প্র ব ন্ধ
একটি বিলুপ্ত গ্রন্থাগার — আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি
শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়
মহামতি আলেকজান্ডার (গ্রিক রীতিতে আলেগ্সান্দ্রস; ৩৫৬ খ্রি.পূ. – ৩২৩) শুধু দিগবিজয়ী বীর নন তিনি প্রখ্যাত দার্শনিক ও জ্ঞানী অ্যারিস্টটল (গ্রিক রীতিতে আরিস্ততেলিস)-এর নিজের হাতে তৈরি জগদ্বিখ্যাত ছাত্র। কয়েকশো বছর ধরে জলে ডোবা পাথরের দেশ গ্রিসে জ্ঞানচর্চা ও শৌর্য বর্ধনের যে পরাকাষ্ঠা সৃষ্টি হয়েছিল, মস্তিষ্ক ও দৈহিক বল প্রদর্শনের যে যুগলবন্দীর আসর বসেছিল তা বর্হিবিশ্বে পৌঁছে দেবার আভ্যন্তর অনিবার্যতা থেকেই আলেকজান্ডারের উৎপত্তি।
Alexander on a mosaic from Pompeii |
গ্রিক সভ্যতার হেলেনিক পর্ব পরিপক্কতা পেয়েছে এখন হেলেনিস্টিক পর্বের সূচনা। আত্মসংগঠন পর্ব শেষ এখন সম্প্রসারণ ও সঞ্চারণের যুগ। অধিকৃত মিশরে আলেকজান্দ্রিয়া নগরীর প্রতিষ্ঠা ও আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের নির্মাণকে দেখতে হবে এই প্রেক্ষিতে। আলেকজান্দ্রিয়া গ্রিক সভ্যতার ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দু। এ যেন দ্বিতীয় এথেন্স। বর্হিবিশ্বে তার নতুন রাজধানী। গ্রিক সংস্কৃতির নতুন রান্নাঘর। গ্রিসে ছিল একাডেমির যুগ। এক এক দার্শনিককে ঘিরে এক এক একাডেমি। এখন দার্শনিকরা আর সশরীতে নেই আছে তাদের লেখা। বলার জন্য একাডেমি, লেখার জন্য গ্রন্থাগার। হেলেনিস্টিক সভ্যতার ভরকেন্দ্র তাই গ্রন্থাগারকেন্দ্রিক হবে সেটাই স্বাভাবিক। গ্রন্থগৃহকে কেন্দ্র করে জ্ঞানচর্চা ও জ্ঞান বিনিময়ের নতুন আসর। গ্রন্থগৃহটিকে গ্রিক জ্ঞানের সংগ্রহশালা ও অন্যবিধ জ্ঞানের আদান প্রদান কেন্দ্র হিসাবে ক্রমাগত গড়ে তোলাই ছিল হেলেনিস্টিক পর্বের প্রধানতম এজেন্ডা। তাই আলেকজান্দ্রিয়া নাম কে ওয়াস্তে একটি গ্রন্থাগার মাত্র নয় একটি সভ্যতার বিশেষ পর্বের বর্হিদেশিক মহাচুম্বক।
বর্তমানে আলেকজান্দ্রিয়াতে রোমান অ্যাম্ফিথিয়েটারের ধ্বংসাবশেষ |
আলেকজান্দ্রিয়া শিল্পীর চোখে |
আলেকজান্ডার দেখলেন নানা দেশের মানুষ এখানে এসে পড়েছে, গড়ে তুলেছে তাদের নিজস্ব জীবন, ঘরানা। আছে ইহুদিরা। অনেকদিন ধরে আছে মিশরের অধিবাসীরা আর গ্রিকরা। নানা উৎসস্রোত থেকে এসে জমা হওয়া গ্রিক অঞ্চলটিকে মনে হল বিচিত্র জীবন সংস্কৃতির মিলনক্ষেত্র, ‘Alexandria
was a melting pot of people form all over the ancient world’। বলা হয়েছে — ‘The small fishing village of Rahacotis was
where Alexander could see the possibility of humanity coming together people
living together with tolerance for one another’s cultural and religious
ideologies, loving a life of freedom.’
আলেকজান্ডার আর ডিনোক্র্যাটস |
বর্হিগ্রিসের গ্রিক উপনিবেশ গড়ে তুলত ‘polis’ আলেকজান্ডার স্বপ্ন দেখলেন ‘cosmopolis’ গড়ে তোলার। মনে মনে ভাবলেন গ্রিক এবং নীলনদের অববাহিকার যোগসূত্র রচনাকারী একটি নগরী স্থাপন করতে হবে। রেখে যেতে হবে তার মিশর বিজয়ের স্থায়ী বিজয় চিহ্ন। ডেকে পাঠালেন তার নগর স্থপতি ডিনোক্র্যাটস-কে। তাঁর গৌরব-প্রবর্তক একটি নগরী উপযুক্ত জায়গায় স্থাপন করার পরিকল্পনা দিতে বললেন। ডিনোক্র্যাট মাউন্ট এথেন্সে সেই নগরী স্থাপনের নক্সা উপস্থাপিত করেছিলেন। আলেকজান্ডার দেখে বললেন শস্য হবে কোথায়? উর্বর জমি কই? ডিনোক্র্যাট বোঝালেন, সুগম জলপথ আছে। শস্য আমদানি করলেই হবে। আলেকজান্ডার হেসে উড়িয়ে দিলেন এই বালখিল্য প্রস্তাব। তিনি বললেন শস্য উৎপাদক জমিযুক্ত এই রাকোটিস অঞ্চলটিই নতুন নগরীর পক্ষে সবচেয়ে উপযুক্ত। কথিত আছে হাতের কাছে চক বা লিখন উপাদান ছিল না। শস্যের দানা দিয়ে তিনি এঁকে বুঝিয়ে দিলেন কোথায় হবে কেমন হবে তার স্বপ্নের নগরী। ডিনোক্র্যাটস তার নির্দেশ মেনে যে নগরীর পরিকল্পনা বা নক্সা বানালেন তা থেকেই জন্ম নিল আলেকজান্দ্রিয়া নগরী। আমোনের মন্দির দেখতে যাওয়ার পথে তিনি থেমেছিলেন রাকোটিসে। বাণিজ্য পরিবহনের জলপথ এবং উর্বর শস্যসম্ভব জমি দুই এক জায়গায় মিলেছে যেখানে, মিস্টি জল আর ভূমধ্যসাগরের চমৎকার আবহাওয়ার সংযোগস্থলটি হয়ে উঠল তার স্বপ্নের মেগাপলিস নির্মাণের ক্ষেত্রভূমি। ৩০০ বছর ধরে চলা পারস্য সাম্রাজ্যের (একিমেনেড সাম্রাজ্য) শাসন থেকে মিশরকে মুক্ত করে নতুন ইতিহাসের বীজ পুঁতলেন আলেকজান্দ্রিয়ায়।
আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার শিল্পীর চোখে ।। ছবি - আন্তর্জাল |
লাইব্রেরির রাজ রূপকারেরা
এবারে আসা যাক আলেকজান্ডারের স্বপ্নকে রূপায়িত করার দায় পড়ল কার কাঁধে? আলেকজান্ডার একটি চলমান বিস্তারের নাম। কোথাও ঘর বাঁধার জন্য তিনি আসেননি, থাকেন নি। থাকার কথা নয়। মিশরে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে (regarded as liberator) তিনি চললেন পূবদিকে মেসোপটেমিয়ার উদ্দেশে। বলে রাখা ভালো আর কখনই তিনি ফিরে আসেননি আলেকজান্দ্রিয়ায়। মৃত্যুর (খ্রি.পূ. ৩২৩) পর তার দেহ ছিনিয়ে আনা হয়েছিল বটে তবে সে অন্য গল্প। মৃত্যুকালে আলেকজান্ডারকে জিগ্যেস করা হয়েছিল, কে হবে তার সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী? উত্তরে বলেছিলেন ‘the strongest.’ তিন/চার ভাগে বিভক্ত তার সাম্রাজ্যের এক এক অংশ এক এক জনের দায়িত্বে গিয়েছিল। তার মধ্যে মিশরের দায়িত্ব পড়েছিল টলেমি ১ –এর উপর। তার বংশধররাই হবেন আলেকজান্দ্রিয়ার শাসক এবং আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের রূপকার।
