অমিত মজুমদারের কবিতাগুচ্ছ

 

কূটনীতি

একটা কবিতা দুই ঘর এগিয়ে দাও
             একটা পিছিয়ে দাও তিন ঘর

তোমার হাতে মোটে এক ফর্মা তার মধ্যে 
                  কয়েক পাতা তোমার নয়
তাহলে তুমি পাচ্ছো সাকুল্যে বারোটা কবিতা
সামনে বিস্তীর্ণ ভুমিচাইলেই যতদূর খুশি 
                  এগিয়ে দিতে পারো না।
 
বেশী এগিয়ে দিলে তারা নাগালের বাইরে চলে যাবে
এক ঢোকে পেয়ে যাবে স্বাধীনতার স্বাদ
তখন তারা দলবদ্ধ শিকারীর মধ্যে
যে নিজের বর্শার যাকেই গাঁথতে পারবে 
                      সেই কবিতা তার দাসত্বে।
 
তোমার পেছনেও বিস্তীর্ণ ভূমি,
চাইলে পিছিয়েও দিতে পারো 
                    কূটনৈতিক কৌশল দেখাতে
কিন্তু পেছোতে গিয়ে প্রতিটা শব্দ 
            কলমের মধ্যে দিয়ে মাথায় তুলো না
 
কেউ মাথায় উঠলে তাকে ঝেড়ে ফেলা 
                       খুব সহজ ব্যাপার নয়।
 

প্রাক্তন প্রেমিকাগুচ্ছ

 
যে মানুষটা দরজায় কান রেখে বলে দেয় 
                              ঘরের উষ্ণতা
তাকে লেখচিত্রে দু চার পা হাঁটা শেখানো মানে
জানালায় রোদ আনতে 
               বর্ষা ফুরোনোর মতো ব্যাপার।
 
এবার বলো, কান রেখে সে কী কী শুনতে পেয়েছিল?
মেঘাচ্ছন্ন দেয়ালে মসৃণ হোসপাইপ তাক করলে
মেঘে জলে সাময়িক বিরতি নেয় নির্লোভ কারুবাসনা
 
কিছু সিদ্ধান্ত চৌকাঠের দু'পাশে 
                         ব্যালেন্স করে নিতে হয়
এই যে অণু পরমাণু বিষয়ক সামাজিক কর্মশালা
সেখানে হাতুড়ি পিটলেই ছিটকে আসে না ইলেকট্রন
 
তারা ঘুরতে থাকে আর ঘুরতেই থাকে 
                               নিউক্লিয়াস চত্ত্বর
সেই মানুষটা বারে বারে কান পাতে 
                              দরজার একপাশে
ভেতরে ভেতরে প্রেমিকাগুচ্ছ ক্রমশই 
                            সংগঠন হয়ে ওঠে।
 
মিছিল হয় মৃত সম্পর্কের ইলিউশন সামনে 
                                  টেনে টেনে
আর তখনই দরজাটা মন খারাপ করে চৌকাঠ 
                                   ছুঁড়ে দেয়।
 
 দেখা হবে
 
নদীতে কখন জল বেড়ে গেছিলো তা কেউ জানে না
যেমন জানে না একটা দ্বীপ
নদীর স্রোত মাপতে নেমে আর উঠে আসেনি
 
জল এখানে বড়ই অন্যমনস্ক
দুপাশে গ্রাম নেই বলে কোনো নৌকো দাঁড়ায় না
 
দ্বীপের দলিলপত্র যাদের কাছে ছিলো
তারা পরবর্তী প্রজন্মের হাতে সেসব ধরিয়ে গেছে
প্রজন্ম জানে এই দলিল একদিন 
                  ভিসুভিয়াস হয়ে উঠতে পারে
 
দোরাজ বন্দী কাগজ আর জলবন্দী মাটি
কেউ কাউকে দেখেনি
 
অথচ দুজনেই জানে একদিন তাদের দেখা হবে।
 
পথ
 
একদিন ঈশ্বরের খুব ইচ্ছে হলো মহাপুরুষ সাজতে
 
অরণ্য মেপে রাস্তা বানিয়ে হনহন হেঁটে গেলেন তিনি
তৈরী হলো পথ 
             যে সংজ্ঞা যুধিষ্ঠিরকে দিয়েছিলেন ধর্ম
আশ্চর্যের ব্যাপার কেউই অনুসরণ করলো না তাঁকে
পায়ের স্পর্শ না পেয়ে আবার অরণ্য গজিয়ে উঠলো।
 
