- - - পা ঠ প্র তি ক্রি য়া - - -


লাস্ট ট্রাম

বিশ্বদীপ দে

প্রকাশক - বৈভাষিক

প্রথম প্রকাশ - জানুয়ারি ২০২৪

প্রচ্ছদ - পিনাকী দে

হার্ড বোর্ড বাইন্ডিং 

ISBN 978-93-91749-61-3

মূল্য - ১৮৫/- ভারতীয় মুদ্রা

প্রাপ্তিস্থান - স্টল ২, ব্লক-৩, কলেজ স্কোয়ার, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলকাতা ১২

অনলাইন প্রাপ্তিস্থান - www.boibhashik.com


পৃথিবীর সব গল্প একদিন ফুরাবে যখন,

মানুষ রবে না আর, রবে শুধু মানুষের স্বপ্ন তখন  

                    ( ‘স্বপ্ন’ / জীবনানন্দ দাশ )

 

তখন! তখনও অলৌকিক সফর শেষ হবে না কথাকারের, কবির, দ্রষ্টার। কারণ তারা দূরদর্শী। নো ম্যানস ল্যান্ডে তাদের স্বপ্নের সফর অলীক হলেও একদিন তা বাস্তবে রূপ নেবে।  

এই নো ম্যানস ল্যান্ড হয়ে যাওয়া নতুন দেশই হয়তো একমাত্র সত্যি।’ 

উদ্ধৃতিটি বিশ্বদীপ দে-হলুদ ট্যাক্সিনামক গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া। বইটিতে গল্পকারের সফর শুরু হয় অন্ধকার গলিতে হাঁটা দিয়ে আর সেই সফর শেষ হয় যখন কথাকার প্যারিসের আনাচে কানাচে অন্বেষণ করে চলেছেন অসমাপ্ত লেখার। 

২০২৪ এর কলকাতা বইমেলায় বৈভাষিক থেকে সদ্য প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বদীপ দের বইলাস্ট ট্রামযে পাঠক হলুদ ট্যাক্সি পড়বে সে অবশ্যই লাস্ট ট্রাম পড়বেই। লেখকের কথায় দুঃস্বপ্নে ভরা এই শহরে লাস্ট ট্রাম আজও পক্ষীরাজ হওয়ার কথা ভাবে 

লাস্ট ট্রামবইটিতে লেখক ইন্দ্রজালিকের মতো শব্দদের নিয়ে খেলা করেছেন। শব্দদের বুনে বুনে দৃশ্য তৈরি করেছেন। হতভম্ব গাড়ির দৃশ্য, হলদে আলোর ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্য, অলীক সমুদ্রের দৃশ্য, চাঁদের কারসাজির দৃশ্য, চেনা শহরের রাতের দৃশ্য। লেখক দৃশ্যগুলি বোনেন লীলা মজুমদারের গল্প, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের গল্প, লাভক্র্যাফটের গল্পগুলি স্মরণ করে করে। দৃশ্যগুলি এলোমেলো শব্দ দিয়ে এঁকে লেখক তার নাম দেন রাত্রির কোরাস

মানুষ যা কিছু ছেড়ে আসে, তাকেই বয়ে চলে সারা জীবন। লেখক বলেছেনছায়াবাড়িতে। সত্যিই কি তাই! স্মৃতি মোড়া এই ছায়াবাড়ির কড়িবরগা, পেনদানি, টেবিল, খাট, সদর দরজা, ইঁদারা, বাসনকোসনের ট্রাঙ্ক, বড়োদাদুর ইজিচেয়ার 

টিকেমামা, গল্পদিদা, ছোড়দাদু আর মা। সর্বোপরি মামাবাড়ি সংক্রান্ত যাবতীয় স্মৃতি নিয়ে লেখকের এই লেখাটি খুবই স্মৃতিমেদুর। ক্রমে মামারবাড়ির গল্পে মায়ের প্রবেশ। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবার প্রবেশ। মামাবাড়িকে ঘিরে স্মৃতি গল্পেরা মাঝে মাঝেই উঠে আসে লেখকের স্বপ্নে। সেই স্বপ্নেই লেখক খুঁজে চলেন মামাবাড়ি যা এখন ছায়াবাড়ি।

জীবনানন্দ আর ট্রাম, ওতোপ্রতো জড়িত দুটি শব্দ। এই দুটি শব্দ নিয়ে লেখক কবির মৃত্যু মুহূর্ত লেখেন আবার তাঁর নিজস্ব গল্পেযদিযদি সেদিন তিনি না মারা যেতেন। যদি কেন, সত্যিই তিনি সেদিন বেঁচে বাড়ি ফিরেছিলেন ট্রামের কবল থেকে। তাই তো আজো তাঁর কবিতার পাঠকেরা স্বপ্ন দেখে।

