![]() |
সাইন্যাপস্ উৎসব সংখ্যার কবিতাগুচ্ছ |
কবি অমিত চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ
এলোমেলো উপাসক
নিউরন জালে জট পাকিয়ে গিয়েছিল গৌরী মাসির
তাই জলকে বলতো উদ্ধার, রোদ্দুরকে
অশনি।
এলোথেলো, আনমনা, নিস্তব্ধ
প্রায়শই
শুধু অসংলগ্ন কবিতা মাঝে মাঝে
আর গুনগুনিয়ে ‘পূর্ণ চাঁদের মায়ায়’।
আমার ইদানীং মানবচরিত্রে কৌতূহল —
বেয়াড়া ঘা থেকেই হয়তো সামাজিক রোগ
নতুন একটা দিগন্তের খোঁজে দৌড়ই
উৎসুক একটা ছাপ রেখে যাওয়ায়।
মনে আছে তোমার, কেমন ক্ষ্যাপা ছিলাম আমি,
ঘোর অমাবস্যায় গান ‘আজ
জ্যোৎস্না রাতে’
কখনো ভরদুপুরেও —
এখন আমি স্বল্প কথার মানুষ, গৌরী
মহিলাকে দেখি,
দেখি তার মানসিক নিরুদ্দেশ।
আসলে আমিও হয়তো ওই জটপাকানো স্ট্যাচুর দলে
আমিও হয়তো আজীবন অপেক্ষায়
এক ভুল বকা, এলোমেলো উপাসক।
হৃদয় খুঁড়ে
If you find yourself in a hole, stop digging.” ― Will Rogers
সাত হাত ঘুরে যখন লেখাটা এল আমার কাছে
আমি তখন বেশ খানিকটা গভীরে
এক হাতে কোদাল, অন্য হাতে শাবল,
খুঁড়েই চলেছি আক্রোশে।
গর্ত থেকে বেরোতে গেলে খোঁড়া থামাতে হয় আগে,
কে যেন লিখেছিল
এ দেশে সব প্রবাদই মার্ক টোয়েনের নামে চলে
আমি একটু থমকাই তাও।
খোঁড়া ছাড়া জীবন আছে তাহলে, কি আশ্চর্য
ক্যালেন্ডারের পাতায় লিখে রাখি — এখন বসন্ত,
হাসির সময়
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা এনো না চিল, যেতে দাও
গেল যারা
তুমি বরং জিনিয়া ফোটাও অঢেল, পাতাবাহারি
গাছও কিছু
সুদর্শন, পাড়াপড়শি খুশি হবে বেশ
নেমন্তন্নও করতে পারে
তোমার আচমকা হাসিখুশি
তোমার আচমকা রোগমুক্তি দেখে।
নীল বিষণ্ণ
প্রথম দেখায় মনে হবে নীল কার্পেট, আদিগন্ত
পাতা রয়েছে মাঠে — রোদে
শুকুচ্ছে এক পশলা বৃষ্টির পরে।
আর যে মানুষটা নীল বিষণ্ণ এমনিতেই
সে যদি মুখ তোলে একবার, চশমার ফাঁক
দিয়ে তাকালেই
বুঝে যাবে এ সবই ব্লু-বনেটের খেলা,
এ সবই উপদ্রব, টেক্সাসের নিজস্ব ফুলের।
কিন্তু কেন বিষণ্ণ হবে সে, তার তো কোনো
অভিযোগ নেই
শরীর, মন, সান্নিধ্য
কিছুই পায়নি সে, অথচ কোনো
অভিযোগ নেই,
আশ্চর্য আর বাতিলের মধ্যে কোনো তফাৎ নেই —
সবই একসুর তার পড়ন্ত বেলায়।
গতি, গতি ছাড়া তার কিছু নেই এখন।
সেই যে মাথা নত মেয়েটা
সেই যে কাঁচুমাচু স্বর, তুই এখন আয়
