- - - পা ঠ প্র তি ক্রি য়া - - -


বাংলায় স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা ১ 

সম্পাদনা - সুজন বন্দ্যোপাধ্যায় 

প্রকাশক - সুপ্রকাশ

প্রথম প্রকাশ - জানুয়ারি ২০২৪

প্রচ্ছদ - সুলিপ্ত দে

হার্ড বোর্ড বাইন্ডিং, পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৫১ 

২৫সেমি x ১৮.৫সেমি 

ISBN 978-81-961162-8-6

মূল্য - ৬৯০/- ভারতীয় মুদ্রা

প্রাপ্তিস্থান - সুপ্রকাশ, স্টল নং ৯, ব্লক ২,  

কলেজ স্কোয়ার, সূর্য সেন স্ট্রিট, কলকাতা ১২

ফোন ৯৪৭৭৫৩০৪৪০

অনলাইন প্রাপ্তিস্থান - www.thinkerslane.com


“...এতকাল পেশা ছিল তাই যা প্রকৃত-অর্থে কৌমজীবনের সঙ্গে যুক্ত, যা কৌলিক-পরিচয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী, যা পরিবার-প্রতিবেশ বা সামাজিক অবস্থানসূত্রে দীর্ঘায়িত প্রশিক্ষণ এবং আনুষ্ঠানিক যোগ্যতা সাপেক্ষ।" 

যারা আজ ইতিহাসের পাতা থেকে এসে স্মৃতির দরজায় কড়া নাড়ে তারা কেউ কাঁসারি, কেউ পালকি বাহক, কেউ ভিস্তি, কেউ কবিয়াল, কেউ বা গাড়োয়ান....
তাদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়েছে যে বইটি, তা নিয়েই এই আলোচনা।
  
'বাংলার স্মৃতির পেশা ও পেশাজীবীরা' বইটি যখন সুজন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় সুপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়ে হাতে এল তখন এই সমস্ত চরিত্ররা স্মৃতির পাতা থেকে ৪৩ জন লেখকদের হাত ধরে চলে এল আমার লিভিং রুমে। 
 
প্রচ্ছদ - সুলিপ্ত মণ্ডল

পেশা অবশ্যই জীবন ধারণের অপরিহার্য শর্ত। পেশার সঙ্গে অন্নের অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক। শুধু অন্ন নয় পেশার সঙ্গে শ্রমের সম্পর্কও নিবিড়। ভুলতে থাকা পেশাগুলিকে স্মৃতি রোমন্থনের মাধ্যমে উপস্থাপনা করা হয়েছে সুসম্পাদিত এই সংকলন গ্রন্থেসুলিপ্ত মণ্ডলের প্রচ্ছদ এবং অদ্বয় দত্তের অলংকরণগুলি গ্রন্থটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। 
 
বইটির বেশ কিছু লেখকের লেখার সঙ্গে আমার স্মৃতি রোমন্থনটিও (ভিস্তিদের নিয়ে লেখা) নির্মুখোশের শারদীয়া সংখ্যায় প্রকাশ পেয়েছিল। ভিস্তি বা আমাদের এলাকায় যাদের ভারী বলা হতো তাদের থলিটিকে বলা হত মশক। তারা কোথা থেকে আসতো? কোথায় চলে গেল সে খবর কেউ রাখে কিনা জানা নেই আমার। তবে শুধু বলতে পারি তাদের কাজ পাল্টেছে, কাজের ধরণও। 
 
অলংকরণ -- অদ্বয় দত্ত।। ভিস্তি আবে ভিস্তি

এই বইটিতে আরো অনেক লেখাই পড়লাম যেগুলো নিজেরাই ইতিহাস হয়ে গল্প বলে গেল।
'ওয়ান ম্যান হটরপটর, ওয়ান ম্যান সেঁকি, দ্যাট ইজ কলড ঢেঁকি।' নারদের বাহন এই ঢেঁকি চালায় যারা তাদের বলে ঢেঁকিজীবি। তারা আজ লুপ্তপ্রায়। তাদের হারিয়ে যাবার গল্প তুলে এনেছেন অর্ধেন্দুশেখর গোস্বামী। 'ভাচা'-র এত কথা সত্যিই জানতাম না, ধন্যবাদ লেখককে।
 