টলেমি ১ম সোতার (Ptolemy I Soter; ৩৬৭ খ্রি.পূ. – ২৮২ খ্রি.পূ.) ছিলেন মিশরে টলেমি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। আলেকজান্ডার তাকে মিশরের প্রতিনিধি শাসক নিযুক্ত করেন। কে এই টলেমি ১ম সোতার? তিনি ছিলেন আলেকজান্ডারের বিশ্বস্ত সঙ্গী। তার সাতজন অন্তরঙ্গ রক্ষীর অন্যতম (somatophylakes), ম্যাসিডোনিয়ার জাতক। তার মা আরসিনোয়ে (Arsinoe) ছিলেন আলেকজান্ডারের পিতা ফিলিপ ২য়-র রক্ষিতা। মনে করা হয় ফিলিপের ঔরসেই তার জন্ম। অর্থাৎ এক অর্থে আলেকজান্ডারের ভ্রাতা (half brother)।
Ptolemy I bust at the Louvre |
যদিও ইদানিং বলা হচ্ছে এই মনে করাটি সন্দেহতীত নয়। এটা যদি সত্যি নাও হয় এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই জাতিগত পরিচয়ে মূলত ম্যাসিডোনিয়ান বা গ্রিক, টলেমি ১ম মিশরে ফারাও উপাধি নিয়ে তাদের রীতি-সংস্কৃতি পরিচ্ছদ গ্রহণ করে তাদের সঙ্গে একাত্মতায় সংযুক্ত হয়ে যান।
মিশরীয় ফারাও সাজে টলেমি |
Ptolemy II National Archaeological Museum, Naples |
Ptolemy lll Euregates |
A Roman sculpture of Cleopatra VII mid-1st century BC |
১. মিশরের দখল ছিল পারস্য সাম্রাজ্যবাদী একেইমেনেডদের হাতে প্রায় ৩০০ বছর।
২. আলেকজান্ডার মিশর অধিকার করে গ্রিক আধিপত্যের সূচনা করেন ৩৩২ খ্রি.পূ.।
৩. রোমান আধিপত্যের সূচনা খ্রি.পূ. ৩১, এটা চলে ২৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
৪. খলিফা ওমর (৫৮৪ খ্রি. – ৬৪৪ খ্রি.) ৬৪২ খ্রি. আলেকজান্দ্রিয়া দখল করলে এটি যায় মুসলমান শাসনাধীনে।
টলেমি রাজবংশের রাজত্বের তিনশো বছরই ছিল প্রকৃতপক্ষে আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের নিজস্ব সময়কাল। একটানা একই উচ্চতায় সে সমাসীন ছিল এমন নয়। তার বিলয়ের গল্পও নানা মত বিরোধে ভরা। সে গল্পে যাওয়ার আগে তার সূচনা, বিকাশ ও গৌরবময় স্বরূপের সন্ধানে নামা যাক। সে গল্প খুব যে স্পষ্ট তা বলা যায় না। তার নষ্ট কোষ্ঠী উদ্ধার করার জন্য আমরা একটা সহজ পদ্ধতি নেব। টলেমি রাজবংশের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় বিকশিত ও লালিত গ্রন্থাগারে যে সব পরিচালকরা পরিচালনার দায়িত্বে এসেছিলেন, যে সব বিদ্বানরা সমবেত হয়েছিলেন জ্ঞান চর্চার জন্য ও যারা সেই গ্রন্থাগারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ বিবরণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন একে একে তাদের হদিশ নেবার চেষ্টা করব।
MOUSEION
আগে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অবস্থান, স্বরূপ সম্পর্কে বিভিন্ন বিবরণ থেকে যা জানা গেছে অস্পষ্ট হলেও তার একটা রূপরেখা এঁকে নিই। প্রকৃতপক্ষে কোথায় ছিল এর নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থান তার হদিশ নেই। তবে তিনভাগে বিভক্ত আলেকজান্দ্রিয়া শহরের মধ্যভাগে বন্দর সংলগ্ন ব্রুচিয়নে (Royal
quarter) এই গ্রন্থাগারটি অবস্থিত ছিল। ব্রুচিয়ন ছিল সমুদ্রসংলগ্ন উপকূলে। গ্রন্থাগারটির নামকরণ করা হয়েছিল Mouseion। গডেস অব আর্ট হচ্ছেন মিউজ। সেই অনুসারে এই নামকরণ।
Mouseion থেকে মিউজিয়ম কথাটি এসেছে। মিউজিয়ামে থাকে নানা ঐতিহ্যশালী দ্রষ্টব্য। মিউজিয়াম অব্যবহার্য ও দুষ্প্রাপ্য বিষয়ের সংগ্রহশালা বা জাদুঘর। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির দুটি অংশ ছিল, একটি মিউজিয়াম, দর্শনীয়; অন্যটি লাইব্রেরি যা readable
object বা গ্রন্থ দিয়ে ভরা। জানা যায় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসাবে এই গ্রন্থাগারটির চরিত্র ছিল খানিকটা বিশ্ববিদ্যালয় ধাঁচের। এখানে অঙ্ক, জ্যোর্তিবিজ্ঞান, চিকিৎসাশাস্ত্র, জ্যামিতি, ইতিহাস, সাহিত্যের তুমুল চর্চা চলত। গবেষণাও চলত। গ্রন্থাগার চত্বরে বাগান ছিল। আচ্ছাদনযুক্ত সাজানো রাস্তা ছিল। আহারের কক্ষ ছিল যেখানে মৌসিয়নের সদস্যরা এসে মিলিত হতেন। পুরোহিত, পরিচালক, পণ্ডিত, জ্ঞানান্বেষী, গবেষকরা এখানে আসতেন, থাকতেন, পড়াশুনা, গবেষণা, জ্ঞান বিনিময়, লেখালেখি করতেন। এদের সংখ্যা শতাধিক, কেউ কেউ সহস্রের কথাও বলেছেন।
শিল্পীর চোখে ।। ছবি - আন্তর্জাল |
পরিকল্পনা ।। ছবি - আন্তর্জাল |
কীভাবে বই সংগ্রহ করা হত, কী বই সে সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে বিভিন্ন প্রধান শহরে যেমন এথেন্স, রোডস বই কিনতে লোক পাঠানো হত। যে সব জাহাজ আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরে থামত সেইসব জাহাজ তল্লাশ করে বইগুলো নামানো হত তারপর সেগুলো কপি করিয়ে কপিগুলো ফেরত পাঠানো হত বই-এর মালিকদের কাছে। কিন্তু মূল গ্রন্থটি নিয়ে রাখা হত আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারে। এইভাবে সফোক্লিসের ট্রাজেডি, ইসকাইলাস, এউরিপিদেসের রচনাগুলি সংগৃহীত হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। বই মানে বই-এর যে আধুনিক চেহারা আমরা দেখি তা নয়, দীর্ঘ
