঞ্চারীতে 
       লৌকিক ছাড়িয়ে মায়াজগৎ
       সৃষ্টিতে হয়ে উঠুন পারঙ্গম।


আপনি নিশ্চয়ই মানবেন 
পাঠককে কাব্যপাঠের আনন্দ দেওয়াই
কবিতার লক্ষ্য, আর কিছুই নয়?

আপনি নিশ্চয়ই মানবেন

    আপনি নিশ্চয়ই মানছেন
       আপনি নিশ্চয়ই লিখবেন . . .

একটা ঠিকঠাক নিরপেক্ষ কবিতা লিখবেন। 

 

👉সূচি

শুধু বসে থাকা
তথাগত মৌলিক 

যেভাবে ময়দানব
জঙ্গল কেটে ইন্দ্রপ্রস্থ 
গড়ার বরাত পেয়েছিল
ঠিক সেই ভাবেই যেন
শিকড় সমেত উপড়ে ফেলা হচ্ছে
লাখোলাখো মানুষের জীবন-জীবিকা
পৃথিবীটা কার বাপের? 

মাঝেমাঝে সীমান্তের কাঁটাতারেরা

খেলায় মাতে
দুদিক থেকেই ছুটে আসে
বারুদের ঘ্রাণ 
মেঘের আড়াল থেকে
দূরবীন লাগিয়ে নজর রাখছে কেউ
অর্থনীতির ভগ্নস্বাস্থ্য
নিম্নগামী উন্নয়নের সূচক 
তবু প্রেস বিবৃতি দিয়ে
দুনীতিগ্রস্থ নেতা জানান
"সব ঠিক আছে"
অতএব মেনে নিতে হবে সবকিছু

 

সুদীপ্ত বল -
কীভাবে কে ঠেকাবে সভ্যতার 
এই অধঃপতন ? 
আমাদের শুধু বসে থাকা
হাঁটু গেড়ে? 
যদি কিছু অলৌকিক ঘটে কখনও!!


গয়নাবড়ি
বিকাশ শীল


আমাকে বি পি এল তালিকায় আর রাখবেন না
সংরক্ষণে থেকে থেকে আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে ...
বি পি এল সহ্য হচ্ছে না, স্যর!

আমাকে   সাধারণ মানুষ
            সাধারণ দোকানী
            সাধারণ মাস্টার
            সাধারণ নারী
            সাধারণ মোবাইলপ্রেমি পর্যন্ত
ছিঃ ছিঃ করছে - ছোট জাত গরিব উদো
            পাউচখোর বলে টুস্‌কি দিচ্ছে

আমাকে প্রথম সারিতে তুলে দিন, স্যর!

সত্যি বলছি,
পরণের হাঁটু-ছেঁড়া প্যান্টটি মল থেকে ঝেড়েছি
শীতকালীন পঞ্চাশ শতাংশ ছাড়টা নিইনি।
আর এই যে কাশ্মিরী শালটা দ্যাখছেন এটা ওঁনারা
            পজাতন্তের দিন দিয়েছেন,
সঙ্গে প্যাকেটে আপেল, কলা, কমলা ও ঠান্ডা সিঙারা

আজ্ঞে! যাদুঘরের ভিতরে নয়,
যাদুঘরের বাইরে এদিকের কোণটায় ৩ নং পলিথিনে থাকি -
ওখানে নন্দ দুলাল কইলেই হবে ...

আমাকে সবাই চিনে!


গ্রাউন্ড  জিরো
জগদীশ শর্মা 

আমরা নিজস্ব ঈশ্বরকে হারিয়ে দিয়েছি
ঐ তিনি ফ্যা ফ্যা

আমরা  সহজ সরল মানুষকেও হারিয়ে দিয়েছি
ঐ তিনি অকারণে চুপ 

আমরা শয়তানকে করেছি বরণ 
মালায় ও উত্তাপে
হই হুল্লোড় 
হেঁটেছি বিজয় মিছিলে

আমাদের  আগামী প্রজন্ম  তবে
রাক্ষস খোক্কশ 

থাকুক 
তরবারি ও রক্তে আবহমান।



আপনার মতামত নিচে 
'আপনার মন্তব্য লিখুন' শীর্ষক বক্সে লিখে 
আমাদের জানান। 
লিটল ম্যাগাজিন বেঁচে থাকে 
পাঠকদের মতামতে। 🙏