অগ্রদানী ব্রাহ্মণদের নিয়ে রামামৃত সিংহ মহাপাত্রের লেখাটি খুবই তথ্যবহুল ও তথ্যসূত্রগুলি খুবই কাজের হবে অনেকের কাছেই। 
 
প্রথম নিবন্ধটি স্বাতী দাসের। কম্পাউন্ডার ছুটকুদাকে নিয়ে লেখাটি মনকাড়া। 
 
পরবর্তী লেখাটি কল্লোল লাহিড়ীর। যে কয়েকটি বস্তুকে সংসারের শ্রীবৃদ্ধিতে শুভ বলে মনে করা হয় তাদের মধ্যে শিল আর নোড়া অবশ্যই আছে। এরাই এই আখ্যানের মূল দুই চরিত্র হলেও আজকের গল্পের ম্যাজিশিয়ান কিন্তু অন্যজন। তিনি ছোটোবেলার দুপুরগুলোকে তুলে আনতে পারেন রাশিয়ার রূপকথার বইয়ের পাতা থেকে। তাই তো তিনি ম্যাজিশিয়ান৷ সেই শিলে নকশা কাটা ম্যাজিশিয়ানরা আজ প্রায় অদৃশ্য -- এই আখ্যান মনে করিয়ে দিল রবি ঠাকুরের কাবুলিওয়ালাকে। 
 
শুধুমাত্র যে লেখাটির জন্য বইটি সংগ্রহ করা যায়, সেটি হল অনন্তপ্রসাদ জানার প্রেস নিয়ে লেখাটি। তবে প্রেসের ইতিহাস উঠে আসা এই লেখাটির শেষে একটি তথ্যপঞ্জী থাকলে আরো উত্তম হতো। 
 
জয়দীপ মিত্রের  টানা পাখা ও পাঙ্খাওয়ালাদের নিয়ে লেখাটি আমার দারুণ লেগেছে। ছবি, স্কেচ, তথ্যসূত্র সবই প্রাবন্ধিকের ঘরাণা চিনিয়ে দেয়। ঋদ্ধ হয়েছি লেখাটি পড়ে। 
 
পাঙ্খাওয়ালারা ছিল নিচু জাতের মানুষ। গরমের সময় ওড়িশা থেকে গোয়ালাদের দল, বিহার থেকে কাহার, রাজোয়ার, দুসাদ জাতের নিম্নবর্গীয় মানুষেরা পাখা টানার জন্য ভিড় জমাতো এই কলকাতায়। সামান্য পয়সার বিনিময়ে তাদের অনবরত এই পাখা টেনে যেতে হতো। অস্থায়ীভাবে অন্ধদের পাখাটানার কাজে নিয়োগ করার আবেদন জানিয়ে 'জনৈক গ্রাহক' 'সুলভ সমাচার' পত্রিকায় 'অন্ধদিগের দ্বারা টানা পাখা টানা 'শিরোনামে চিঠি' লেখা হয়েছিল।
 
প্রচলিত ধারণা পর্তুগিজরা ভারতে প্রথম হুঁকোর নেশা নিয়ে আসে। সত্যি মিথ্যে তর্কাতীত। তবে এই নিয়ে দেবযানী ভট্টাচার্যের লেখাটি খুবই তথ্যবহুল। নারকেলের ঘোলার গা মাখনের মতো মসৃণ করতে পারত কুমিল্লার কারিগরেরা। আর বলা যাবে না। আরো জানতে হলে সংগ্রহ করতে হবে এই সংকলনটি।
 