কাগজে (প্যাপিরাস) লেখা স্ক্রল। গুটিয়ে রোল করে রাখা থাকত। গ্রন্থাগারে ছিল ‘half million
scroll’।
জানা গেছে গ্রন্থের সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায়
বন্দরের গোডাউন ভাড়া নিয়ে রাখা হয়েছিল। এক অগ্নিকাণ্ডে গোডাউনে রাখা বই ভষ্মীভূত হয়
সে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
SERAPIUM
গ্রন্থের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আলেকজান্দ্রিয়া শহরের অন্যপ্রান্তে নির্মিত সেরাপিয়াম মন্দিরে ‘offshoot collection of the great library of Alexandria’ রাখা হয়। এটা হয় টলেমি ৩য়-র (খ্রি.পূ. ২৪৬ – খ্রি.পূ. ২২২) আমলে। সেরাপিস হচ্ছেন মিশরীয় দেবতা Orisis এবং Bull God Apis এর সংমিশ্রনে গ্রেকো-ইজিপ্ট নব্য দেবতা, আলেকজান্দ্রিয়ার রক্ষাকর্তা। আলেকজান্দ্রিয়ার যে দিকটা ছিল পশ্চিম দিক, প্যাগানদের ঘাঁটি সেই অংশে এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। সেরাপিসকে নিবেদিত গ্রন্থ সংরক্ষণের এই নতুন আগারটিকে বলা হয়েছে ‘the daughter of the library of Alexandria’। রোমান আদলে যেখানে মূল আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অধিষ্ঠান ছিল ব্রুচিয়ান আখ্যাত সেই এলাকা হয়ে ওঠে রোমানদের রয়াল কোয়ার্টার। সেখানকার গ্রন্থাগার নিবেদিত হয়েছিল গড অব মিউজের নামে তাই তার নাম MOUSEION আর গ্রিকদের strong hold -এ পর্যবসিত হয়েছিল সেরাপিয়াম।
সেরাপিয়ামের ধ্বংসাবশেষ ।। ছবি - আন্তর্জাল |
MOUSEION-এর স্থাপন-অস্তিত্বের (Architectural Evidence) কোনো চিহ্ন অবশিষ্টই নেই কিন্তু সেরাপিয়ামের ধ্বংসাবশেষ মিলেছে। সৌভাগ্যক্রমে সেরাপিসের মন্দির বা সেরাপিয়াম গ্রন্থাগারের একটি চাক্ষুষ বিবরণ মিলেছে। লিখেছেন আম্মিনাস মারসিল্লাস নামে এক গ্রিক সৈনিক। তাঁর Res Gestae নামক ৩১ পর্বের এক গ্রন্থে। সেরাপিয়াম গ্রন্থাগার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চার বছর আগে ৩৮৭ খ্রিস্টাব্দে তিনি সেরাপিয়াম মন্দির বা গ্রন্থাগার দেখেছিলেন। লিখেছেন, ‘এমনই বিশালতাযুক্ত মহিমময় রূপ তার, ভাষায় তাকে ব্যক্ত করা যায় না। splendid halls supported by pillars… beautiful statues… superbly decorated…next to capitol.
In it were
libraries of inestimable value and the concurrent testimony of ancient records
affirm that 70,000 volumes, which had been collected by the anxious care of the
Ptolemies were burnt in the Alexandrian war, when the city was sacked in the
time of Caesar, the Dictator…’
সেরাপিয়াম, যা আজ স্মৃতি ।। ছবি - আন্তর্জাল |
ধ্বংস ও বিজয়ের
ইতিহাসে MOUSEION বিনষ্ট হয়ে যাবার পর SERAPIUM বিনষ্ট হয়েছিল। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
আগে বলে নিই আলেকজান্দ্রিয়ায় গ্রন্থাগার-নগরী স্থাপনের ভিতরের রহস্যের কথা।
PAPYRUS
আলেকজান্দ্রিয়া
নগরী স্থাপনের স্থান নির্ণয়ে আলেকজান্ডার যেসব বাস্তব কারণকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তার
মধ্যে একটি কারণ ঐতিহাসিকদের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে বলে মনে হয়। তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন
আছে। এরিস্টটলের প্রিয় ছাত্রটি বিজয়াভিযানে বেরিয়েছিলেন শুধু যুদ্ধে জেতার জন্য নয়
বিজিত দেশগুলির প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানগুলির দিকে তার চোখ খোলা ছিল। আমরা জানি
বৃক্ষ বৈচিত্র ও তার উপযোগিতা নিয়ে জ্ঞানার্জন ছিল তার বিজয়যাত্রার অনুপান স্বরূপ।
রাখোটিস অঞ্চল দিয়ে চলার পথে তার নজরে পড়েছিল এখানে যা যা উৎপন্ন হয় তার মধ্যে রয়েছে
পর্যাপ্ত প্যাপিরাস। Valuable cash crop of papyrus that was used as writing
material। মিশরে প্যাপিরাসের ব্যবহার শুধু লেখার উপাদান হিসাবে নয় মাছধরার নৌকো, মাদুর,
দড়ি, জুতো, পাত্র নির্মাণে ব্যবহৃত হত। হাজার হাজার বছর ধরে প্যাপিরাসের ব্যবহারে মিশরীয়রা
সুদক্ষ ছিল। গ্রিক লেখক ও আলেকজান্ডার শিষ্য থিওফ্রাসটাস বলেছেন দুটি শব্দের কথা
Papyros এবং Biblos। খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হলে বলত Papyros আর নন-ফুড প্রোডাক্ট হিসাবে
ব্যবহার করলে Biblos — যা থেকে Bible, Bibliophile শব্দ এসেছে ইংরেজিতে। Papyros থেকে
এসেছে paper। মিশরীয়রা প্যাপিরাস গাছের ছালে লিখত Book of Dead। পিরামিডে
মমির পাশে রাখা থাকত সেই পেপার স্ক্রল। সংরক্ষণ কৌশল ছিল তাদের আয়ত্তে। সে সব স্ক্রলের
আয়ু ছিল অবিশ্বাস্য রকমের দীর্ঘ।
থিওফ্রাসটাস |