জার্নালধর্মী এই লেখাগুলো লিখতে লিখতে মাঝে মাঝেই গল্প বোনেন লেখক। কখনো মামার বাড়ির গল্প। কখনো কবির মৃত্যুকে ঘিরে গল্প, কখনো একটি মেয়ের কানের দুল হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে গল্প।লাস্ট ট্রামনিয়ে লেখকের লেখাটি বিষন্নতায় ভরা।রূপকথার মিসিং লিংকশুরু হয়েছে লেখকের কবিবন্ধুর কবিতা দিয়ে। ঠিকই তো শিল্পের এক মাধ্যম আর এক মাধ্যমের দিকে চলে যেতে পারে। নব্বইএর দশকের স্মৃতিতে ভরা লেখকের এই রূপকথার গল্পে চলে আসে শোলের কথা, এফ এমের কথা, সাইকেলের ক্রিং ক্রিং শব্দের কথা। প্রেম ফিরে ফিরে আসে রূপকথার সঙ্গে, প্রেম হারিয়ে যাবার ব্যথা বুদবুদের মতো ওঠে পলাশ গাছটাকে ঘিরে। সমস্ত লেখাটি জুড়ে যে সুর দিয়ে দৃশ্য এঁকেছেন লেখক সেটি আসলে একটি কবিতা থেকে জন্ম নেওয়া ছেঁড়া ছেঁড়া প্রেমের গল্প।

 ‘চৈত্রের কাফনগদ্যটিও সুরে বাঁধা। সেই সুরে মিশে আছে মহীনের ঘোড়াগুলির একটি গান। সেটি থেকেই উঠে আসেকাফনশব্দটি।৯৯ রানাউটলেখাটি লকডাউনের সময়ের।৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ছ বলে নয় থেকে চার বলে এক রান বাকি। একা হাতে খেলা ঘুরিয়ে দিয়েছেন ল্যান্স ক্লুজনার। তবুও শেষরক্ষা হল কই? জয়ের রান নিতে ক্লুজনারের মরিয়া দৌড়। কিন্তু উলটো প্রান্তে থাকা ডোনাল্ড যে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ফলে অপরিহার্য রান আউট। হই-হই করতে থাকা অজিদের পিছনে রেখে সঙ্গী হতভম্ব ডোনাল্ডকে ভুলে গিয়ে একা থেকে আরও একলা হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন ক্লুজনার। সেই চলে যাওয়াটা আজও বুকে বাজে।খেলা চলতেই থাকে লেখকের বুকে। 



শেষ দুটি লেখাতেও স্মৃতিগদ্য, গান, সিনেমা, উঠে আসে অন্যগুলির মতো। প্রতিটি গদ্যেই বিশ্বদীপ দে শ্রদ্ধা জানান একটা সময়ের জলছবিকে। তাইলাস্ট ট্রামঅবশ্যই লেখকের অতীতের ভাবনাগুলিকে জড়ো করে মলাট বন্দী করা একরাশ স্বপ্ন। সেই সব স্বপ্নেরা লেখকের কাছ থেকে ক্রমে ক্রমে পাঠকের স্বপ্নের সঙ্গেও মিলে যাবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে লাস্ট ট্রামের অপেক্ষায় জীবন কিন্তু থেমে থাকে না তা প্রতিটা লেখায় বিশ্বদীপ দে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। এখানেই লেখকের কলমের অনন্যতা। 🚫     

মৌসুমী ঘোষ



সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। নয়ের দশক থেকে লেখালেখি শুরু। ছোটো গল্পের জন্য বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন 'অনন্ত কুমার সরকার' স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৭)। অণুগল্পের জন্য পেয়েছেন গল্প-সল্পের আটচালা আয়োজিত 'উৎপল স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৯)। 'মৌসুমী যে অণুগল্পগুলি লিখেছিল' এই নামেই প্রকাশিত প্রথম বই। অণু-পুস্তিকাটি সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাঠকমহলে। প্রথম গল্প সংকলন, 'সোনালি খড়ের বোঝা' (২০২০), যুগ্ম গল্প সংকলন 'যেসব গল্পের কোনোও মানে হয় না' (২০২১), দ্বিতীয় গল্প সংকলন, 'জাঙ্গুলিক'। বর্তমানে মৌসুমী আরেকটি ওয়েব পত্রিকা সম্পাদনা করছেন 'জ্বলদর্চি' পত্রিকার উদ্যোগে প্রকাশিত, ছোটোদের জন্য সাপ্তাহিক ওয়েব পত্রিকা 'ছেলেবেলা'। 


পড়ার জন্য নির্দিষ্ট শিরোনামে ক্লিক করতে হবে

👉২০.০৪.২০২২।। হৃদ মাঝারে...

👉 ৩.০৫.২০২২ ।। পিছাবনী

👉২.০২.২০২৩ ।। গল্পপাখি এবং

👉 ২১.০১.২৩ ।। রোহিণী নক্ষত্রের পতন

👉 ২১.০২.২৩ ।। আপেল

👉 ০৪.০৪.২০২৩।। গল্পসংগ্রহ - বীরেন শাসমল

👉১৫.০৪.২০২৩।। মনভাসি ।। শান্তিপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় 

👉 ০৯.০৭.২০২৩।। অণুগল্পমেলা ১।। সম্পাদনা সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

👉০৬.০৮.২০২৩স্বপ্নডিঙা।। সিক্তা গোস্বামী