কর্মক্ষেত্রের দুটো ভিন্ন পরিসরকে টাইপ আর শর্ট হ্যান্ড জানা ছেলেমেয়েরা একসময় পুষ্টি দিয়েছে তা আমাদের অজানা নয়। এদের নিয়ে নিবন্ধটি লিখেছেন ভাস্কর দাস। যদিও এই সমস্ত ছেলেমেয়েরা পুরোপুরি অবলুপ্ত নয়। এখনো কোর্টে বা কিছু কিছু অফিসে এসব পদ খালি হয়। যদিও পূর্ণ হয় কিনা জানা নেই।
  
অলংকরণ -- অদ্বয় দত্ত।। শৃগাল উল্লম্ফন -- আফটার গ্লো-র আভায়

নিবন্ধগুলির মধ্যে রাণার, সিনেমার টিকিট ব্ল্যাকাররা যেমন আছে, আছে পালকি বাহক, গাড়োয়ান, মাঝি, শালওয়ালা, কবিয়াল, ঘরামী, রাখালরাও। জুমিয়া বা টঙিয়া কুলিদের কথা লিখেছেন সৌমিত্র ঘোষদেওয়াল বা সাইনবোর্ড লেখালেখির শিল্পীরা আজ অস্তমিত। তবু সমরজিৎ দাস তুলে এনেছেন সুমন, সুধাময়দের গল্প, যারা আজও বদলায় না। অপূর্ব এই নিবব্ধটি পড়তেই হবে প্রতিটি পাঠককে এক নিশ্বাসে।
উৎপল চক্রবর্তীর লেখা ডাকঘরের হরকরা অপূর্ব ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। তথ্যপঞ্জীটিও সমৃদ্ধ করবে পাঠককে। ঠিকই বলেছেন লেখক, আসলে এই সমস্ত অবলুপ্তপ্রায় জীবিকাগুলোর প্রতিটিই জীবন যুদ্ধে ক্রমে হেরে যেতে বসেছে বিভিন্ন বিরোধের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য। তার একটি হল পারিশ্রমিককে কেন্দ্র করে বিরোধ। নতুন প্রজন্ম সময়ের সঙ্গে ছুটছে। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে এই সমস্ত জীবিকায় পারিশ্রমিক ক্রমশ ক্ষীণ হচ্ছে। আর প্রতিটি জীবিকাতেই এখন ঢুকে পড়েছে এজেন্সি প্রথা। সেখানে দর কষাকষি করে জিতে যাচ্ছে যারা তারাই টিকে যাচ্ছে। 

আমাদের গ্রামে ঢুকতেই পালপাড়া। কেউ কেউ বলে কুমোরপাড়া। ঘর-কুড়ি কুম্ভকারের বাস। প্রায় সবার জীবিকাই মাটির কাজ। দু-চারটি পরিবারের বৃত্তি ছিল কৃষি ও মাটির কাজ দুটিই। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তাদের বাড়িগুলির দিকে তাকালেই নজরে পড়তো কোথাও এঁটেল মাটির ঢিপি, কোথাও পোড়শাল, কোথাও উঠান জুড়ে ছড়ানো রোদে দেওয়া মাটির নানান তৈজসপত্র। মালসা, সরা, মুচি, সানকি, হাঁড়ি, মুড়ি ভাজার খোলা হাঁড়ি, ঝাঁঝড়ি, তস্তা, প্রদীপ, ধুনুচি, গ্লাস, কলসি বা ঠিলি, জালা, পিঠা বানানোর সরা আর ঢাকা, ঘট, ঢাকনা, ফুলের টব, কুঁয়োর বেড় বা পাট ইত্যাদি। 
এই কৌলালদের নিয়ে লিখেছেন দীপিকা ঘোষ
 
সাড়ে চারশো পৃষ্ঠার এই সংকলনটিতে মণিমুক্তোর শেষ নেই। শেষে বললেও গুরুত্ব কোনো অংশে কম নয় দেবদুলাল কুন্ডুর পুতুলনাচ ও তার শিল্পীদের নিয়ে লেখাটি। পুতুলনাচ একটা মিশ্র শিল্প। এই দল চালাতে আট থেকে দশ জন লোক লাগে। পুতুল নাচে দস্তানা পুতুল, তারের পুতুল, ছায়া পুতুল, বিভিন্ন ধরনের পুতুল ব্যবহৃত হত। এই শতকের শূন্য দশক থেকেই পুতুল নাচের জনপ্রিয়তা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকে।
অলংকরণ -- অদ্বয় দত্ত।। পুতুলনাচ ও তার শিল্পীরা