লিখনের উপযুক্ত করে গাছটি ব্যবহার উপযোগী করার নানা প্রক্রিয়া ছিল। কাটা, ছোলা, শুকানো, পালিশ করা, ভারি জিনিস দিয়ে পিষ্ট করে মসৃণ করা তারপর একটার সঙ্গে আর একটা আঠা দিয়ে জোড়া ‘glued together to create a longer roll’। এর জন্য যে ধরনের শুষ্ক ও উচ্চ তাপমাত্রাযুক্ত আবহাওয়া দরকার তা মিশরে ছিল। ‘In a dry climate, like that of Egypt, papyrus is stable, format as it is of highly rot-resistant cellulose’। ইউরোপীয় আবহাওয়ায় যার আয়ু কয়েক দশক মাত্র, ২০০ বছর টিকলে বুঝতে হবে প্রত্যাশাতিরিক্ত। সেখানে মিশরে ‘papyri is still being found in Egypt’। হাজার হাজার বছর ধরে পিরামিডের মধ্যে রয়ে গেছে প্যাপিরাস স্ক্রল। বুক অফ ডেড-এ মৃত্যুর বন্দনায় যে উপাদান ব্যবহার করতেন মিশরীয়রা, তাকে বুক অফ লাইফ-এ ব্যবহার করার একটি ঐতিহাসিক গ্রিক প্রকল্প হচ্ছে আলেকজান্দ্রিয়া নগরী স্থাপন ও আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি স্থাপন। গ্রিক দার্শনিক ও পণ্ডিতদের রচিত শতশত গ্রন্থ নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে, বিনষ্ট হয়ে গেছে যে যে কারণে তার মধ্যে একটি নিশ্চয়ই লিখন উপাদানের অস্থায়িত্ব। জ্ঞানকে স্থায়িত্ব দেবার জন্য দরকার ছিল স্থায়িত্বযুক্ত লিখন উপাদান ও উপযুক্ত আবহাওয়া। বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে জ্ঞানকে সংরক্ষণ করার জন্য এমন কাণ্ডজ্ঞানযুক্ত ঘটনা খুব বেশি ঘটে নি। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে গ্রিকরা তাদের জ্ঞান সম্পদ হারিয়ে ফেলার বেদনা অপনোদন করতে চেয়েছিল, খুঁজে খুঁজে বিনষ্ট জ্ঞান সম্পদকে পুনর্জীবিত ও স্থায়িত্ব দান করতে চেয়েছিল। এমন মহাপ্রয়াস খুব কম নেওয়া হয়েছে। প্যাপিরাসের গর্ভগৃহে গিয়ে পেপারের পিরামিড বানিয়েছিলেন তারা। মানবিক বিনাশ অন্য পথে এসে মুছে নিয়ে গেছে সেই অক্ষয়কীর্তি। কিন্তু প্রয়াসের মহত্ব তাতে কমে না।
প্যাপিরাস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
কান্ড ।। ছবি - আন্তর্জাল |
কান্ড কেটে ফেলা হয়েছে |
।। ছবি - আন্তর্জাল |
তৈরি হচ্ছে ।। ছবি - আন্তর্জাল |
।। ছবি - আন্তর্জাল |
এভাবেই ঘষে লেখার উপযোগী করে তোলা হয় ।। ছবি - আন্তর্জাল |
স্ক্রল ।। ছবি - আন্তর্জাল |
লেখার জন্য তৈরি স্ক্রল ।। ছবি - আন্তর্জাল |
প্যাপিরাসের ওপর লেখা ।। ছবি - আন্তর্জাল |
গ্রন্থাগারের প্রশাসক
প্রথমে আসা যাক
তাদের কথায় যারা টলেমি রাজবংশের অকৃপণ পৃষ্ঠপোষকতায় এই গ্রন্থাগারের আভ্যন্তর নির্মাণে
অনুপ্রেরণাদায়ী নির্দেশক ও প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এঁরা হলেন —
ডেমেট্রিয়াস অব
ফালেরাম (Demitrius of Phalerum)
জেনোডোটাস অব এফেসাস (Zenodotus of Ephesus)
ক্যালিমাচ্চ্যাস (Callimacus)
এরাটোস্থেনেস (Eratusthenes)
অ্যাপোলোনিয়স অব রোডস্ (Apollonius of Rodes)
এরিস্টোফেনিস অব বাইজেনটিয়াম (Aristophanes of Byzentium)
এরিস্টারকাস অব সামোথ্রেস (Aristarcus of Samothrace)
ডেমেট্রিয়াস অব ফালেরাম (৩৪০খ্রি.পূ. – ২৮০ খ্রি.পূ.)
প্রাচীন আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার কবেই বিলুপ্ত হয়েছে। ২০০২ সালের ১৬ অক্টোবর আধুনিক মিশরের জাতীয় গ্রন্থাগার হিসাবে স্থাপিত ‘বিবলিওথিকা আলেকজান্দ্রিয়ানা’র প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে একটি শ্বেতশুভ্র পূর্ণাবয়ব মূর্তি। মূর্তিটি ডেমেট্রিয়াসের। কে এই ডেমেট্রিয়াস?
দক্ষিণ গ্রিসের ফালেরামে জন্ম। এরিস্টটলের অন্যতম প্রধান শিষ্য থিওফ্রাসটাসের পেরিপেটেটিক স্কুলের ছাত্র। এরিস্টটল নিজ স্কুল ‘লাইসিয়াম’ ও নিজের গ্রন্থাগার থিওফ্রাসটাসকে দিয়ে গিয়েছিলেন। তার সাক্ষাৎ ছাত্র ডেমিট্রিয়াস শিক্ষান্তে ম্যাসিডোনিয়ার শাসক কাসান্ডারের অধীনে বছর দশেক প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। তার জন্য এথেনীয়দের কাছে বিশিষ্টের সম্মানও পেয়েছিলেন, সুবক্তা ছিলেন, আইনী বিষয়ে প্রভূত সংস্কার করেন। পরে পরিস্থিতির বদল হলে এথেন্স ছেড়ে যান থিবস। থিবস থেকে ২৯৭ খ্রি.পূ. নাগাদ টলেমি ১ম সোতারের আলেকজান্দ্রিয়ায়। এতটাই অন্তরঙ্গতার সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল যে টলেমি ১ম ডিমেট্রিয়াসকে ‘First of his friends’ বলে ডাকতেন।
ডেমেট্রিয়াস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
ডেমেট্রিয়াস ছিলেন শেষ খ্যাতনামা ‘Attic
orator’, কেউ কেউ তাকে ডেমস্থিনিসের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তার বলার ধরন ছিল কোমল কিন্তু রাজসিক ও ওজস্বি। স্ট্রাবোও বলেছেন, ডিমেট্রিয়াস MOUSEION (আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি) নির্মাণের অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। এরিস্টটলের পেরিপেটিয়াটিক স্কুলের মডেল অনুসারে অনুসারে MOUSEION এ ছিল চলাচলের আচ্ছাদিত পথ। শুধু বসে নয় আলোচনা ও বক্তৃতাদানের কাজ চলতে চলতে হত। সে ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আধুনিক আলেকজান্দ্রিয়া ভোলে নি ডিমোট্রিয়াসকে, তার প্রমাণ তার মূর্তি স্থাপন।
জেনোডোটাস অব এফেসাস (৩৩০ খ্রি.পূ. – ২৬০ খ্রি.পূ.)
