দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়ে দশ।। রাজীব কুমার ঘোষ

দশ নম্বর মৃত্যুর নাম স্নেহা,

এক বালিকা, বয়স ছয়
মায়ের নাম ছবি মণ্ডল,
যার হাতে রেলমন্ত্রী
     দিয়েছিলেন তুলে
                আশ্বাস
 
সেই আশ্বাস এখন হাসপাতালের
করিডোরে, করিডোরে
লুটোপুটি আর লুটোপুটি
সেই আশ্বাস এখন মৃত্যু নম্বর দশ
 
এই দেশে ছুটে চলা সব
এক্সপ্রেস, সুপার ফাস্ট, লোকাল
এই আশ্বাসের ওপর দিয়ে
ছুটে চলেছে আর ছুটে চলেছে
 
এই কাটা পড়া, খণ্ড-বিখণ্ড আশ্বাস নিয়ে
আমরা কী করব ভারতভাগ্যবিধাতা?
কাটা পা তুলে তাকে মিলিয়ে দেব
মৃত শুভজিৎ মালি- দেহের সঙ্গে?
ছিন্ন বিছিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সনাক্তকরণে
আমরা কেবল সফল আরো সফল?
 
আমরা ভেবেছিলাম,
আমাদের আছে কবচ
আমরা ভেবেছিলাম, প্রতিটি মৃত্যু
সংশোধন নিয়ে আসে
 
আমরা ভেবেছিলাম, স্নেহারা
স্টেশন থেকে উঠে স্টেশনে নামবে
        মর্গে যাবে না
আমরা ভেবেছিলাম,
বগির সঙ্গে বগি জুড়েট্রেন হয়
আমরা ভাবিনি,
কফিনের সঙ্গে জুড়তে থাকবে কফিন
 
সভ্যতা শুধু গুণতে জানে
স্নেহা নামে বালিকা
তাকে শুধু দশ বলে ডাকব আজ

(কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনা ১৭ জুন রাত ২০১৪)

রাজীব কুমার ঘোষ

চুঁচুড়ার রাজীব’ মানেই সহদেববাবুর ঘোড়া’, ‘ভীষ্মদেবের মৃত্যুমুহূর্ত’, ‘অনেক জলের শব্দ’, ‘টাওয়ার অফ্ সাইলেন্স’, ‘হিবাকুশার ছেলে’ বা ঘোষ স্যারের গল্পগুলি — বহুচর্চিতভিন্নমাত্রার কিছু গল্প। জন্ম ১৯৭৭পড়াশোনাবেড়ে ওঠা চুঁচুড়া-হুগলি-চন্দননগর। ১৯৯৭ সাল থেকে লিটল ম্যাগাজিন কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত এবং নিয়মিত লেখালেখি। সম্পাদিত পত্রিকা সাইন্যাপস্। আছে বেশ কিছু কবিতার বই। প্রকাশিত গল্প সংকলন ঘর ও দরজার গল্প’, ‘অনেক জলের শব্দ’, 'আমাদের আশাতীত খেলাঘর'। গল্পের জন্য বারাসাতের বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন ২০১৯ সালের অনন্তকুমার সরকার স্মৃতি পুরস্কার। অণুগল্পের জন্য ২০১৮ সালে চুঁচুড়ার গল্প সল্পের আটচালার পক্ষ থেকে পেয়েছেন উৎপল স্মৃতি পুরস্কার। সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতার সংকলন, "এই কবিতা শেষ হলেই"।

পেশায় বিজ্ঞান শিক্ষক। নেশায় পাঠক। প্রিয় অবকাশ যাপন — পাঁচশো বছরের পুরনো জনপদের অলিগলিতে সময়ের ভাঁজে ভাঁজে ঘুরে বেড়ানো।

মূল সূচিতে যেতে এখানে ক্লিক করতে হবে