জীবিকাগুলির এই মলিনতা প্রাপ্তি আমাদের ভাবায় অবশ্যই, না হলে এই সংকলন প্রকাশই হতো না এই সন্ধিক্ষণেআরো যারা এই সংকলনকে ঋদ্ধ করেছেন --সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, বরুণ দে, শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া, শুভদীপ চক্রবর্তী, বনানী দাস, সমরেন্দ্র মণ্ডল, নীলাঞ্জন মিস্ত্রী, গোবিন্দ বিশ্বাস, সুপ্রিয় ঘোষ, দেবাঞ্জন বাগদী, চন্দ্রা মুখোপাধ্যায়, অন্তরীক্ষ মণ্ডল, মহুয়া বৈদ্য, তন্ময় পাঠক, স্বাগত মিত্র, জয় মিত্র, অলোক সরকার, সুশান্ত বিশ্বাস, দীপক দাস, জ্যোতির্ময় রায়, নুরবক্স মণ্ডল, সোমনাথ, সোহম দাস, মীর রাকেশ রৌশন, রূপা সেনগুপ্ত, গৌরব বিশ্বাস, সুমনা দত্ত, মানস শেঠ, উৎপল ঝা। নিচে পূর্ণাঙ্গ সূচিপত্র তুলে দেওয়া হল। 


 


 মৌসুমী ঘোষ


সাইন্যাপস্‌ পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। নয়ের দশক থেকে লেখালেখি শুরু। ছোটো গল্পের জন্য বহুস্বর পত্রিকার পক্ষ থেকে পেয়েছেন 'অনন্ত কুমার সরকার' স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৭)। অণুগল্পের জন্য পেয়েছেন গল্প-সল্পের আটচালা আয়োজিত 'উৎপল স্মৃতি পুরস্কার'(২০১৯)। 'মৌসুমী যে অণুগল্পগুলি লিখেছিল' এই নামেই প্রকাশিত প্রথম বই। অণু-পুস্তিকাটি সাড়া ফেলে দিয়েছিল পাঠকমহলে। প্রথম গল্প সংকলন, 'সোনালি খড়ের বোঝা' (২০২০), যুগ্ম গল্প সংকলন 'যেসব গল্পের কোনোও মানে হয় না' (২০২১), দ্বিতীয় গল্প সংকলন, 'জাঙ্গুলিক'। বর্তমানে মৌসুমী আরেকটি ওয়েব পত্রিকা সম্পাদনা করছেন 'জ্বলদর্চি' পত্রিকার উদ্যোগে প্রকাশিত, ছোটোদের জন্য সাপ্তাহিক ওয়েব পত্রিকা 'ছেলেবেলা'। 


পড়ার জন্য নির্দিষ্ট শিরোনামে ক্লিক করতে হবে

👉২০.০৪.২০২২।। হৃদ মাঝারে...

👉 ৩.০৫.২০২২ ।। পিছাবনী

👉২.০২.২০২৩ ।। গল্পপাখি এবং

👉 ২১.০১.২৩ ।। রোহিণী নক্ষত্রের পতন

👉 ২১.০২.২৩ ।। আপেল

👉 ০৪.০৪.২০২৩।। গল্পসংগ্রহ - বীরেন শাসমল

👉১৫.০৪.২০২৩।। মনভাসি ।। শান্তিপ্রিয় চট্টোপাধ্যায় 

👉 ০৯.০৭.২০২৩।। অণুগল্পমেলা ১।। সম্পাদনা সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়

👉০৬.০৮.২০২৩স্বপ্নডিঙা।। সিক্তা গোস্বামী

👉২৯.০১.২০২৪ মৌসুমীর কলমে।।লাস্ট ট্রাম।। বিশ্বদীপ দে