জন্ম এফেসাসে। কস দ্বীপের ফিলেটাসের ছাত্র। গ্রিক ব্যাকরণবিদ, সাহিত্য সমালোচক ও হোমার বিশেষজ্ঞ। ১ম ও ২য় টলেমির পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। জেনোডোটাসই প্রথম সুপারিন্টেডেন্ট অব লাইব্রেরি। বিষয়বস্তু অনুসারে আলাদা আলাদা কক্ষে গ্রন্থ রাখা ও লেখকের নামের বর্ণক্রম অনুসারে তালিকা প্রণয়ন করেন তিনি, স্ক্রলের শেষে একটি করে ছোট ট্যাগ লাগানোর ব্যবস্থা করেন যাতে গ্রন্থকার, গ্রন্থনাম ও গ্রন্থের বিষয়বস্তু বিষয়ে তথ্য দেওয়া থাকত। এটিকে বলা হয়েছে গ্রন্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে ‘first recorded use of metadata, a land mark in
library history.’ ২৮০ খ্রি. পূ.-তে ইনি গ্রন্থাগারে কর্মরত ছিলেন।
জেনোডোটাস |
ক্যালিমাচাস (৩১০/৩০৫ খ্রি.পূ.
– ২৪০ খ্রি.পূ.)
জন্ম লিবিয়ার সাইরেনে। কবি, সমালোচক ও পণ্ডিত। টলেমি ২য় ও টলেমি ৩য়-র পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেছিলেন। প্রধান গ্রন্থাগারিক না হয়েও গ্রন্থপঞ্জী রচনায় বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দেন। ১২০ খন্ডে রচিত বা সম্পাদিত তার ‘Pinakes’ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বইগুলিকে তিনি গদ্য, গীতিকাব্য, ইতিহাস, ঔষধবিদ্যা, অঙ্ক, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং বিবিধ এইরকম ভাগে ভাগ করেন। প্রতিটি বিভাগ বর্ণানুক্রমিক গ্রন্থলেখক অনুসারে সাজান। বড় বই অপেক্ষা ছোটো বই-এর পক্ষপাতী ছিলেন। বলতেন, ‘A big book is a big misfortune’, ডেমোস্থিনিসের বক্তৃতারাজি সুসম্পাদিত আকারে প্রকাশ করেছিলেন।
ক্যালিমাচাস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
ক্যালিমাচাসের প্যাপিরাস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
এরাটোস্থেনেস অব সাইরেনে (২৭৬ খ্রি.পূ. – ১৯৫/১৯৪ খ্রি.পূ.)
সাইরেনের জাতক। জ্যোতির্বিদ ও ভূবিদ্যা বিশেষজ্ঞ। তিনিই প্রথম পৃথিবীর বৃত্ত-দৈর্ঘ্য কষে বের করেছিলেন। তাকে বলা হয় ‘Father of Geography’। নানা বিষয়ে তার জ্ঞানের খ্যাতিতে আকৃষ্ট হয়ে টলেমি ৩য় ইউরগেটেস তাকে ২৪৫ খ্রি.পূ. আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির লাইব্রেরিয়ান পদে যোগ দিতে আহ্বান জানান। নানা বিষয়ে পারদর্শিতার জন্য তার নাম হয়েছিল Pentathlos। টলেমির সন্তানদের শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে প্রধান গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আজীবন তিনি আলেকজান্দ্রিয়াতেই কাটিয়েছিলেন। তার আমলেই লাইব্রেরির গ্রন্থসংখ্যা বিপুলভাবে বৃদ্ধি পায়। বন্দরে জাহাজ এলে তল্লাস করে প্রাপ্ত বই কপি করানো ও মূল বই রেখে কপিটি মালিককে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা তার দেওয়া।
এরাটোস্থেনেস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
অ্যাপোলোনিয়স অব রোডস্ (৩য় খ্রি.পূ. প্রথমার্ধ)
কবি গ্রন্থাগারিক ও পণ্ডিত। রোডসে জন্ম ও মৃত্যু বলে জানিয়েছেন কেউ কেউ তবে মৃত্যু নিয়ে অন্য বক্তব্যও আছে। হোমারের অনুকরণে Argonautica নামে ভূগোল ভিত্তিক কল্প মহাকাব্য লিখেছিলেন। কবিত্ব ও পাণ্ডিত্যের মিশ্রন তার কাব্যে দেখা যায়।
এরাটোস্থেনেসের পর তিনি গ্রন্থাগারের দায়িত্বে এসেছিলেন। শোনা যায় ক্যালিম্যাচাসের সঙ্গে তার চরমতম মতান্তর হয়েছিল ফলে আলেকজান্দ্রিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়। তার কাব্য Argonautica তেমন সমাদর পায়নি পরে সেটি যখন রোডসে গিয়ে নতুন করে লেখেন (in such fine style) তখন সমাদরের সঙ্গে আলেকজান্দ্রিয়ায় তাকে ফিরিয়ে আনা হয়। গ্রন্থাগারিকের পদে অধিষ্ঠিত হন এবং মৃত্যুর পর তাকে ক্যালিম্যাচাসের পাশেই সমাধিস্থ করা হয়েছিল।অ্যাপোলোনিয়স অব রোডস্ ।। ছবি - আন্তর্জাল |
জন্ম বাইজানটিয়ামে। হেলেনিস্টিক যুগের (আলেকজান্ডারের মৃত্যু খ্রি.পূ. ৩২৩ – একটিয়ামের যুদ্ধ খ্রি.পূ. ৩১) পণ্ডিত, সমালোচক ও ব্যাকরণবিদরা আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে সমবেত হয়েছিলেন। জেনোডোটাস, কালিম্যাচাস, এরটোস্থেনেসের মতো এরিস্টোফেনিসও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে, তাদের শিষ্যত্ব স্বীকার করে আলেকজান্দ্রিয়ায় আসেন। এরাটোস্থেনেসের পর তিনি প্রধান গ্রন্থাগারিক হন। ধ্রুপদী গ্রিকের জায়গায় লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা হিসাবে শ্বাসাঘাত নির্ভর Koine আখ্যাত গ্রিক ভাষা রূপের কর্ষণ ও ব্যবহার বাড়তে থাকে। এরিস্টোফেনিস আবিষ্কার করেন ‘first form of punctuation’, ‘single dots’, আধুনিক কালের ‘comma’, ‘colon or semicolon’, ‘long pauses’ তিনিই উদ্ভাবন করেন প্রথম। অভিধান প্রণেতা ও শব্দার্থ সংগ্রাহক হিসাবে সেকেলে ও অপ্রচলিত শব্দ সংকলন করেছিলেন।
এরিস্টোফেনেসের প্যাপিরাস |
এরিসটারকাস অব সামোথ্রেস (২২০ খ্রি.পূ. – ১৪৩ খ্রি.পূ.)