তেজময়
তাই জড় করে, নীল রঙে হলুদ মিশিয়ে
সে একটি গতিময় মন তৈরী করেছে।
একটি ঝোড়ো হাওয়ার ছন্দ।
গতি, গতি ছাড়া তার কিছু নেই এখন,
ত্বরণ শুধু।
ব্লু-বনেট, নীল বিষণ্ণ চলে যাবে এখনই
শুরু হবে সবুজের উদ্দীপনা, টেক্সাসের আসন্ন গরমে ।
স্বপ্নে, বকুলগাছের নীচে
বিষয়ী মেয়ে, তোমাকে ডেকে আনব বকুল গাছের
নীচে —
এখন ফুলের সময় নয়, ঝকঝকে
পাদদেশ, তবে
কান্ডে দেখবে লেখা রয়েছে “দীপু + আরতি”
সেই ভোঁতা ছুরি আর কম্পাস দিয়ে খোদাই —
চিরস্থায়ী ভালবাসা। আরো দেখবে
গুঁড়ির বাঁ পাশে একটা দাগ, জরুলের মত,
মনে পড়ে যাবে
ঘাড়ের কাছে হিকি, চুমুর দাগ
গলাবন্ধ সোয়েটারে ঢেকে রাখা তোমার,
অথচ শীত পড়েনি একেবারেই।
বিষয়ী মেয়ে, তোমাকে ডেকে আনব বকুলতলায়,
নাম খোদাইয়ের স্বপ্নে —
কারণ সে গাছ আমার নিউরন জাল ছাড়া
আর কোত্থাও বেঁচে নেই।
ফের অভিমানে
তুমি কি ফের অভিমানে? আশঙ্কার মত
ঝড় বয়ে যায়
গন্ধরাজ ঝোপে,
অসংলগ্ন কবিতার লাইনে পংক্তিগুলি ভুলে যায়
নিজস্ব আওয়াজ, স্বরসন্ধি
দ্যাখো আমিও কেমন বিচক্ষণ হয়ে যাচ্ছি
হারতে ভয়
মুগ্ধতা, আকর্ষণ ফেলে বোকা, বিচক্ষণ
বাক্সবাদাম কুড়িয়ে খাইনি কতদিন
ধুয়ে যায়, ধুয়ে যায় পুরোনো জাদু,
মনোহারিত্ব
একটা শেষ সমাধান দাও আমাকে
তুমি কি ফের অভিমানে?
![]() |
কবি অমিত চক্রবর্তী |
অমিত চক্রবর্তীর জন্ম সোনারপুর অঞ্চলের
কোদালিয়া গ্রামে। ছাত্রাবস্থায় অনেক লেখা এবং ছাপানো কলকাতার নানান পত্রপত্রিকায়। এখন
আমেরিকায়,
ক্যানসাস স্টেট ইউনিভারসিটি তে কলেজ অফ আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সের
ডিন। সম্প্রতি প্রকাশিত কবিতা — বাক, কবিতা
আশ্রম, ছায়াবৃত্ত, বম্বে ডাক, যুগসাগ্নিক, অন্যনিষাদ, বাতিঘর
অনলাইন, শারদীয়া খোঁজ, শব্দের মিছিল,
মহাভারত, অপার বাংলা, উত্তর
আমেরিকার পত্রিকা বাঙলা লাইভ, উদ্ভাস এবং আরো অনেক পত্রিকায়।
ঋক প্রকাশনী আয়োজিত বিরহের কবিতা প্রতিযোগিতায় উচ্চস্থান। উত্তর আমেরিকার নিউ
জার্সি অঞ্চলের পত্রিকা অভিব্যক্তির কবিতা বিভাগের সম্পাদক। প্রথম কবিতার বই “অতসীর সংসারে এক সন্ধ্যাবেলা” প্রকাশ পাচ্ছে এই
সেপ্টেম্বরে (২০২১) রা প্রকাশনী থেকে।
নিচের তালিকার নির্দিষ্ট লেখায় (উৎসব সংখ্যার)
নিচের তালিকার নির্দিষ্ট লেখায় (উৎসব সংখ্যার)
0 মন্তব্যসমূহ