পথ সুপার ফ্লপ করতেই বড়ই কুপিত হলেন ঈশ্বর
পেছন ফিরে তীব্র অভিশাপ দিলেন নির্বোধ অরণ্যকে
অরণ্য গুটিয়ে যেতেই সেখানে 
                         ভয়াবহ মরুভূমি ফুটলো
ঈশ্বরের সেই পথ এখন কেউ 
                     আর্কাইভেও খুঁজে পায় না।
 
স্বয়ং ঈশ্বরও রিমেক করার জন্য 
                      পথটা খুঁজে বেড়াচ্ছেন।
 
 
খণ্ড খণ্ড
  
তুই তো ভীষণ বিরক্তিকর মানুষ
না ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিলি রাত
দীর্ঘ উপোস কমেন্ট পেয়েও দেখি
শ্রীখণ্ডে তোর অবাধ যাতায়াত।
 
গড় এখানে ভাঙছে দড়ির টানে
গলায় বাঁধা ঘণ্টা নাড়ে জিভ
তিন নয়নের অশ্রুগ্রন্থি নিয়েই
মরণ পর্বে একলা বেঁচে শিব।
 
জটায় বাঁধা চন্দ্রপুকুর দেখে
জলের দরে আদ্যিকালের পাপ
ত্রিশূল দেখে কাঁপতে থাকা রুমাল
মুছিয়ে দিচ্ছে সকল অভিশাপ।
 
ডমরু বাজলে চেকার বক্সে আগুন
পুরুষ পুরুষ মন্ত্র পড়ে জল
গায় ছিটিয়ে ধর্ম প্রকট হলেই
সাক্ষী থাকে স্তব্ধ মফস্বল।
 
তুই তো দেখি আচ্ছা রকম বোকা
পর্দা তুলে মারতে এলি চোখ
খণ্ড খণ্ড ঋণের বোঝা নিয়ে
তোর দুচোখে নয়ানজুলি হোক।

ভ্রমণ
 
চুমুকে ভরিয়ে দিতে কিলিমাঞ্জারো
তোমাকে পাহাড় ভেবে গিলি। টান ছাড়ো
 
পাহাড়ী ঝর্ণা শেডে ধরা দিতো তুলি
দুখানা আঁচড় টেনে পরাজিত খুলি
 
খুলিতে খুলিতে লেগে জোরে ঠোকাঠুকি
ভ্রমণ পিয়াসী মুখে ওড়ে খোকা খুকি
 
কুসুমে হেলানো সেতু আঁকা থাক পরে
আগে তো আসুক চিঠি ফাঁকা ডাকঘরে
 
যতটা আগুনে লেখা পোহাতে ছাড়িনি
মাটিতে রেখেছি দেহ লোহাতে পারিনি
 
গোপনে আবির খেলা ভালো বাসা বলে
নিশিকে মধুর লাগে আলো খাসা হলে
 
ভারাটে রুদালী যারা চোখে আনে পানি
শিকড়ে মুকুট দেখে নখে টানে জানি
 
এভাবে ম্যাজিক করে দ্যাখ মুঠো পেতে
বারো ঘর পেরিয়েছি এক উঠোনেতে। 🚫

মূল সূচিতে ফিরে যেতে এখানে ক্লিক করতে হবে

-----------------------------------

লেখক পরিচিতি

জন্ম ১৯৮০ সালে নদিয়া জেলার বেথুয়াডহরিতে। পিতা অরুণকুমার মজুমদার মাতা অলকা মজুমদার। বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক হলেও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্রবিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেছেন। কিছুদিন সাংবাদিকতা ও বাংলা মেগা সিরিয়ালের সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও বর্তমানে একটা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ২০০০ সাল থেকে কবিতা, ছড়া, ছোটো গল্প, প্রবন্ধ লিখছেন। বেথুয়াডহরি থেকে প্রকাশিত 'ঝড়' দেয়াল পত্রিকাতে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। এরপরে অলিন্দ, ফিনিক্স, কথাকৃতি, আবাদ, অভিব্যক্তি, সৃষ্টির একুশ শতক, নতুন কবি সম্মেলন, উত্তরবঙ্গ সংবাদ, জ্বলদর্চি ছোটোবেলা, পরম্পরা, অভয়া প্রভৃতি পত্রিকায় কবিতা, ছোটো গল্প, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সাহিত্য পাঠ, গান শোনা ও নানা ধরণের চলচ্চিত্র দেখতে খুবই ভালোবাসেন। আর ভালোবাসেন মানুষের সঙ্গে মিশতে। এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘হাত দুটো ছুঁতে দে’ (২০১৯) ও ‘বান্ধবীরা ম্যাজিক জানে’ (২০২০)  প্রকাশিত হয়েছে 'কথাকৃতি' থেকে।