জন্ম সামোথ্রেস দ্বীপে। ব্যাকরণবিদ ও হোমার বিশেষজ্ঞ। এরিস্টোফেনিসের পরে তিনি লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। অল্প বয়সেই সামোথ্রেস ছেড়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় আসেন। সেখানে গ্রন্থাগারিকদের কাছে শিক্ষানবিশী করতে করতে রাজপরিবারের শিক্ষক ও গ্রন্থাগারের পরিচালক হন। ১৫৩ খ্রি.পু. থেকে ১৪৫ খ্রি.পূ. সময়কালে তিনি এই দায়িত্বে ছিলেন। টলেমি দ্য বেনিফেক্টর কর্তৃক অভিযুক্ত হয়ে সাইপ্রাস চলে যান। হোমারিক কাব্যের ‘most historically critical edition’ তার করা। এখানে তিনি প্রয়োগ করেছেন তার শিক্ষক এরিস্টোফেনিস নির্ণীত স্বরাঘাত পদ্ধতি। হোমারের ইলিয়ড অডিসির বিশুদ্ধ পাঠ নির্ণয়ে বাদ দিয়েছেন সন্দেহজনক ছত্রগুলি।
এরিসটারকাস |
গ্রন্থাগারের বিদ্বান পড়ুয়া
আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারে আসতেন অঙ্কবিদ, জ্যোতির্বিদ, জ্যামিতিবিদ, শল্য চিকিৎসক, অস্থিবিদ, ভাষাবিদ, কবি, ঐতিহাসিক, বৈয়াকরণ, ভূগোল বিশেষজ্ঞ, সাহিত্য সমালোচক, দর্শনবেত্তা, সংগ্রাহক, সংকলক, সম্পাদক, ভাষ্যকার, নানা বিষয়ের পারঙ্গম পণ্ডিত ও গবেষকরা। সেরকম কয়েকজনের হদিশ পাওয়া গেছে। কারা তারা?
শিল্পীর চোখে পড়ুয়া বা লিপিকাররা ।। ছবি - আন্তর্জাল |
আর্কিমিডিস অব সিরাকুজ (Archimedes of Syracuse; ২৮৭ খ্রি.পূ. – ২১২ খ্রি.পূ.)
বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক দার্শনিক, প্রযুক্তিবিদ ও জ্যোতির্বিদ আর্কিমিডিসের জন্ম ও মৃত্যু বৃহত্তর গ্রিস নামে পরিচিত সিসিলির সিরাকুজে। তরুণ বয়সে তিনি বিদ্যাচর্চা ও গবেষণার জন্য আলেকজান্দ্রিয়ায় কাটিয়েছিলেন। তার দুই আলেকজান্দ্রিয়ান বন্ধুর কথা তার গবেষণাপুস্তক ও চিঠিপত্রে আছে। একজন হলেন গ্রিক জ্যোর্তিবিজ্ঞানী ও অঙ্কবিদ কনোন অব সামোস ও এরাটোস্থিনিস অব সাইরেনে। আর্কিমিডিস তার ‘The Method fo Mechanical Teheorem’ ও ‘Cattle Problem’ দুটি গ্রন্থে কনোন ও এরাটোসস্থিনিসের কথা উল্লেখ করেছেন। কনোন অব সামোস আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের পৃষ্ঠপোষক টলেমি ৩য় ইউরগেটিসের রাজ জ্যোর্তিবিদের পদে অভিষিক্ত ছিলেন। আর এরাটোস্থিনিস ছিলেন বহুবিষয়বিদ পন্ডিত ও আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের প্রধান গ্রন্থাগারিক। অনুমান করতে অসুবিধে নেই আর্কিমিডিস এই গ্রন্থাগারে নিয়মিত যেতেন তার গবেষণার খোরাক সংগ্রহার্থে।
আর্কিমিডিস, শিল্পীর চোখে ।। ছবি - আন্তর্জাল |
ইউক্লিড অব আলেকজান্দ্রিয়া (Euclede of Alexandria, খ্রিস্টপূর্ব মধ্য চতুর্থ শতক)
জ্যামিতিবিদ্যার জনক ইউক্লিড, টলেমি ১ম (খ্রি.পূ.৩০০ – খ্রি.পূ. ২৮৩) এর রাজত্বকালে সক্রিয় ছিলেন। অঙ্কশাস্ত্রের ইতিহাসে তার Elements অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাগ্রন্থ। আলেকজান্ডারের আলেকজান্দ্রিয়া নগরী প্রতিষ্ঠার দশ বছর বাদে তিনি এখানে আসেন বলে কথিত আছে। টলেমি ১ম তাকে জিগ্যেস করেছিলেন জ্যামিতি শেখার সহজ পথ কী? তদুত্তরে ইউক্লিড বলেন, ‘There is no royal road to Geometry.’ জ্যামিতি ও অঙ্কের ইতিহাসে ইউক্লিড একটি চিরস্মরণীয় নাম। তিনি তার প্রতিভাকে শানিত করেছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারে বসে।
ইউক্লিড, শিল্পীর চোখে ।। ছবি - আন্তর্জাল |
অ্যাপলোদোরাস অব এথেন্স (Appolodorus of Athens, ১৮০ খ্রি.পূ. – ১২০ খ্রি.পূ. পরবর্তী সাল)
।। ছবি - আন্তর্জাল |
মানেথো (Manetho; খ্রি.পূ. ৩য় শতক)
মিশরীয় পুরোহিত। টলেমি রাজত্বে আলেকজান্দ্রিয়ায় ছিলেন। পুরোহিত ও জ্ঞানী প্রায় সমার্থক শব্দ। Mouseion এর মুখ্য দায়িত্বে যিনি থাকতেন তাকে পুরোহিতই বলা হত। জ্ঞানদেবীর পূজক। টলেমি ১ম, টলেমি ২য়, টলেমি ৩য়-র সময় মানেথো বিদ্যমান ছিলেন। মানেথো ছিলেন সেরাপিস মন্দিরে যা একইসঙ্গে মন্দির ও গ্রন্থাগার। টলেমি ২য়-র উৎসাহে তিনি লেখেন মিশরের ইতিহাস ‘History of Egypt’. প্রাচীন ফারাওদের রাজত্বপঞ্জী হিসাবে খুবই মূল্যবান রচনা।
মানেথো ।। ছবি - আন্তর্জাল |
মানেথো ছিলেন মিশরীয়। মিশরীয় বিষয় নিয়ে লিখেছেন গ্রিক ভাষায়। ‘dynasty’ শব্দটিকে তিনি ব্যবহার করেন ‘a group of kings with a common origin’ বোঝাতে। মনে করা হয় হেরোডোটাসের ‘History’এর পাল্টা একটা মিশরীয় (national) ইতিহাস তিনি উপহার দিয়েছেন।
পলিবাস (Polybus; ২০৮ খ্রি.পূ. – ১২৫ খ্রি.পূ.)
আর্কেডিয়ায় জন্ম। ইতিহাস লেখক। তিনি গ্রিক ঐতিহাসিক কিন্তু লিখেছেন হেলেনিস্টিক পর্বের রোমান রিপাবলিকের ইতিহাস। তার গ্রন্থের নাম ‘The Histories’, ২২০ খ্রি.পূ. থেকে ১৪৬ খ্রি.পূ. সময়কালে রোমান রিপাবলিকের উত্থান-পতন নিয়ে যুদ্ধ ও রাজনীতির প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সঙ্গে ভ্রমণ ও প্রভূত অধ্যয়নের অর্জন মিশিয়ে লেখা। গ্রিক ও রোমান ঐতিহাসিকদের রচনা চোখের সামনে রেখে তিনি রচনা করেছেন হিস্তোরিস। আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ভূগোলবিদ এরাটোস্থেনিসের গ্রন্থ ব্যবহার করেছেন সমালোচকের দৃষ্টি নিয়ে। স্ট্রাবো তার গ্রন্থ থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। সিসেরো তার রাজনৈতিক বিশ্লেষণের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।
।। ছবি - আন্তর্জাল |
লাইকোফ্রন (Lycophron; ৩য় খ্রি.পূ. সময়ের মানুষ)
জন্মেছিলেন গ্রিসের ইউবোইয়া দ্বীপের চ্যালসিস-এ কিন্তু আলেকজান্দ্রিয়ায় এসে বিচ্ছুরিত করেন তার প্রতিভার দীপ্তি।
Suda-র বিবরণ অনুসারে টলেমি ২য় ফিলাডেফাসের (খ্রি.পূ.২৮৫ – খ্রি.পূ. ২৪৭) আমলে লাইকোফ্রন আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগারকে কেন্দ্র করে অনেক রকমের লিখন কর্মে আত্মনিয়োগ করেন। তার প্রধান পরিচয় কবি। ব্যাকরণ চর্চাও করেছেন, কমেডির ভাষ্যকার। তাকে বলা হয়েছে ‘Hellenistic tragic poet’ টলেমি তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন কমেডির ওপর কাজ করার জন্য। প্রচুর পরিশ্রম করে তিনি এই কাজ সম্পন্ন করেন। আলেকজান্দ্রিয়ান ট্রাজেডি নামে পরিচিত অন্তত কুড়িটি ট্রাজেডি লিখেছিলেন। ‘anagram’ আখ্যাত বর্ণবিন্যাসের খেলায় তিনি ছিলেন ওস্তাদ। যেমন Listen শব্দের অক্ষর বিন্যাস বদল করে Silent শব্দ তৈরি। লাইকোফ্রনের খ্যাতি যে রচনার জন্য সেটি হচ্ছে The Alexandra, আয়াম্বিক তেত্রামিটার ছন্দে লেখা এই কাব্যের শুরু ট্রয় – গ্রিক ও ট্রোজানের পৌরাণিক গল্প দিয়ে, শেষ আলেকজান্ডারের ইতিবৃত্তে এসে। কবিত্ব কল্পনার সঙ্গে বৈদগ্ধ্যের মিশ্রন এখানে এমনই পর্যায়ে পৌছেছে যে ‘nobody can read without a proper commentary’. এমন সব অপরিচিত নাম, অজ্ঞাত মিথ এবং অব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করেছেন যে রচনাটি হয়ে উঠেছিল ‘difficult reading’ অনেকে অবশ্য মনে করেন তার নামে চললেও এটি ছদ্মনামা রচনা
(pseudopigraphon)।
।। ছবি - আন্তর্জাল |
থিওক্রিটাস অব সিরাকুজ (Theocretus of Syracus; খ্রি.পূ. ৩য় শতক, মৃত্যু খ্রি.পূ. ২৬০/২৭০)
কবি। সিরাকুজে জন্ম। সিসিলি, কস দ্বীপ হয়ে আলেকজান্দ্রিয়ায় এসেছিলেন। টলেমি ২য়-র পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন। রাখালিয়া গীতি, প্রাত্যহিক দিনপঞ্জী, স্তুতিমূলক কাব্য, গীতি কবিতা, বুদ্ধিবিভাবিত কবিতা (এপিগ্রাম) – সবরকম রচনায় তার খ্যাতি হয়েছিল। এর মধ্যে স্তুতিমূলক মহাকাব্যের একটি অংশে (১৭) তিনি তার পৃষ্ঠপোষক টলেমি ফিলাডেলফাস-এর মহিমাগাথা রচনা করেছেন। Boucolic poems বা রাখালিয়া গীতির জন্য তার খ্যাতি ছিল বেশি। বলা হয় ছড়িয়ে থাকা গ্রাম্য গীতিকে তিনি গুছিয়ে এনেছিলেন (in one pen, in one flock)।
থিওক্রিটাস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
হেরোফিলাস (Herophilus of
Chalcedon; খ্রি.পূ. ৩৩৫ – খ্রি.পূ.২৮০)
এশিয়া মাইনরের গ্রিক উপনিবেশ চেলসিডনে জন্ম। কস দ্বীপে হিপোক্রিটাস মেডিকেল স্কুলে প্রাক্সাগোরাসের কাছে চিকিৎসাবিদ্যা শিখে আসেন আলেকজান্দ্রিয়ায়। সেখানেই কাটান জীবনের বেশিরভাগ সময়। এরাসিস্ট্রাটাসের সহকারিত্ব নিয়ে তিনিই প্রথম ‘human
cadaveric dissection’ করেন। সেইসময় প্রায় সর্বত্র শব ব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ছিল। আলেকজান্দ্রিয়ায় নিষিদ্ধ ছিল না। টেরটুলিয়ান লিখেছেন, ‘He
vivisected at least 600 live prisoners’। এরপর প্রায় ১৬০০ বছর শবব্যবচ্ছেদ বন্ধ ছিল। ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে রেনেসাঁসের আমলে তা আবার শুরু হয়। রোমান ল’তে এর অনুমোদন ছিল না। টলেমি রাজত্বে বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মুক্তাঞ্চল হওয়ায় হেরোফিলাস সেখানেই ঘাঁটি গাড়েন। অঙ্গসংস্থানবিদ্যা ও দেহগঠন বিদ্যায় হেরোফিলাসের অবদান এমনই যে হিপোক্রিটসকে যেমন বলা হয় ‘father of medicine’ তেমনি হেরোফিলাসকে বলা হয় ‘Father of
Anatomy’। অস্থিবিদ্যা ও ধমনী দিয়ে হৃদযন্ত্র পর্যন্ত রক্ত চলাচল নিয়ে তিনি অসাধারণ কাজ করেছিলেন। তার রচিত ন’টি গ্রন্থের কোনোটিই বেঁচে নেই। কিন্তু নানাজনের উদ্ধৃতিতে ও অঙ্গসংস্থানবিদ্যার চর্চায় তিনি বেঁচে আছেন। তার একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করি, “স্বাস্থ্য যদি না থাকে, জ্ঞান তাকে রক্ষা করতে পারে না, শিল্প বিকশিত হতে পারে না, শক্তি প্রয়োগ করা যায় না, টাকা কোনো কাজ দেয় না, যুক্তি হতবল হয়ে পড়ে।”
হেরোফিলাস আর এরাসিস্ট্রাটাস ।। ছবি - আন্তর্জাল |
এরাসিস্ট্রাটাস (Erasistratus; খ্রি.পূ. ৩০৪ – খ্রি.পূ. ২৫০)
গ্রিক অস্থিবিদ। হেরোফিলাসের সঙ্গী চিকিৎসক। জন্ম ইজিয়ান সমুদ্রের কিয়া দ্বীপে। প্রথম দিকে সিরিয়ার অধিপতি সেলুকাস ১ম নিকাটর-এর রাজবৈদ্য হয়েছিলেন। সে সময় যুবরাজ আন্তিওকাসের রোগ নির্ণয়ে অসাধারণ দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তার রোগ দৈহিক ছিল না, ছিল নিরুদ্ধ প্রণয়জনিত। তরুণী বিমাতাকে ভালোবেসে ছিলেন। কিন্তু বলতে পারেন নি। তাকে দেখলেই নাড়ির গতি বেড়ে যাচ্ছিল, দেহের তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছিল। এর থেকে নির্ণয় করেন তার অসুস্থতার আসল কারণ। আলেকজান্দ্রিয়ায় এসে মেলেন হেরোফিলাসের সঙ্গে। ক্রিসিপাস ও থিওফ্রাস্টাসের ছাত্র ছিলেন। শিরা ও ধমনীর পার্থক্য নির্ণয়ে তার ভূমিকা ইতিহাসস্বীকৃত। তিনিই প্রথম বলেন, হৃদযন্ত্র সংবেদনশীলতা ও স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রে নেই, ‘it functioned as a pump’ ব্রেন থেকে স্নায়ুতন্ত্রের কাজ চলে। সেরিব্রাম ও সেরিবেলামের তফাত আছে। স্বাভাবিক পথ্য এবং শরীরচর্চার মধ্যেই নীরোগ থাকার রহস্য নিহিত বলে নিদান দিতেন। তবে ক্যাথেটার এর সাহায্যে শল্যচিকিৎসিত শরীরের আপৎ সমস্যা মেটানো যায় এটা তার মৌলিক অবদান। শেষ জীবনে তুরস্কের তৎকালিন গ্রিক উপনিবেশ স্মিরনায় (Smyrna) একটি মেডিকেল স্কুল খোলেন। সেখান থেকে বহু নামকরা চিকিৎসক বের হয়ে এসেছিলেন।
এরাসিস্ট্রাটাস |
ব্যাকাচ্চিয়াস অব তানাগ্রা (Bacchius of Tanagra; খ্রি.পূ. ৩য় শতক)
সেন্ট্রাল গ্রিসের জাতক। তিনি ‘ফাদার অব মেডিসিন’ আখ্যাত হিপোক্রিটসের চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ক বিখ্যাত ‘হিপোক্রিটিক করপাস’ গ্রন্থের প্রথম দিকের সুখ্যাত ভাষ্যকার। আলেকজান্দ্রিয়ায় অস্থিবিদ হেরোফিলাসের অনুগামী হিসাবে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চর্চা শুধু রোগ ও রোগীর চিকিৎসা ও সে বিষয়ে পাঠদানেই নিবদ্ধ ছিল না, গ্রন্থ রচনার দিকেও তা প্রসারিত হয়েছিল। তবে ব্যাকাচ্চিয়াসের গ্রন্থটি বিলুপ্ত হয়েছে। কিন্তু তার প্রভূত উল্লেখ ও উদ্ধৃতি মেলে গ্যালেন বা এরোসিয়ানাসের মতো চিকিৎসাবিষয়ক গ্রন্থের উত্তরকালের লেখকদের বইতে।
ডায়োনিসাস থ্রাক্স (Dionysius Thrax; খ্রি.পূ. ১৭০ –খ্রি.পূ. ৯০)
হেলেনিস্টিক ব্যাকরণবিদ। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সুপণ্ডিত গ্রন্থাগারিক এরিস্ট্রাকাসের ছাত্র। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করে হোমারীয় সাহিত্য চর্চা অন্যমাত্রা পেয়েছিল। ডায়োনিসাসের প্রথম পরিচয় তিনি হোমারবিদ। গ্রিক ভাষায় ব্যাকরণ গ্রন্থের রূপকার। তার বই প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে স্বীকৃত ব্যাকরণের মর্যাদা পেয়েছিল। পাশ্চাত্য ব্যাকরণের ভিত্তিগত আদর্শ তারই রচনা বলে মনে করা হয়।
।। ছবি - আন্তর্জাল |
টলেমি ৮ম এর সময় যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল তার জন্য তিনি আলেকজান্দ্রিয়া ত্যাগ করেন। তার রোডস্থ ছাত্ররা তার শিক্ষাদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের জন্য ইলিয়ডে নেস্টরের অনুকরণে একটি রৌপ্য কাপ উপহার দিয়েছিল। ‘Tekhne
Grammaratika’ বা ‘গ্রিক আর্ট অব গ্রামার’, গ্রন্থের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
সমকালীনদের সাক্ষ্য
যে সময় লাইব্রেরি অব আলেকজান্দ্রিয়া অগ্নিদগ্ধ হয় খ্রি.পূ. ৪৮, সে সময় যেসব খ্যাতনামা লেখকরা ছিলেন তাদের মধ্যে তিন চার জনকার নাম করতে হয়।
১. দিদিমাস চ্যালসেন্টেরাস (Didymus
Chalcenterus; খ্রি.পূ.
৬৩ – ১০ খ্রিস্টাব্দ)
২. সিসেরো (Cicero; খ্রি.পূ. ১০৬ – খ্রি.পূ. ৪৩)
৩. স্ট্রাবো (Strabo; খ্রি.পূ. ৬৪/৬৩ – ২৪